অনিয়ম: খাবার ঢাকার বালাই নেই। মেদিনীপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
বাসি ফিশফ্রাই হোক বা আগের দিনের বিরিয়ানি— মেদিনীপুরের অলিগলির রেস্তোরাঁয় বিকোচ্ছে দেদার। রাস্তার পাশের ঘুপচি রেস্তোরাঁর রান্নাঘর দেখলে গা গুলিয়ে ওঠার জোগাড়। কিন্তু এ সব দেখবে কে? মেদিনীপুর পুরসভায় ফুড ইন্সপেক্টরই নেই যে। নজরদারি ছাড়াই রমরমিয়ে চলছে ফাস্ট ফুড বিক্রিও।
শহর মেদিনীপুরে রেস্তোরাঁর সংখ্যা নেহাত কম নয়। শহরে ঠিক কতগুলো রেস্তোরাঁ রয়েছে সেই হিসেব অবশ্য পুরসভার কাছে নেই! কেন? এক পুরকর্তা আমতা আমতা করে বলছিলেন, “এ বার হিসেব রাখা হবে!” রাস্তার পাশে ঘুপচি রেস্তোরাঁর কোনওটা পাঁচ ফুট বাই সাত ফুটের। কোনওটা আরও কম! রেস্তোরাঁর এ দিকে- সে দিকে ছড়িয়ে নোংরা- আবর্জনা। তার মাঝেই চলছে রান্না।
দিন কয়েক আগে কলকাতার দমদম রোডের একটি বড় রেস্তোরাঁয় হানা দেয় দক্ষিণ দমদম পুরসভা ও এনফোর্সমেন্ট শাখা। রেস্তোরাঁয় আচমকা হানা দিয়ে বহু অনিয়ম ধরা পড়ে। রেস্তোরাঁর রেফ্রিজারেটরে মেলে প্রচুর উচ্ছিষ্ট খাবার। দেখা যায়, খাবারে মাছি-আরশোলা ঘুরে বেড়াচ্ছে। মেদিনীপুরের ছবিটাও কার্যত একই।
স্টেশন রোডের সামনের এক রেস্তোরাঁ থেকে ফিশফ্রাই কিনে খেয়েছিলেন গৃহবধূ পারমিতা দাস। পারমিতাদেবীর কথায়, “ফিশফ্রাইতে একটা কামড় দেওয়ার পরে গা গুলিয়ে উঠেছিল। আমি নিশ্চিত, ওটা দিনের ছিল না। ফ্রিজে রাখা ছিল।” তাঁর কথায়, “অনেক সময়ই রেস্তোরাঁর খাবার খেতে হয়। বিশেষ করে বাইরে বেরোলে। খাবারের গুনগত মান যাচাই হয় বলে মনে হয় না!”
অধিকাংশ রেস্তোরাঁয় রান্নার জন্য যে সস্তার তেল ব্যবহার করা হয় তা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক বলে অভিযোগ। কোথাও কোথাও বাড়ির রান্নার গ্যাস ব্যবহার করেই চলে রান্না। বেশির ভাগ রেস্তোরাঁয় একটি গামলায় সাবান জল রেখে তাতেই কয়েকশো থালা-বাটি পরিষ্কার করা হয়। রাস্তার পাশের রেস্তোরাঁগুলোয় আ-ঢাকা অবস্থাতেই খাবার সাজানো থাকে। খাবারের উপরে মশা-মাছি ভনভন করে।
শহরের এক রেস্তোরাঁর মালিক বাপি ঘোষের অবশ্য বক্তব্য, “এমন অভিযোগ ঠিক নয়। খাবারের গুনগত মান বজায় রাখার সব রকম চেষ্টা হয়। রান্নাঘরের পরিবেশও স্বাস্থ্যকর রাখার চেষ্টা হয়।” তবে তিনি মানছেন, “মেদিনীপুরের রেস্তোরাঁগুলোয় সে ভাবে পরিদর্শন হয় না। শেষ কবে পরিদর্শন হয়েছে মনে পড়ছে না।”
খাবারের মান দেখতে রেস্তোরাঁয় নজরদারি চালানোর কথা পুরসভার। সমস্যার কথা মানছেন শহরের উপ পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস। তাঁর কথায়, “মেদিনীপুরে ফুড ইন্সপেক্টর নেই। ফলে, নিয়মিত নজরদারি চালানো সম্ভব হয় না।” তবে তাঁর সংযোজন, “পুরসভায় পরিদর্শক দল রয়েছে। সেই দল মাঝে মধ্যে রেস্তোরাঁয় নজরদারি চালায়। এ বার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।”
নজরদারি চালানোর কথা স্বাস্থ্য দফতরেরও। জেলায় খাদ্য সুরক্ষার বিষয়টি দেখভাল করেন উপ- মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান। রবীন্দ্রনাথবাবুর কথায়, “অভিযান চালানো হয়। তবে কর্মীর সংখ্যা কম। তাই হয়তো নিয়মিত অভিযান চালানো সম্ভব হয় না।” তাঁর আশ্বাস, “এ বার নিয়মিত অভিযানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নোংরা-আবর্জনা কিংবা অন্য কোনও অনিয়ম ধরা পড়লেই রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy