প্রতীকী ছবি।
লেটারহেডে কারও নামের পাশে লেখা, এমবিবিএস।
কারও আবার ডিপ্লোমা ইন এমবিবিএসের সঙ্গে রয়েছে এফআরএইচএস ডিগ্রিও।
এই ডিগ্রি দেখিয়েই খড়্গপুর শহরে রীতিমতো জাঁকিয়ে বসেছিল পুলক দাশগুপ্ত ও এসএ আলি। রোগ নিরাময়ে তাঁরা সিদ্ধহস্ত, এমন বিশ্বাসে তাঁদের ক্লিনিকে ভিড়ও জমাতেন বহু লোক। সম্প্রতি তাঁদের দেওয়া প্রেসক্রিপশনে রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেখে সন্দেহ হওয়ায় তদন্তের নির্দেশ দেন মহকুমাশাসক। তদন্তের পর স্বাস্থ্য দফতর দাবি করেছে, ওই দুই চিকিৎসকই ভুয়ো!
পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “খড়্গপুরের মহকুমাশাসকের নির্দেশ মতো আমরা তদন্ত করি। তদন্তে দেখা গিয়েছে এসএ আলি ও পুলক দাশগুপ্ত নামে ওই দু’জন ভুয়ো। তাঁদের এমবিবিএস ডিগ্রি ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর সঠিক নয়। আমরা বিষয়টি মহকুমাশাসককে জানিয়েছি।”
শুধু চিকিৎসা নয়, কম দামে ওষুধও বিলি করতেন এই দুই চিকিৎসক। শহরের ছোট ট্যাংরায় পুলক দাশগুপ্তর নিজের ক্লিনিক রয়েছে। পাঁচবেড়িয়ায় ইদগায় বাড়িতেই ক্লিনিক রয়েছে এসএ আলির। বাড়িতে কারও সন্তান প্রসব হলে প্রেসক্রিপশনে তা লিখে দিতেন এই দুই চিকিৎসক। দিতেন মৃত্যুর শংসাপত্রও। সেই প্রেসক্রিপশন মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে গেলে তবেই মিলত শংসাপত্র।
সম্প্রতি জন্মের শংসাপত্রের জন্য আসা নথি ঘাঁটতে গিয়ে প্রেসক্রিপশনে ওই দু’জনের রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেখে সন্দেহ হয় খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সুদীপ সরকারের। মহকুমাশাসক মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে তাঁদের বিষয়ে খোঁজ নিতে বলেন। মহকুমাশাসক সুদীপবাবু বলেন, “জন্মের শংসাপত্রের জন্য আসা নথিতে এই দুই চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেখে সন্দেহ হয়। দেখা যায় ওই রেজিস্ট্রেশন নম্বর সঠিক নয়। তাই স্বাস্থ্য দফতরকে তদন্ত করতে বলেছিলাম। পুলিশকেও ব্যবস্থা নিতে বলব।”
বুধবার ইদগা এলাকায় এসএ আলির প্রেসক্রিপশন নিয়ে খোঁজ নিলে সকলেই জানালেন, উনি আসলে আসগর আলি। এলাকার বাসিন্দাদের দেখিয়ে দেওয়া বাড়িতে যেতেই শেখ বাদশা নামে এক যুবক দাবি করেন, আসগর আলি তাঁর বাবা। উনি কোয়াক ডাক্তার। এখন তিনি বাড়িতে নেই। তবে এসএ আলি নামে কোনও ডাক্তারকে তিনি চেনেন না। পরক্ষণেই তাঁর অভিযোগ, তাঁর বাবা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাই তাঁর বাবার বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে। তবে তিনি এখনও তৃণমূল করেন। খড়্গপুরের অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস পালও বলছেন, “আমিও যখন গিয়েছিলাম তখন সকলে বলেছিলেন আসগর আলি এলাকায় এসএ আলি নামেই পরিচিত। কিন্তু ওঁদের বাড়ি গিয়ে কাউকে পাইনি। সেই মতো মহকুমাশাসককে রিপোর্টও দিয়েছি।”
পুলক দাশগুপ্তর আবার দাবি, ওডিশার জাজপুরের বিরোজা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৯৯১ সালে তিনি এমবিবিএস পাশ করেছেন। যদিও বিরোজা মেডিক্যাল থেকে পাওয়া ওই ডিগ্রি বৈধ নয় বলেই দাবি দেবাশিসবাবুর। পুলকবাবুর প্রশ্ন, ‘‘কারও মৃত্যু হলে ডেথ সার্টিফিকেট দিই। এত বছর ধরে সেই শংসাপত্র কী ভাবে বৈধ থাকল।’’ এরপরেই তিনি বলছেন, ‘‘অনেকে অনেক তদন্ত করে কিছু করতে পারেনি। তাই এই তদন্তেও ভয় পাচ্ছি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy