Advertisement
০২ মে ২০২৪

সংস্কার হয়নি, শ্রী হারাচ্ছে হেরিটেজ জেলা পরিষদ ভবন

লাল বাড়িটার পাঁজরে লেখা বহু ইতিহাস। বিপ্লবীদের গুলিতে ব্রিটিশ সরকারের প্রশাসনিক আধিকারিকের মৃত্যুরও সাক্ষী থেকেছে শতাব্দী প্রাচীন এই বাড়ি। যদিও অনাদরে মেদিনীপুর শহরে জেলা পরিষদের কার্যালয়ের এই বাড়ির পরতে পরতে আজ বার্ধক্যের ছাপ।

অনাদরে: সংস্কার হয়নি প্রাচীন এই ভবনে। নিজস্ব চিত্র

অনাদরে: সংস্কার হয়নি প্রাচীন এই ভবনে। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৭ ০০:৪৫
Share: Save:

লাল বাড়িটার পাঁজরে লেখা বহু ইতিহাস। বিপ্লবীদের গুলিতে ব্রিটিশ সরকারের প্রশাসনিক আধিকারিকের মৃত্যুরও সাক্ষী থেকেছে শতাব্দী প্রাচীন এই বাড়ি। যদিও অনাদরে মেদিনীপুর শহরে জেলা পরিষদের কার্যালয়ের এই বাড়ির পরতে পরতে আজ বার্ধক্যের ছাপ। বিতর্কের আশঙ্কায় বাড়ির আমূল সংস্কার থেকে হাত গুটিয়ে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীরপুর জেল পরিষদও।

পরাধীন ভারতে এই বাড়িতেই ছিল মেদিনীপুর জেলা বোর্ডের কার্যালয়। ১৯৩২ সালের ৩০ এপ্রিল এখানেই উন্নয়ন-বৈঠক চলাকালীন বিপ্লবীদের গুলিতে নিহত হন মেদিনীপুরের তৎকালীন জেলাশাসক (কালেক্টর) আর কে ডগলাস। ১৮৯৯ সালে তৈরি ৮,৭১৯ বর্গফুটের ঐতিহ্যবাহী এই ভবনটি এখন জেলা পরিষদের মূল প্রশাসনিক কার্যালয়।

জেলা পরিষদের এক আধিকারিক মানছেন, শতবর্ষ প্রাচীন বিপ্লবী আন্দোলনের স্মারক ভবনটিকে ঢেলে সাজা প্রয়োজন। তাঁর কথায়, ইংরেজ আমলের লাল রঙের ভবনটির আমূল সংস্কার করতে গিয়ে যদি সমালোচনার মুখে পড়তে হয়! কার্যত এমন আশঙ্কায় জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ হাত গুটিয়ে রয়েছেন।

জেলা পরিষদ চত্বরের অন্য ভবনগুলির সংস্কার ও সৌন্দর্যায়নের কাজ হয়েছে। এখনও বেশ কিছু কাজ হচ্ছে। সম্প্রতি হেরিটেজ ভবনটির সামনের পিচ ও ঢালাই রাস্তার সংস্কারও করা হয়েছে। কিন্তু হেরিটেজ ভবনের আগাগোড়া সংস্কারের ব্যাপারে এখনও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। আগের বাম বোর্ডের আমলে শেষবারের মতো ভবনটি রং হয়েছিল। তবে বাম জমানায় ভবনের ঐতিহ্যবাহী সভাঘরটির দেওয়ালে গর্ত করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বসানোয় আপত্তি তুলেছিলেন পুরাতত্ত্ব গবেষকরা। আপত্তি ধোপে টেকেনি।

ভবনটির রং লাল থেকে বদলে নীল সাদা করার চিন্তাভাবনা হয়েছিল। তবে বিতর্কের আশঙ্কায় শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে যান জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। শতাব্দী প্রাচীন ভবনটির অবস্থা মোটেই ভাল নয় বলে মানছেন বাস্তুকাররা। জোরে বৃষ্টি হলে খোদ জেলা পরিষদের সভাধিপতির অফিস ঘরের সামনে ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। একই অবস্থা হয় গণনা বিভাগেও।

সভাধিপতি উত্তরা সিংহ ছাড়াও ঐতিহ্যবাহী এই ভবনেই বসেন জেলা পরিষদের দলনেতা অজিত মাইতি প্রমুখ। জেলা পরিষদের সাধারণ বিভাগ, বাস্তু বিভাগ, গণনা বিভাগের মতো কিছু বিভাগ এখানে রয়েছে।

মেদিনীপুরের বিশিষ্ট পুরাতত্ত্ব গবেষক চিন্ময় দাশ জানান, ১৯৩২ সালের ৩০ এপ্রিল বিকেলে তৎকালীন কালেক্টর আর কে ডগলাসকে উপর গুলির হামলা চালিয়েছিলেন বিপ্লবী প্রভাংশুশেখর পাল ও প্রদ্যোতকুমার ভট্টাচার্য। প্রভাংশু পালিয়ে গেলেও রিভলভার-সহ ধরা পড়ে যান প্রদ্যোতকুমার ভট্টাচার্য। বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়। সেই ঘটনার রিলিফ চিত্র সভাঘরের বাইরের বারান্দার দু’পাশে রয়েছে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধুলোয় সে সব আর দেখাই যায় না। চিন্ময়বাবু বলেন, “হেরিটেজ ভবনটির গঠনশৈলী অবিকৃত রেখে অবিলম্বে সংস্কার করা প্রয়োজন।”

জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি বলেন, “হেরিটেজ ভবনটি আমূল সংস্কার প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিকস্তরে ভাবনাচিন্তা হচ্ছে।” এ বিষয়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরাদেবীও বলেন, “ভবনটির বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়ে রাজ্যের হেরিটেজ কমিশন চিঠি পাঠানো হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

District Council building Heritage Reformation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE