Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অধরা লক্ষ্য, শৌচাগার নেই দু’লক্ষ পরিবারে

জেলার প্রতিটি পরিবারে শৌচাগার তৈরির লক্ষ্য কবে পূরণ হয়, সেটাই দেখার। অভিযানই সার। সচেতনতা রয়েছে সেই তিমিরেই। প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার তৈরির জন্য এর আগে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। প্রতিটিতে বাড়িতে শৌচাগার তৈরির জন্য একাধিকবার অভিযান চালানো হলেও পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ২ লক্ষের বেশি পরিবারের নিজস্ব শৌচাগার নেই।

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:১৬
Share: Save:

জেলার প্রতিটি পরিবারে শৌচাগার তৈরির লক্ষ্য কবে পূরণ হয়, সেটাই দেখার।

অভিযানই সার। সচেতনতা রয়েছে সেই তিমিরেই।

প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার তৈরির জন্য এর আগে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। প্রতিটিতে বাড়িতে শৌচাগার তৈরির জন্য একাধিকবার অভিযান চালানো হলেও পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ২ লক্ষের বেশি পরিবারের নিজস্ব শৌচাগার নেই। জেলায় প্রায় ৮ লক্ষ ১৭ হাজার পরিবার রয়েছে। তার মধ্যে এত বিশাল সংখ্যক পরিবারে শৌচাগার না থাকায় প্রশ্নের মুখে গ্রামীণ স্বাস্থ্য সচেতনতা। এর ফলে সরকারিভাবে পূর্ব মেদিনীপুরের ‘নির্মল জেলা’র স্বীকৃতি পাওয়া নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।

শৌচাগার না থাকা পরিবারের তালিকায় শুধু দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা পরিবার নয়, দারিদ্র্য সীমার উপরে থাকা অনেক পরিবারও রয়েছে বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্মল ভারত অভিযান ও একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থ কাজে লাগিয়ে আগামী তিন বছরের মধ্যে জেলার সব পরিবারে শৌচাগার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রথম ধাপে চলতি আর্থিক বছরের (২০১৪-১৫)-এর মধ্যে জেলার ৭০ হাজার পরিবারে শৌচাগার তৈরির জন্য উদ্যোগ নিয়েছে জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসন। জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য দফতরের কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাস বলেন, “জেলার প্রায় ২ লক্ষ ১৯ হাজার শৌচাগারহীন পরিবারের মধ্যে চলতি আর্থিক বছরের মধ্যে প্রথম ধাপে ৭০ হাজার পরিবারে শৌচাগার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৩২০০টি শৌচাগার তৈরির কাজ হয়েছে। আগামী মার্চ মাসের মধ্যে বাকি পরিবারে শৌচাগার তৈরির কাজ করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

জেলা পরিষদ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সাক্ষরতা অভিযানের সাথে গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ১৯৯০ সাল থেকেই অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় অভিযান শুরু হয়েছিল। নিরক্ষর বাসিন্দাদের সাক্ষর করে তোলার জন্য সাক্ষরতা কেন্দ্র চালুর পাশাপাশি প্রতিটি বাড়িতে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার তৈরির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। পঞ্চায়েতের সাথে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির উদ্যোগে প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার তৈরির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রচারের পাশাপাশি স্বল্প ব্যয়ে শৌচাগার তৈরির কাজ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০২ সালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা গঠনের পর এই কাজে আরও গতি আসে। জেলার ২২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ২০৬টি ‘নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েত’-এর স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু জেলার প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা এখনও অধরা থেকে গিয়েছে।

জেলা প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোট পরিবারের সংখ্যা ৮ লক্ষ ১৭ হাজার ৮৩০টি। এর মধ্যে তমলুক মহকুমায় পরিবারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ২ লক্ষ ৯৫ হাজার ৫৯০টি। কাঁথি মহকুমায় ২ লক্ষ ১৩ হাজার ৭৫৪টি, হলদিয়া মহকুমায় ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৭৭৫টি, এগরা মহকুমায় ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৭১১টি পরিবার রয়েছে। জেলার মোট ৮ লক্ষ ১৭ হাজার পরিবারের মধ্যে ২ লক্ষ ১৯ হাজার পরিবারে এখনও নিজস্ব শৌচাগার নেই। অর্থাত্‌ জেলার মোট পরিবারের এক চতুর্থাংশ পরিবারে এখনও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নেই।

জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য দফতরের কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাস জানান, “শৌচাগারহীন পরিবারের শৌচাগার তৈরির জন্য ‘ইন্ডিভিজুয়াল হাউস হোল্ড টয়লেট’ কর্মসূচিতে শৌচাগার তৈরির জন্য সরকারিভাবে ১০ হাজার টাকা করে সাহায্য করা হবে। আর ওই পরিবারকে দিতে হবে মাত্র ৯০০ টাকা। সরকারিভাবে পরিবারপিছু ১০ হাজার টাকা করে সাহায্য দিতে নির্মল ভারত অভিযান প্রকল্প থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা ও একশো দিনের কাজের প্রকল্প থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা করে বরাদ্দ করা হচ্ছে। দারিদ্র সীমার নিচে (বিপিএল) থাকা পরিবার ছাড়াও দারিদ্র সীমার উপরে (এপিএল) থাকা পরিবারও এই সুবিধা পাবে।” জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ জানান, প্রথম ধাপে চলতি আর্থিক বছরের মধ্যে জেলায় ৭০ হাজার শৌচাগার তৈরির জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলার যে ১৭ টি গ্রাম পঞ্চায়েতে এখনও নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েতের স্বীকৃতি পায়নি, সেখানে শৌচাগার তৈরির কাজে অধিক নজর দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে একশো দিনের কাজের জব কার্ডধারীদের পরিবারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এইসব জব কার্ডধারী পরিবারে শৌচাগার তৈরির কাজে ওই পরিবারের কেউ শ্রমিক হিসেবে কাজ করলে তিনি নির্ধারিত হারে মজুরি পাবেন। দ্রুত শৌচাগার তৈরির কাজ করার জন্য জেলার প্রতিটি ব্লকে ৪০ জন করে রাজমিস্ত্রিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (তাম্রলিপ্ত গুচ্ছ সমিতি) শৌচাগার তৈরির কাজে সাহায্যও করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE