Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু, ধমক স্বাস্থ্য কর্তার

ম্যালেরিয়া নিবারণ কর্মসূচির আওতায় সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। কিন্তু ঝাড়গ্রাম জেলার বেশির ভাগ উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখনও রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যায়নি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৭ ১১:৩০
Share: Save:

ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে ঝাড়গ্রামে। বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর সংখ্যাও। শনিবার ঝাড়গ্রামে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে জেলার ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী।

চলতি বছরের এপ্রিল ও জুলাই মাসে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ৬জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৬ সালে ঝাড়গ্রাম জেলার ৮টি ব্লকে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মোট ৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। বর্তমানে ৯ জন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের সভাঘরে বৈঠকের শুরুতেই এ দিন বিশ্বরঞ্জনবাবু ম্যালেরিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের কাছে জানতে চান, ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর তালিকাটা আর কত বাড়বে। খোদ স্বাস্থ্য অধিকর্তার মুখে এমন প্রশ্ন শুনে হকচকিয়ে যান সকলে। বৈঠকে বিশ্বরঞ্জনবাবু সাফ জানিয়ে দেন, ম্যালেরিয়া ঠেকাতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের যে সব নির্দেশ রয়েছে, ঝাড়গ্রাম জেলায় তা যথাযথ ভাবে মানা হচ্ছে না। সেই কারণেই ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।

ম্যালেরিয়া নিবারণ কর্মসূচির আওতায় সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। কিন্তু ঝাড়গ্রাম জেলার বেশির ভাগ উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখনও রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যায়নি। আশা কর্মীদের কাছে রক্ত পরীক্ষার জন্য র‌্যাপিড ডায়াগনস্টিক কিট নেই। ম্যালেরিয়া কবলিত এলাকায় মোবাইল মেডিক্যাল টিম পাঠানোর কথা। যে সব এলাকায় রাস্তাঘাট ভাল নয়, সেখানে মোবাইল টিম যাচ্ছে না। ফলে, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না বলে বৈঠকে দাবি করেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা।

চলতি মাসে শিলদার কানিমহুলি গ্রামের বাসিন্দা ম্যালেরিয়া আক্রান্ত এক রোগীকে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে রেফার করা হয়েছিল। কিন্তু দালালের খপ্পরে পড়ে ওই রোগীর ঠাই হয় মেদিনীপুরের একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে। সেখানে বহু টাকা খরচ করেও নিঃস্ব হয়ে যায় রোগীর পরিবার। সুস্থ না হওয়ায় শেষপর্যন্ত পরিজনরা মুমূর্ষু ওই রোগীকে নিয়ে যান মেদিনীপুর মেডিক্যালে। তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তখন আর কিছুই করার ছিল না। বৈঠকে এই প্রসঙ্গটি তুলেও রীতিমতো উষ্মা প্রকাশ করেন বিশ্বরঞ্জনবাবু।

স্বাস্থ্য অধিকর্তা এ দিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ার রোগীকে অবহেলা করা চলবে না। ব্লক হাসপাতাল গুলি ম্যালেরিয়া ধরা পড়লেই জেলা হাসপাতালে রেফার করে দেয়। এই প্রবণতা বদলাতে হবে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বৈঠকে জানান, ম্যালেরিয়ায় প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা শুরু না করে ব্লক থেকে অযথা রেফার করে দেওয়ার ফলে চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হয়ে যায়।

এর ফলে রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে ওঠে। অত্যন্ত সঙ্কটজনক রোগীকে মেদিনীপুর অথবা কলকাতার মেডিক্যাল কলেজে রেফায় করা হচ্ছে। ঝাড়গ্রাম জেলা ও সুপার স্পেশ্যালিটির পরিকাঠামো মেদিনীপুর মেডিক্যালের চেয়েও অনেক ভাল দাবি করেন বিশ্বরঞ্জনবাবু। তা সত্ত্বেও কেন রোগীদের রেফার করা হয় সেই প্রশ্ন তোলেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা।

স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জনবাবু বলেন, “ম্যালেরিয়ার মৃত্যু নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করেছি। তবে এ বারে মৃত্যুর সংখ্যাটা গতবারের তুলনায় বেশি। ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি জেলায় রূপায়িত করার জন্য আলোচনা করা হয়েছে।” এ দিনের বৈঠকে ছিলেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের উপ-অধিকর্তা (ম্যালেরিয়া) দীপঙ্কর মাজি, সিএমওএইচ (ঝাড়গ্রাম) অশ্বিনী মাঝি প্রমুখ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Malaria Jhargram dead ঝাড়গ্রাম
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE