মিলন ঘাঁটি (বাঁ দিকে), অনিমেষ দিণ্ডা। — নিজস্ব চিত্র।
বাবা পেশায় ট্রলি চালক। অভাবের তাড়নায় চার দিদি আগেই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। ছোট ভাই কমলও নবম শ্রেণিতে পড়তে পড়তেই সোনার কাজে কাশ্মীরে চলে গিয়েছে। তবে হাল ছাড়েনি মিলন ঘাঁটি। অষ্টম শ্রেণি থেকেই বাড়ি বাড়ি টিউশনি পড়িয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করত সে। দাসপুরের পাঁচবেড়িয়া স্কুলের ছাত্র মিলন ঘাঁটি মাধ্যমিকে ৬২৮ নম্বর পেয়েছে। পাঁচবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মিলনের এই সাফল্যে খুশি প্রতিবেশী থেকে পরিবারের লোকেরা।
মিলন বলে, “অষ্টম শ্রেণিতেই আমার পড়া বন্ধ হয়ে যেত। বাবা পড়ার খরচ জোগাতে পারছিল না। সেটা বুঝতে পেরে বাবার কাছেও কিছু চাইতে পারতাম না। তাই নিজেই টিউশনি পড়ানো শুরু করি।” গ্রামের মাটির বাড়িতে ছোট দু’টি ঘরে যথেষ্ট সমস্যার মধ্যেই পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে মিলন। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছে নিয়েই এ বার আসল লড়াইয়ে নামতে চায় সে।
মিলন বাংলায় ৯০, ইংরাজিতে ৭৭, অঙ্কে ৯৮, পদার্থবিদ্যায় ৯২, জীবন বিজ্ঞানে ৯১, ইতিহাসে ৯০ ও ভূগোলে ৯০ নম্বর পেয়েছে। তবে মিলনের কথায়, ‘‘মনের মতো ফল হয়নি। ভেবেছিলাম ৬৫০-এর বেশি নম্বর পাব।” মিলনের বাবা সুধীরচন্দ্র ঘাঁটি বলেন, “ছেলে ভাল নম্বর পেলেও এ বার তার স্বপ্ন পূরণ হবে কী করে সেই চিন্তাই আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছে।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘বাবা হয়েও ছেলেকে মাধ্যমিক পড়ার খরচও দিয়ে উঠতে পারেননি। এখন সবাই বলছে চিকিৎসক হতে গেলে টিউশনি পড়ার খরচ খুব বেশি। কী যে হবে জানি না।” মিলনের মা মাধবীদেবীও বলেন, ‘‘সরকার থেকে ছেলেকে কিছু সাহায্য করলে ভাল হয়। তা হলে অন্তত ছেলের স্বপ্ন পূরণ হবে।”
অন্য দিকে, ঘাটালের বরুণা হাইস্কুলের ছাত্র অনিমেষ দিণ্ডাও মাধ্যমিকে ৬১৬ নম্বর পেয়েছে। বাবা অর্ধেন্দু দিণ্ডা সোনার কাজ করতেন। অনিমেষ যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে সেই সময় তার বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তখন থেকেই শুরু মা সুপ্রীতা দিণ্ডা ও অনিমেষের কঠিন লড়াই। মামার বাড়ির সাহায্য ও নিজে হাতের কাজ করেই ছেলেকে মানুষ করেছেন সুপ্রীতিদেবী। বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় অনিমেষ। তার কথায়, “এখন থেকেই নিজেকে তৈরি করতে টিউশনি পড়াব বলে ঠিক করেছি। না হলে নিজের কাছেই আমি হেরে যাব। মায়েরও স্বপ্ন পূরণ করতে পারব না।”
একইভাবে, সুপ্রীতাদেবীও বলেন, “ওর বাবারও ইচ্ছে ছিল ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো। কিন্তু বাপের বাড়ি থেকে আর কত সাহায্য করবে। এখন আমদের নিজের কিছু নেই। কী যে করব জানিনা।” অনিমেষের স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সরকারি ভাবে কিছু সাহায্য যাতে পাওয়া যায়, সে জন্য চেষ্টা করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy