সরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত নেই। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শুভমের পাশে তাই দাঁড়াল তার স্কুল। শুক্রবার ঝাড়গ্রামের শহরের সরকারি এক প্রাথমিক স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টায় শুভমের মতো আরও কয়েকজনের রক্তের সঙ্কট কাটল।
ঝাড়গ্রামের বলরামডিহির অশোক বিদ্যাপীঠ নিম্ন বুনিয়াদী বিদ্যালয়ে বেশির ভাগই নিম্ন আয়ভুক্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়ে। বছর ছ’য়েকের শুভম সিংহ প্রথম শ্রেণির পড়ুয়া। থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়েছিল খুব ছোট্টবেলায়। শুভমের বাবা একটি মোটর গ্যারাজে কাজ করেন। প্রতি মাসেই টানা কয়েক দিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকতে হয় রক্ত নেওয়ার জন্য। ইদানিং শুভমের অনুপস্থিতির হার বেড়ে যাচ্ছিল। খোঁজ নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন, শুভমের জন্য প্রয়োজনীয় ‘এ’ পজিটিভ রক্ত সব সময় পাওয়া যাচ্ছে না। সময় মতো রক্ত না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে সে।
এ মাসেও কয়েকদিন ধরে ঝাড়গ্রাম ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত অমিল। শুক্রবারও জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে ছিল মাত্র ১০ ইউনিট ‘বি’ পজেটিভ রক্ত। মেদিনীপুরে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় এক ইউনিট রক্তও পাননি শুভমের অভিভাবকরা। বিষয়টি জানতে পেরে তড়িঘড়ি উদ্যোগী হন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সুস্মিতা ঘোষ মণ্ডল এবং সহ-শিক্ষক সুব্রতকুমার শিট, মহাবীর বেরা ও দীপক বেরারা। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর রক্তের সংস্থান করাতে শুক্রবার স্কুলে একটি রক্ত সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হয়। ওই শিবিরে অভিভাবকদের পাশাপাশি, বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এসেছিলেন ঝাড়গ্রাম ব্লাড ব্যাঙ্কের ভারপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার আলো হাঁসদা। রক্তাদানের ব্যবস্থাও ছিল।
ঘটনাচক্রে সুস্মিতাদেবীর রক্তের গ্রুপ ‘এ’ পজিটিভ। সুস্মিতাদেবী নিজে রক্তদান করেন। অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “প্রতি মাসে শুভমের জন্য এক ইউনিট রক্তের প্রয়োজন। এমন আরও কত শুভম রয়েছে। তাদের জন্য আপনারা এগিয়ে আসুন।” ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের চিকিত্সক আলো হাঁসদা জানালেন, রক্ত সংগ্রহ করার পরবর্তী ৩৫দিন পর্যন্ত সেটি ব্যবহার করা যায়। কিন্তু চাহিদা এতটাই যে রক্তের ভাঁড়ারে টান পড়ছে।’’
এ দিন স্কুলে যখন এমন কর্মসূচি চলছে, তখন হাসপাতালের শয্যায় মা বন্দনা সিংহের পাশে বসেছিল শুভম। বন্দনাদেবী বলেন, “প্রতি মাসেই খুব সমস্যা। স্কুল কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগে আমরা ধন্যবাদ জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।” স্কুলের শিবিরে সংগৃহীত রক্ত প্রয়োজনীয় পরীক্ষার পরে শুভমকে দেওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত আরও দুই শিশুকেও এ দিন শিবির থেকে সংগৃহীত রক্ত দেওয়া হয়েছে। ঝাড়গ্রাম ব্লাড ব্যাঙ্কের ভারপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার আলো হাঁসদা বলেন, “চাহিদার তুলনায় সংগ্রহ কম। ফলে, সব সময় প্রয়োজনীয় রক্ত পাওয়াটা সমস্যা হয়।”
ঝাড়গ্রাম মহকুমার সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক সমর দাস বলেন, “স্কুল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ প্রশংসনীয় এবং দৃষ্টান্তযোগ্য।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy