Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

নাগাড়ে বৃষ্টিতে ভ্রূকুটি বন্যার, সতর্ক প্রশাসন

নাগাড়ে ভারী বৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনি ব্লকের দু’টি প্রান্তের ৮৬টি গ্রাম। চিল্কিগড়ের কাছে ডুলুং নদীর কংক্রিটের চাতালটি চলে গিয়েছে জলের তলায়। জলের প্রবল স্রোতে যানবাহন চলাচল ও হেঁটে যাতায়াত বন্ধ।

ডুলুং নদীর কজওয়ে ডুবে প্রবল বেগে বইছে জল। নিজস্ব চিত্র।

ডুলুং নদীর কজওয়ে ডুবে প্রবল বেগে বইছে জল। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৭ ০৭:৩০
Share: Save:

নাগাড়ে বৃষ্টিতে রাস্তা ঘাটে জল জমে দুর্ভোগ তো ছিলই। কিন্তু বৃষ্টি যে ভাবে বাড়ছে তাতে বন্যার আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করেছেন দুই মেদিনীপুরের বন্যাপ্রবণ এলাকার মানুষ।

টানা বৃষ্টিতে পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন নদীতে জলস্তর বাড়ায় সতর্কতা জারি হয়েছে জেলা জুড়ে। একই অবস্থা পশ্চিম মেদিনীপুরে। কয়েকটি জায়গায় নদীর কজওয়ের উপর দিয়ে জল বইছে। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ঘাটালে শিলাবতী, কংসাবতী, ঝুমি, রূপনারায়ণ সহ সবকটি নদীর জলই বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। শনিবার থেকেই ক্ষীরপাই-চন্দ্রকোনা সড়কে মনসাতলা চাতালে জল উঠে যাওয়ায় যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ। শ্রীনগর-পলশাচাবড়ি রুটেও জল উঠে যাওয়ায় রবিবার সকাল থেকে ওই সড়কেও যোগাযোগ বিপযর্স্ত। ফলে যাতায়াতের এখন একমাত্র মাধ্যম নৌকা। রবিবার সকালে ভরা জোয়ারের সময় দিঘায় গার্ডওযাল টপকে সমুদ্রের জল ঢুকে পড়ে সৈকত লাগোয়া রাস্তায়। দিঘার জলোচ্ছ্বাস দেখতে ভিড়ও করেছেন প্রচুর পর্যটক। এই অবস্থায় শনিবার থেকে অশান্ত সমুদ্রে নামতে নিষেধ করে লাগাতর প্রচার চলছে পুলিশ ও দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের তরফে।

নাগাড়ে ভারী বৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনি ব্লকের দু’টি প্রান্তের ৮৬টি গ্রাম। চিল্কিগড়ের কাছে ডুলুং নদীর কংক্রিটের চাতালটি চলে গিয়েছে জলের তলায়। জলের প্রবল স্রোতে যানবাহন চলাচল ও হেঁটে যাতায়াত বন্ধ। চিল্কিগড়ে ডুলুং নদীর উপর সেতু তৈরির জন্য দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও বেশ কয়েকবার দাবি জানানো হয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাজ্যে ক্ষমতা বদলের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে লালগড় ব্লকে কংসাবতী ও নয়াগ্রামে সুবর্ণরেখা নদীর উপর দু’টি বড় সেতু তৈরি হয়েছে। অথচ দুয়োরানি থেকে গিয়েছে জামবনি ব্লক। প্রবল বর্ষণে বেলপাহাড়ি ব্লকের এঁঠেলা এলাকায় তারাফেনি নদীর কজওয়ে ছাপিয়ে জল বইছে। এর ফলে রবিবার বাঁকুড়া-শিলদা রাজ্য সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জল না নামা পর্যন্ত যান চলাচল সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

প্রশাসন সূত্রে খবর, শনিবার রাত থেকেই চন্দ্রকোনা-১ ও ২ ব্লকের বসনছড়া, ভগবন্তপুর, বান্দিপুর-২, মনোহরপুর-সহ একাধিক পঞ্চায়েতের কুড়ি-বাইশটি গ্রামে জল ঢুকতে শুরু করেছে। ঘাটাল ব্লকের মোহনপুর পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামও জলমগ্ন। চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের কিছু এলাকায় বৃষ্টিতে বেশ কিছু বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় বাসিন্দাদের স্থানীয় স্কুলে সরানো হয়েছে। ক্ষীরপাই ও চন্দ্রকোনা পুরসভার চেয়ারম্যান দুর্গাশঙ্কর পান ও অরুপ ধাড়া বলেন, “শহরে বেশ কিছু কাঁচা বাড়ি ভেঙে। পরিস্থিতির উপর আমরা নজর রাখছি।”

পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁসাই, চণ্ডীয়া ও হলদি নদীর জলস্তর বিপদ সীমার কাছে বইছে। জেলার সর্বত্র চাষের জমিতে অতিরিক্ত পরিমাণ জল জমে আমন চাষে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চণ্ডীপুর, নন্দকুমার এলাকায় মাছের ভেড়িতে অতিরিক্ত জল জমে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রবিবার পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে জেলার সব ব্লকেই কিছু কিছু এলাকা জলমগ্ন হওয়ার খবর এসেছে। আবহাওয়া দফতর আগামী তিনদিন ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় সব ব্লক প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সব ব্লকে ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর ব্যবস্থা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE