সুদেবী মাহাতো। —নিজস্ব চিত্র।
সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ধৃত এক মহিলা পোস্ট মাস্টারের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করল ঝাড়গ্রাম প্রথম এসিজেএম আদালত। অভিযুক্ত বছর পঁয়ত্রিশের সুদেবী মাহাতোকে রবিবার গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে পুলিশ। তিনি জামবনি ব্লকের লালবাঁধ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত দৈচাকুরিয়া শাখা ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার।
দৈচাকুরিয়া গ্রামে তাঁর নিজের বাড়িতেই শাখা ডাকঘরটি রয়েছে। বছর দু’য়েক আগে ওই ডাকঘর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জামবনি থানায় সরকারি আদিবাসী পেনশনের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দায়ের করেন এক মহিলা গ্রাহক। অভিযোগের পরও অবশ্য ওই ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার পদে বহাল রয়েছেন সুদেবী। এদিন ছুটির দিন হওয়ায় আদালতে সরকারি কৌঁসুলি ছিলেন না। সরকারপক্ষের তরফে অভিযুক্তের জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করা হয়নি। পাশাপাশি, অভিযুক্তকে হেফাজতে চেয়ে পুলিশও কোনও আবেদন জানায়নি। ফলে, অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী তপন সিংহের একতরফা বক্তব্য শোনার পরে ভারপ্রাপ্ত বিচারক টিকেন্দ্রনারায়ণ প্রধান অভিযুক্তের শর্তাধীন জামিন মঞ্জুর করেন। তবে মামলার পরবর্তী দিনগুলিতে অভিযুক্তকে আদালতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
অভিযোগ দায়ের হওয়ার প্রায় দু’বছর পরে কেন গ্রেফতার হলেন সুদেবী? আর কেনই বা জামিন আয়োগ্য ধারায় রুজু হওয়া মামলায় জামিন পেয়ে গেলেন? এই নিয়ে বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
তাহলে কী গোড়াতেই মামলাটিকে পুলিশ লঘু করে দিয়েছিল? ঘটনা হল, দৈচাকুরিয়া শাখা পোস্ট অফিসের মাধ্যমে সরকারি প্রকল্পের ভাতা ও পেনশন পান এলাকার উপভোক্তারা। সাঁকরো হাঁসদা নামে এক মহিলা ২০১৩ সালের ২ নভেম্বর জামবনি থানায় অভিযোগ দায়ের করে জানান, ওই বছরের জুলাইয়ে অন্য কারও নকল টিপ সই দিয়ে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে আদিবাসী পেনশনের নগদ পাঁচ হাজার টাকা অন্য কেউ তুলে নেন। ওই সময় এলাকার আরও ৭ উপভোক্তার অ্যাকাউন্ট থেকেও এভাবে আদিবাসী পেনশনের টাকা তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তবে কেবলমাত্র সাঁকরোদেবী পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন।
সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জামিন অযোগ্য ৪০৯ ধারায় পুলিশ মামলা রুজু করে। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে মামলাটি ধামাচাপা পড়ে যায়। কেউ গ্রেফতারও হননি। পরবর্তী কালে, আদালতের নির্দেশে সাঁকরোদেবীর টিপ ছাপের নমুনা সংগ্রহ করে পুলিশ। সিআইডি-র ফিঙ্গার প্রিন্ট বিভাগে নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সম্প্রতি ফিঙ্গার প্রিন্ট রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, যে টিপ ছাপ দিয়ে টাকা তোলা হয়েছে, সেই ছাপের সঙ্গে সাঁকরোদেবীর আঙুলের ছাপের কোনও মিল নেই। এরপরই রবিবার পোস্ট মাস্টার সুদেবী মাহাতোকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
জামিন পাওয়ার পরে আদালত প্রাঙ্গণ ছেড়ে যাওয়ার সময় বিচারাধীন মামলাটি নিয়ে মন্তব্য করতে চান নি সুদেবী। তাঁর কথায়, “যা বলার আমার আইনজীবী বলবেন।”
সুদেবীর আইনজীবী তপন সিংহ বলেন, “অভিযোগের বয়ান অনুযায়ী, অন্য কোনও ব্যক্তির টিপসইয়ের ভিত্তিতে সাঁকরোদেবীর পেনসন প্রকল্পের টাকা তোলা হয়েছে। তদন্তের রিপোর্টে কোথাও বলা নেই, পোস্ট মাস্টার ওই সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সব দিক খতিয়ে দেখেই আদালত আমার মক্কেলকে জামিন দিয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy