আবর্জনাময় পথ। দুর্গন্ধে আয়মায় পুরীগেট উড়ালপুলে ওঠার এই রাস্তা পেরনো দুর্বিষহ। (ইনসেটে) জঞ্জাল ফেলা বন্ধে নোটিস দিয়েছে রেল। —নিজস্ব চিত্র।
৭০ মেট্রিক টন আবর্জনা ফেলা হবে কোথায়, মাথায় হাত পুরসভার!
পুজোর আগে খড়্গপুর শহর সাজাতে নানা পরিকল্পনা নিয়েছে খড়্গপুর পুরসভা। তার মাঝেই এ এক নতুন সঙ্কট। এতদিন খড়্গপুর শহরের ৩৫টি ওয়ার্ডের আবর্জনা ফেলা হত রেল এলাকার আয়মায়। পুরীগেট উড়ালপুলের পাশে জমা হত আবর্জনার স্তূপ। দুর্গন্ধে দুর্বিষহ অবস্থা হত এলাকাবাসীর। সে সব দিকে অবশ্য নজর ছিল না পুরসভার। শহরে দৈনন্দিন আবর্জনার পরিমাণ গড়ে ৭০ মেট্রিক টন। জঞ্জাল ফেলার একটা জায়গা পেয়েই দিব্যি নিশ্চিন্তে ছিল পুরসভা। এ বার গেল সেটাও! সম্প্রতি আয়মায় আবর্জনা ফেলা বন্ধের কথা জানিয়ে নোটিস দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। আর তাতেই বেড়েছে সমস্যা।
শহরে জায়গা একেই বাড়ন্ত। রেলশহরের রাস্তায় ঘুরলেই চোখে পড়বে, ইতিউতি রাস্তার ধারে স্তূপাকার আবর্জনা। কোথাও আবার খোলা ট্রাক্টরে করে জঞ্জাল নিয়ে যাচ্ছেন সাফাই কর্মীরা। ট্রাক্টর থেকে রাস্তায় পড়ছে আবর্জনা। সবেধন নীলমণি হিসেবে রয়েছে দু’টি কম্প্যাক্টর। তা দিয়ে এত বড় শহরের সব আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়, তা একটি শিশুও জানে। তাই আবর্জনা আয়মায় ফেলেই দায় সারে পুরসভা।
এতে শুধু এলাকার বাসিন্দাদেরই দমবন্ধ পরিস্থিতিতে বাস করতে হয় তা নয়। পুরীগেট উড়ালপুলে ওঠার আগের ১০০ মিটার রাস্তা দিয়ে যেতে হলে নাকে রুমাল চাপা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
গাড়িতে থাকলে উইন্ড স্ক্রিন বন্ধ না করে উপায় নেই। খড়্গপুরের গোপালীর বাসিন্দা ছত্তীসপাড়া হাইস্কুলের শিক্ষক রঞ্জিতকুমার রানা বলেন, “প্রতিদিন বাড়ি থেকে স্কুলে আসতে এই পথ ব্যবহার করতে হয়। স্কুলে ঢোকার আগে ওই পথ পেরনো যেন যন্ত্রণা। দুর্গন্ধে বমি এসে যায়। এ বিষয়ে পুরসভার ভাবা উচিত।”
সম্প্রতি আয়মা এলাকার বাসিন্দারা দূষণ নিয়ে রেলের কাছে অভিযোগ জানান। এরপরই রেল ওই এলাকায় আবর্জনা ফেলা বন্ধে নোটিস দেয়। শহরবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন কংগ্রেস পুরসভায় ক্ষমতায় থাকলেও আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে কোনও ব্যবস্থা করেনি। ২০১৫ সালের শেষ দিকে আইআইটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে পুরসভার আলোচনা হয়। বর্তমানে ফের শহরে আবর্জনা ব্যবস্থাপন পদ্ধতি গড়ে তোলার তোড়জো়ড় শুরু হয়েছে। যদিও জমির অভাবে পরিকল্পনা কতদূর বাস্তবায়িত হবে, তা সময়ই বলবে।
খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “রেল নিষেধ করার পরে আমরা ওই এলাকায় আবর্জনা ফেলছি না। জঞ্জাল ফেলার জায়গা চেয়ে আগেই সরকারের কাছে জমি চেয়েছিলাম। গোপালীর কাছে একটি জমি চিহ্নিতও করা হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘খাতায়-কলমে এখন জমি হাতে পাইনি। তবে পরিস্থিতি খারাপ হলে এখনই গোপালীতে আবর্জনা ফেলা শুরু করতে হবে।”
আবর্জনা ফেলার জমি হস্তান্তর নিয়ে জট যখন কাটেনি, তখন আবর্জনার দুর্গন্ধে ত্রাহি ত্রাহি রব শহরের অন্যত্রও। অভিযোগ, আয়মায় আবর্জনা ফেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ওয়ার্ডের ফাঁকা জায়গায় জঞ্জাল ফেলছেন সাফাই কর্মীরা। মালঞ্চর বাসিন্দা সুমিত্রা চক্রবর্তীর কথায়, “রাস্তার ধারে প্রতিদিন আবর্জনা জমছে। পরিষ্কার হচ্ছে না। রাস্তা-ঘাটে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকছে নোংরা। কী দুর্ভোগ বলে বোঝাতে পারব না।”
রেল নোটিস দেওয়ার পরও কয়েকটি ওয়ার্ডের সাফাইকর্মীরা আয়মায় জঞ্জাল ফেলছেন বলে অভিযোগ। আয়মার বাসিন্দা দীপক জৈন, সুরেশচন্দ্র দ্বিবেদীদের অভিযোগ, “রেল নিষেধ করলেও পুরসভা আয়মায় আবর্জনা ফেলছে। আমরা এ বার প্রতিকার চেয়ে পুরসভা ও রেলে স্মারকলিপি জমা দেব।”
যদিও পুরপ্রধান প্রদীপবাবুর দাবি, “আপাতত রেলের সঙ্গে কথা বলে আয়মাতে কিছু আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই গোপালীর জমিতে জঞ্জাল ফেলার কাজ শুরু হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পুজোর আগে ওই উড়ালপুলের সৌন্দর্যায়নের কাজ হবে। ওখানে আর আবর্জনা ফেলা হবে না। শহরের বাকি এলাকাও পরিষ্কার রাখতে অভিযান চালানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy