মেদিনীপুরে এ বি বর্ধনের স্মরণসভা। — নিজস্ব চিত্র।
আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও জোট ঘোষণা হয়নি। তবে প্রয়াত সিপিআই নেতা এ বি বর্ধনের স্মরণসভাতেও গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ জোটের পক্ষেই সওয়াল করলেন দলের রাজ্য সম্পাদক প্রবোধ পণ্ডা। প্রয়াত নেতার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে প্রবোধবাবু বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বড় পরিবর্তন হবে, এই বিশ্বাস ছিল প্রয়াত সিপিআই নেতা এ বি বর্ধনেরও।
রবিবার সিপিআইয়ের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির উদ্যোগে মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর হলে প্রয়াত সিপিআই নেতার স্মরণে এক সভার আয়োজন হয়। প্রবোধবাবু বলেন, ‘‘ওঁনার (এ বি বর্ধন) সঙ্গে আমার শেষ দেখা গত নভেম্বরের ২৪- ২৫ তারিখে। দলের জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে। বৈঠক শেষে ওঁনার সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেছিলাম। উনি জানতে চেয়েছিলেন, কী হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে, মানুষ কী ভাবছেন।” সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদকের কথায়, “আমি জানিয়েছিলাম, পশ্চিমবঙ্গে মানুষ প্রতিরোধে পথে নামছেন। মানুষ যদি নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন তাহলে বড় পরিবর্তন হবে পশ্চিমবঙ্গে। উনি বলেছিলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি, পশ্চিমবঙ্গে বড় পরিবর্তন হবে। মানুষ সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন।”
এ দিনের সভায় তৃণমূল ও বিজেপি বাদে প্রায় সব গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ দলকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিল সিপিআই। কংগ্রেসকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। দলীয় সূত্রে খবর, সিপিআইয়ের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণা নিজেই ফোন করে জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়াকে স্মরণসভায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বিকাশবাবুর কাছে আমন্ত্রণপত্রও পাঠানো হয়। তবে বিকাশবাবু কিংবা জেলা কংগ্রেসের কোনও প্রতিনিধি এ দিনের সভায় আসেননি। কেন? বিকাশবাবুর বক্তব্য, “শনিবার সবংয়ে ঝড়- বৃষ্টিতে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ দিন আমি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। আমার প্রতিনিধি হিসেবে কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিপিআইয়ের ওই সভায় যেতে বলেছি।”
জেলা কংগ্রেস নেতা কুণালবাবুর অবশ্য দাবি, সভার ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। জেলার কংগ্রেসের অন্য এক নেতা বলেন, “স্মরণসভায় দলের কারও না- যাওয়ার কিছু ছিল না। মনে হয় অন্য কাজে ব্যস্ত থাকার জন্যই কেউ যেতে পারেননি!” সভায় উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক সরকার, সিপিআইয়ের জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পল্লব সেনগুপ্ত, সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য হরেকৃষ্ণ সামন্ত, এসইউসির জেলা সম্পাদক অমল মাইতি, আরএসপির জেলা সম্পাদক শক্তি ভট্টাচার্য প্রমুখ। ছিলেন মেদিনীপুর কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ মুকুলরঞ্জন রায়, আইনজীবী শ্যামলেন্দুকৃষ্ণ মাইতি প্রমুখ।
দীপক সরকার বলেন, “রাজ্যের পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে জোটবদ্ধ করে বিকল্প সংগ্রাম গড়ে তোলার ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবর্তনের সংগ্রামে সমস্ত মানুষকে এক করতে হবে।”
বাম-কংগ্রেস জোট প্রসঙ্গে সভা শেষে এক প্রশ্নের জবাবে সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক প্রবোধবাবু বলেন, “জোট হোক বা না হোক, আসন সমঝোতার সম্ভাবনা রয়েছেই। আর কিছু দিনের মধ্যে ছবিটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। তবে মানুষের জোট হয়েই গিয়েছে।”
আসন সমঝোতা নিয়ে কোনও মতবিরোধ হবে না বলেও দাবি প্রবোধবাবুর। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কেন মতবিরোধ হবে? সবাইকে কিছু কিছু আসন হয়তো ছাড়তে হবে। আমাদের সকলেরই তো একটাই লক্ষ্য, তৃণমূলের অপশাসন থেকে পশ্চিমবাংলাকে মুক্ত করা।” পাশাপাশি সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদকের মন্তব্য, “তৃণমূল আর কিছু দিন থাকবে! তারপর নতুন সরকার হবে। তৃণমূলকে হটানোর জন্য মানুষ তৈরি হয়েই গিয়েছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy