ক্ষমতায় এসেই পাঁচ বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যে উন্নয়নের জোয়ার বইবে। পাঁচ বছর পর ২০১৬ সালে আবার যখন বিধানসভা নির্বাচন চলছে তখনও প্রচারে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এমন উন্নয়ন কখনও দেখেনি বাংলা।
কিন্তু রাজ্য জুড়ে উন্নয়নের মাঝেও রামনগরে কোনও উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছেন না তাঁরা। এমন দাবি বিরোধীদের নয়, খোদ রামনগরের একাংশ তৃণমূল নেতৃত্বের।
চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে দিতে এক তৃণমূল কর্মী তো বলেই ফেললেন, আডাডতৃণমূল কর্মীদের একাংশের কথায়, “শুনছি না কি উন্নয়ন হয়েছে, কই এলাকায় তো ছিঁটেফোঁটাও নেই।’’ রামনগরের ১৭টি অঞ্চলের খোদ তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের এমন অভিযোগে কার্যত কিছুটা বিব্রত তৃণমূল প্রার্থী ও বিদায়ী বিধায়ক অখিল গিরি।
আর এমন অভিযোগ যে উঠছেই তার কথা অস্বীকারই বা করেন কী করে অখিলবাবু। কারণ, নিউদিঘার একটি হোটেলে সম্প্রতি রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রের ১৭টি অঞ্চলের তৃণমূল কর্মীদের ভোট প্রস্তুতি সভায় হাজির ছিলেন তিনি। আর তার সামনেই অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। সেখানে অখিল গিরির আমলে কোনও উন্নয়ন না হওয়া, দলের গোষ্ঠীকোন্দলে মদত দেওয়া, স্বজন পোষণ ও দুর্নীতির অভিযোগও তুলেছিলেন কর্মীরা। কর্মীদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার বদলে রেগেমেগে অখিলবাবু সভা ছেড়েই বেরিয়ে গিয়েছিলেন।
আর এখানেই সামনে আসছে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের বিষয়টা। জেলার সকলেই তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর সঙ্গে দলের কার্যকরী সভাপতি অখিল গিরির কোন্দলের কথা জানেন। এমনকী কোন্দল সামলাতে এ বার ভোটে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় শিশির ও শুভেন্দু অধিকারী বিরোধী শিবিরের সৌমেন মহাপাত্র, শিউলি সাহাদের অন্য জেলায় প্রার্থী হিসেবে পাঠিয়ে দিয়ে জেলায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব।
জেলায় অধিকারী গোষ্ঠীর বিরোধী শিবিরের লোক হিসেবে রয়েছেন শুধুমাত্র অখিল গিরি। অখিলবাবুর সভা-মিছিল এড়িয়ে চলছে বিরোধী গোষ্ঠীর কর্মী ও নেতারা। অখিলবাবুর সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে সামাল দিয়ে ভোট বৈতরনী পার হওয়া।
অখিলবাবু এ হেন অবস্থাকে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছেন প্রতিপক্ষ বিরোধীরা। রামনগর কেন্দ্রে বিরোধী জোটের প্রার্থী হয়েছেন সিপিএমের তাপস সিংহ। এলাকায় ষথেষ্ট পরিচিতি রয়েছে তাঁর। এলাকাকেও হাতের তালুর মতো চেনেন তিনি।
উন্নয়নের হিসেব দিয়ে তাপসবাবু বলেন, ‘‘দিঘা শহরে ঢোকার মুখে বিশ্বব্যাঙ্কের কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে একটি তোরণ তৈরি ছাড়া আর কোনও উন্নয়ন হয়নি। মৎস্যজীবীদের স্বার্থে আধুনিক কোনও পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। পড়াশোনার জন্যও কোনও নতুন উদ্যোগ নেই।’’ তবে দুর্নীতি নিয়ে সুর চড়িয়েছেন তিনি। বলেন, ‘‘মোটা টাকার বিনিময়ে দলীয় পেটুয়া লোকেদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি চলছে। গোটা দলটাই দুর্নীতি আর চুরিতে ভরে গিয়েছে। বদলের বদল চান মানুষ।”
যদিও অখিলবাবু এসব অভিযোগে আমল দিতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলে গোষ্ঠীকোন্দল নেই। এ সব বিরোধীদের অপপ্রচার।” কাজের খতিয়ান তুলে ধরেছেন তিনিও। তাঁর কথায়, “দিঘা, মন্দারমণি, শঙ্করপুর ও তাজপুর সমুদ্র পর্যটনকেন্দ্র বাম আমলে প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। এখন সেখানেই পর্যটকের জোয়ার। রামনগর সেতু, দমকল কেন্দ্র, পানমান্ডি নির্মাণ, পথবাতি, বিদ্যুদয়ন, পানীয় জলের ব্যবস্থা সব কিছুই করা হয়েছে।’’
রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রে ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে অখিলবাবু ১৬,৫৫৯ ভোটে সিপিএমের স্বদেশ নায়ককে পরাজিত করেছিলেন। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে রামনগর কেন্দ্রে অবশ্য তৃণমূলের ভোটের মার্জিন খুবই কম। এ বার জোটের আবহাওয়ায় সেই মার্জিন কতটা বাড়ে বা কমে, অপেক্ষা তারই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy