আক্রান্ত: পারুলিয়া গ্রামে বাড়িতেই চলছে চিকিৎসা। —নিজস্ব চিত্র।
জ্বরের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ছে পূর্ব মেদিনীপুরে র একের পর এক এলাকায়। পাঁশকুড়া, পটাশপুর, ভগবানপুর, কোলাঘাটের পর এ বার আক্রান্ত কাঁথির দেশপ্রাণ ব্লকের ছ’টি গ্রাম। যদিও এই অবস্থাতেও হুঁশ ফেরেনি স্বাস্থ্য দফতরের। শতাধিক মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হলেও গ্রামে পৌঁছতে পারেননি স্বাস্থ্যকর্মীরা।
গত দশ দিন ধরে জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে দেশপ্রাণ ব্লকের পারুলিয়া, হিঞ্চি, কাজলা, শঙ্করপুর, বেলদা ও গামাডুলি গ্রামে। এর মধ্যেই রোগীর সংখ্যা একশো ছাড়িয়েছে। কাঁথির সহ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক চন্দ্রশেখর মাইতি শুক্রবার বলেন, “জ্বরের তথ্য পেয়েছি। জরুরি বৈঠক হচ্ছে আজই। শনিবার আক্রান্ত গ্রামগুলিতে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের মেডিক্যাল টিম যাবে।”
হিঞ্চি গ্রামের বাসিন্দা তিন মাসের সোহা পারভিনের জ্বর চলছে টানা ২৫ দিন। তার জেঠিমা ফতেমা জোহরা বিবি বলেন, “প্রথমে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি ছিল সোহা। সাত দিন জ্বর না-কমায় তাকে কলকাতার নীলরতন সরকার হাসপাতালে রেফার করা হয়। কিন্তু স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শে সোহা কাঁথি স্কুল বাজারের এক বেসরকারি নার্সিং হোমে ভর্তি রয়েছে।”
সোহার কাকু শেখ মোশারফের অভিযোগ, এই পরিস্থিতিতে মাত্র এক দিন এক জন আশা কর্মী এসেছিলেন। সরদা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মী মধুমিতা চন্দের ফোন বন্ধ। তাঁদের প্রতিবেশি শেখ রবসত আলি গত ১২ দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত। কাঁথিতে ডাক্তার দেখানোর পরে রক্তপরীক্ষা করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, পরীক্ষায় এইচওয়ানএনওয়ান পজিটিভ ধরা পড়েছে। অর্থাৎ ডেঙ্গির আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। এই একই চিত্র দেখা গিয়েছে বাকি গ্রামগুলিতে। কারও চার দিন, কারও ছ’দিন, কারও আবার দশ দিন ধরে জ্বর। জ্বরে আক্রান্ত সন্ধ্যারানি গিরির স্বামী শুভেন্দুবিকাশ গিরি বলেন, “বমি ভাব ও মাথা ঘোরা রয়েছে। জ্বর উঠে যাচ্ছে ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত। হাতে-পায়ে প্রবল যন্ত্রণা।”
পারুলিয়ার ‘শশাঙ্ক সেবা সদন’-এ চিকিৎসা করেন গ্রামীণ চিকিৎসক বরুণ পাল। তিনি জানান, “সবক’টি গ্রাম মিলিয়ে প্রায় ১৫০ জন আক্রান্ত বলে মনে হয়। গত পাঁচ দিন ধরে প্রায় রোজই নতুন করে ৭০ জনের মতো জ্বরের রোগী আসছেন।” তবে এত জ্বরের মধ্যেও হাসপাতালে যাওয়ার ব্যাপারে অনীহা রয়েছে গ্রামবাসীদের।
গ্রামের পরিবেশও অস্বাস্থ্যকর। শুক্রবার সকালের বৃষ্টির পর জল জমেছে চার দিকে। তার মধ্যেই বসেছে বাজার। ব্লিচিং বা ফিনাইলের চিহ্নমাত্র নেই কোথাও। পুকুরে ভর্তি কচুরিপানা। অসহায় স্থানীয়দের ক্ষোভ এখন স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়েই। তাঁদের অভিযোগ, বসন্তিয়াতে ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আধিকারিক পার্থপ্রতিম পাত্রের ফোন অধিকাংশ সময়েই বন্ধ থাকে। গ্রামবাসীদের দাবি, বসন্তিয়াতে ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আধিকারিক পার্থ প্রতিম পাত্রকে ফোনে পাওয়া যায় না। অধিকাংশ সময় তাঁর ফোন বন্ধ থাকে বলে অভিযোগ।
হিঞ্চির পঞ্চায়েত সদস্য আকবর আলি খান জানান, “জেলার বিভিন্ন এলাকায় জ্বরের পরও শিক্ষা নেয়নি স্বাস্থ্য দফতর।” এ দিকে স্থানীয় সূত্রে খবর, জ্বরের মধ্যেও কেউ মশারি ব্যবহার করছেন না।
তবে এত কিছুর পরেও জ্বর সম্পর্কে কোনও খবর নেই ব্লক প্রশাসনের কাছে। শুক্রবার বিকেলে কাঁথি দেশপ্রাণ বিডিও মনোজ মল্লিক জানালেন, “জ্বরের খবর জানি না। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনিও জ্বরের খবর নেই বলেই জানালেন।” তবুও খবর নিয়ে প্রয়োজনে গ্রামবাসীদের ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাহায্য করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy