বরখাস্ত তিন কর্মীকে কাজে ফেরানোর আশ্বাসে মঙ্গলবার কর্মবিরতি উঠে গিয়েছে খড়্গপুরের রেল কারখানার ডিজেল শপে। এ বার ডিজেল শপের ডেপুটি চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (সিএমই)-র বদলির দাবি তুললেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি তথা বিধায়ক দিলীপ ঘোষ। বুধবার রেল কারখানায় গিয়ে ‘চিফ ওয়ার্কস ম্যানেজার’ (সিডব্ল্যুএম)-এর সঙ্গে দেখা করে বরখাস্ত তিন রেলকর্মীকে কাজে পুনর্বহাল ও কর্মবিরতিতে সামিল কর্মীদের বেতন না কাটার দাবি জানান দিলীপবাবু।
খড়্গপুরের বিধায়ক দিলীপবাবু বলেন, “আন্দোলনের জন্য তিন রেলকর্মীর চাকরি কেড়ে নেওয়া অগণতান্ত্রিক।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘সমস্ত কর্মীরা বলছেন, ডেপুটি সিএমই তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তাই আমরা তাঁর বদলি চাইছি। তিন রেলকর্মীকে দ্রুত কাজে পুনর্বহাল ও কর্মবিরতিতে সামিল কর্মীদের বেতন না কাটার দাবিও জানিয়েছি।’’ এ বিষয়ে কথা বলতে রেলের জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করবেন বলেও জানান বিজেপির রাজ্য সভাপতি।
কারখানার ক্যান্টিনের পরিষেবাজনিত নানা অভিযোগ নিয়ে আধিকারিককে ঘেরাও করেছিলেন রেল কারখানার ডিজেল শপের কর্মীরা। সেই আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন বাদল অধিকারী, কৌশিক সরকার ও সেলিম আখতার। রেল সুরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে হাতাহাতি হওয়ায় এই তিনকর্মী-সহ পাঁচজনের নামে মামলা রুজু হয়।
রেল কর্তৃপক্ষও কমিটি গড়ে তদন্তে নামেন। তারপরই তিনকর্মীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এরই প্রতিবাদে ডিজেল শপে কর্মবিরতি শুরু হয়। মেনস্ ইউনিয়ন, মজদুর সঙ্ঘ, মেনস্ তৃণমূল-সহ বিভিন্ন কর্মী সংগঠন জয়েন্ট ফোরাম গড়ে ওই তিন কর্মীকে কাজে পুনর্বহাল, নতুন করে কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া ও কর্মবিরতির জেরে না হওয়া কাজ বাড়তি সময়ে শেষ করার দাবি জানানো হয়।
রেলের আইন মেনে সেই সমস্ত দাবি বিবেচনা করা হবে বলে লিখিত ভাবে জানায় রেল কর্তৃপক্ষ। এতেই আশ্বস্ত হয়ে মঙ্গলবার দুপুর থেকে কর্মবিরতি তুলে নেওয়া হয় ডিজেল শপে। ডেপুটি সিএমই-র বদলির দাবি আগেই তুলেছিল কারখানার বামপন্থী মেনস্ ইউনিয়ন। দিলীপবাবুও একই দাবি তোলায় মেনস্ ইউনিয়নের অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক অজিত ঘোষাল বলছেন, ‘‘‘কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের জন্য এ কে ভারতীকে বদলির দাবি আমরা আগেই তুলেছিলাম। কিন্তু পরে যখন সর্বদলীয় ফোরাম গঠন করা হয়েছিল তখন সেই দাবি ছিল না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের তিন কর্মীকে কাজে পুনর্বহাল-সহ যে দাবি ছিল তা বিবেচনার আশ্বাস মেলায় আমরা নতুন করে একে ভারতীকে বদলির দাবি তুলছি না।”
বুধবার দিলীপবাবু রেল কারখানায় ঢোকার অনুমতি পাওয়ায় দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। তৃণমূলের অভিযোগ, গত শনিবার কারখানায় ঢোকার জন্য দলের শহর সভাপতি তথা পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার আবেদন জানিয়েছিলেন। যদিও অনুমতি না মেলায় ডিজেল শপের কর্মীদের সঙ্গে কারখানার বাইরেই বৈঠক করেন প্রদীপবাবু। দিলীপবাবুকে কারখানায় ঢোকার অনুমতি দিয়ে দ্বিচারিতা করা হচ্ছে।
এ নিয়ে তৃণমূলের খড়্গপুর শহর সভাপতি প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘আমার শহরে যাঁরা রেল কারখানায় কাজ করেন তাঁদের সঙ্গে দেখা করতেই পারি। তাই কারখানায় ঢোকার অনুমতি চেয়েছিলাম। কিন্তু রেল আধিকারিকেরা অনুমতি দেননি।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কী ভাবে দিলীপ ঘোষ রেল কারখানায় ঢোকার অনুমতি পেলেন জানিনা। রেল দ্বিচারিতা করছে।”
যদিও এ বিষয়ে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, “খড়্গপুরের পুরপ্রধান সিডব্ল্যুএমের সঙ্গে দেখা করতেই পারতেন। সেই অনুমতিও ছিল। তবে উনি রেল কারখানায় ঢুকে কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়েছিলেন। কোনও স্বীকৃত কর্মী সংগঠন ছাড়া কাউকে বৈঠকে অনুমতি কাউকে দেওয়া হয় না।” তিনি আরও বলছেন, ‘‘ডেপুটি সিএমই-কে বদলির জন্য দিলীপ ঘোষ দাবি করতেই পারেন। এতে আমাদের কিছু বলার নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy