ডেবরার ত্রিলোচনপুরে পুলিশ। ইনসেটে, নিহত বাদল সিংহ। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
নিকাশি সমস্যা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ। বিরোধ ক্রমে সংঘর্ষের রূপ নিলে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির।
একাধিকবার আলোচনার পরেও ডেবরা ব্লকের মলিহাটি ও গোলগ্রাম পঞ্চায়েতের নিকাশি সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি। শনিবার সকালে বাঁধ মেরামতি নিয়ে বিরোধের জেরে মলিহাটি পঞ্চায়েতের শিমুলতলা এলাকার পূর্ব ও পশ্চিম অংশের বাসিন্দাদের মধ্যে বিরোধ সংঘর্ষের আকার নেয়। তার জেরে মৃত্যু হয় বাদল সিংহ (৪৫) নামে এক ব্যক্তির। বাদলবাবুর বাড়ি এলাকার পূর্ব অংশে মলিহাটি পঞ্চায়েতের ত্রিলোচনপুরে। তিনি পেশায় লরি চালক। এ দিন সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে করদা এলাকায় লরি মালিকের বাড়ি যাচ্ছিলেন তিনি। সেই সময় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তিনি। মাথায় পাথরের আঘাতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনায় জখম হন উভয়পক্ষের আরও ১৯ জন। আহতদের প্রথমে ডেবরা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। আটজনকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপতালে স্থানান্তরিত করা হয়। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন, “জল নিকাশি নিয়ে একটা পুরনো গোলমাল থেকে দু’দিকের গ্রামবাসীদের সংঘর্ষ হয়। সেই সময় পাথরের আঘাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। ”
দীর্ঘদিন ধরেই কাঁসাই নদী সংলগ্ন মলিহাটি ও গোলগ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা নিকাশির সমস্যায় জেরবার। এলাকার উত্তর ও দক্ষিণ দিক দিয়ে চলে গিয়েছে দু’টি রাস্তা। রাস্তা দু’টি পূর্ত দফতরের অধীন। রাস্তার পূর্ব দিকে রয়েছে গোলগ্রাম অঞ্চলের চকপলমল, চকপ্রয়াগ, খাজুরি জ্যোতনারায়ণ, মলিহাটি অঞ্চলের ত্রিলোচনপুর, টাঙাশ্রী গ্রাম। রাস্তার পশ্চিম দিকে রয়েছে মলিহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের চকতাতার, শ্রীবল্লভপুর, পুরুষোত্তমপুর, নরহরিপুর, মধুবনপুর গ্রাম। রাস্তার পশ্চিম অংশের থেকে পূর্ব অংশ অপেক্ষাকৃত উঁচু। ফলে রাস্তার পশ্চিম অংশের জল পূর্ব অংশ দিয়ে বয়ে গিয়ে ভসরার খালে পড়ে। অভিযোগ, পূর্ব অংশের বাসিন্দারা রাস্তার নিচে থাকা হিউম পাইপের মুখ বন্ধ করে জল আটকে দেয়। ফলে পশ্চিম দিকের জল জমে যাওয়ায় চাষিরা ক্ষতির শিকার হন। বিরোধের সূত্রপাত এখানেই। গত বছর অগস্ট মাসে নিকাশি সমস্যা নিয়ে গোলমালের জেরে প্রায় ১৫দিন বন্ধ ছিল মলিহাটি পঞ্চায়েত অফিস।
দিন কয়েক আগে বৃষ্টির জেরে রাস্তার বাঁধে ফাটল দেখা যায়। তার জেরে পূর্ব অংশের জমি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। প্রশাসনকে জানিয়েও কাজ না হওয়ায় শনিবার সকালে রাস্তার পূর্ব অংশের লোকেরা নিজেরাই বাঁধ মেরামতির কাজে হাত লাগায় বলে স্থানীয়দের দাবি। বাঁধ মেরামতি হলে পশ্চিম অংশের জল বেরতে পারবে না, এই আশঙ্কায় শিমুলতলা ও ত্রিলোচনপুর বাসস্ট্যান্ডে জমায়েত হন পশ্চিম অংশের লোকেরা। সেই সময় দু’দিকের বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ঘটনার সময় ওই পথ দিয়েই যাচ্ছিলেন রাস্তার পূর্ব অংশের বাসিন্দা বাদলবাবু। অভিযোগ, সংঘর্ষের সময় কে বা কারা বাদলবাবুর মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। এ দিন বাদলের খুড়তুতো ভাই মন্টু সিংহ বলেন, “দাদা লরি মালিকের বাড়িতে যাচ্ছিল। শিমুলতলার কাছে দাদাকে পেয়ে পশ্চিম দিকের লোকেরা পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে তাঁকে মেরে দিয়েছে।”
এ দিন পূর্ব দিকের ত্রিলোচনপুরের বাসিন্দা গৌতম হাজরা বলেন, “সরকারি উদাসীনতায় এই অবস্থা হল। চাষের জমি ভেসে যাচ্ছে দেখে সকলে বাঁধ বাঁধতে গিয়েছিল। ওরা এসে গ্রামবাসীদের ওপর হামলা চালায়।” পশ্চিম দিকের চকতাতারের বাসিন্দা সুশীল পাত্র বলেন, “ওরা নিজেদের মতো জল যাওয়ার সব পথ আটকে বাঁধ মেরামতি করতে গিয়েছিল। তাতে বাধা দিলে ওরা হামলা চালায়।”
বিডিও জয়ন্ত দাস বলেন, “ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কার্যকর না হলে ওই এলাকার সমস্যার সমাধান খুব কঠিন। বহুবার বৈঠক ডেকেও দু’পক্ষের মীমাংসা হয়নি। একশো দিনের কাজে যাতে সমস্যার কিছুটা সমাধান করা যায় চেষ্টা করব।” জেলা সেচ কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ বলেন, “এই মৃত্যু দুঃখজনক। ওই এলাকার জলনিকাশির সমস্যা দীর্ঘদিনের। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজ শেষ হলেই সমস্যার সমাধান হবে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এই ঘটনা ঘটে গেল। আমরা যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের পথ খুঁজছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy