সরব: জেলাশাসকের দফতরে। —নিজস্ব চিত্র।
বিয়ের দু’দিনের মাথায় রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বছর কুড়ির তরুণী। বলেছিলেন, ‘যত দিন না শৌচাগার হচ্ছে, শ্বশুরবাড়িতে থাকব না’। স্বামীর ঘর ছাড়তেও দ্বিধা করেননি তিনি। শেষমেশ লড়াইয়ে জিতে আদায় করে ছেড়েছিলেন শৌচাগার।
উত্তরপ্রদেশের প্রিয়ঙ্কা ভারতীর এই লড়াই জায়গা করে নিয়েছে সেলুলয়েডেও। তৈরি হয়েছে ‘টয়লেট: এক প্রেম কথা’র মতো বলিউড ফিল্ম।
মেয়েদের এই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই এ বার মেদিনীপুরেও।
মঙ্গলবার দুপুর। স্কুলের পোশাকেই ২৫ কিলোমিটার উজিয়ে জেলাশাসকের ঘরে এসে জনা পনেরো কিশোরী দাবি জানাল— ‘স্কুলে টয়লেট চাই। ঝোপেঝাড়ে আর যাব না।’’ যা শুনে প্রশাসনের কর্তারা হতভম্ব। এমন ভাবে এই দাবি তো আগে কখনও কেউ তোলেনি!
পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর রাজনীতির অনুষঙ্গে চেনা নাম। সেখানেই রয়েছে ঝলকা গোটগেড়্যা শিবশক্তি হাইস্কুল। নির্মল বাংলা নিয়ে যেখানে হাজারও প্রচার, জেলার বহু স্কুলে যেখানে ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসছে, সেখানে কেশপুরের এই স্কুলে এতদিনেও মেয়েদের শৌচাগার তৈরি হয়নি। শৌচাগারের দাবিতেই মঙ্গলবার দুপুরে জনা পনেরো ছাত্রী মেদিনীপুরে এসেছিল। জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা হয়নি। তবে শৌচাগার তৈরির আবেদন তারা জমা দিয়েছে। একাদশ শ্রেণির অসীমা দোলুই, রূপালি দোলুইরা বলছিল, “ঝোপঝাড়ে যেতে লজ্জা লাগে। মেয়েদের শৌচাগার তৈরি কি এতটাই কঠিন!’’
১৯৬৭ সালের এই স্কুলে গোড়া থেকেই ছেলে-মেয়েরা একসঙ্গে পড়ে। আর এখন সাড়ে এগারোশো পড়ুয়ার মধ্যে সাড়ে ছ’শো জনই ছাত্রী। অথচ গোটা স্কুলে যে একটি মাত্র শৌচাগার রয়েছে, সেটি ছাত্ররা ব্যবহার করে। চার জন শিক্ষিকার জন্যও শৌচাগার রয়েছে। কিন্তু ছাত্রীদের গন্তব্য সেই ঝোপঝাড়।
ছাত্রীদের অভিযোগ, মেয়েদের তিনটি শৌচাগারের অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু সে টাকা নয়ছয়ে প্রধান শিক্ষক জড়িত। প্রধান শিক্ষক আশিস মণ্ডলের দাবি, “কোনও দুর্নীতি হয়নি।” কিন্তু মেয়েদের শৌচাগার হয়নি কেন? টাকাই বা কোথায় গেল? জবাব দিতে চাননি আশিসবাবু। তবে জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “বিষয়টি মহকুমাশাসককে দেখতে বলেছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy