Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হাতি তাড়ানোর, দাবিতে অবরোধ

প্রায় গোটা বছরটাই হাতির পাল দাপিয়ে বেড়িয়েছে। মানুষের মৃত্যু, ফসলের ক্ষতি, ভেঙে পড়া বসত বাড়ি— দুলকি চালে উপেক্ষা করেছে দলমার দামালরা। তাতেই ক্ষুব্ধ মানুষ। ক্ষোভ অবশ্য সরকার ও প্রশাসনের উপর। তাই মঙ্গলবার সকাল থেকে গড়বেতা থানার আঁধারনয়নে পথ অবরোধ করলেন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের বাসিন্দারা।

হুলা জ্বালিয়ে, ফসল ফেলে অবরোধ। — নিজস্ব চিত্র

হুলা জ্বালিয়ে, ফসল ফেলে অবরোধ। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৩২
Share: Save:

প্রায় গোটা বছরটাই হাতির পাল দাপিয়ে বেড়িয়েছে। মানুষের মৃত্যু, ফসলের ক্ষতি, ভেঙে পড়া বসত বাড়ি— দুলকি চালে উপেক্ষা করেছে দলমার দামালরা। তাতেই ক্ষুব্ধ মানুষ। ক্ষোভ অবশ্য সরকার ও প্রশাসনের উপর। তাই মঙ্গলবার সকাল থেকে গড়বেতা থানার আঁধারনয়নে পথ অবরোধ করলেন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের বাসিন্দারা।

সকাল সাড়ে ৭টা থেকে অবরোধ শুরু হয় ঘাটাল-চন্দ্রকোনা স়ড়কে। গভীর জঙ্গলে হাতিকে সরানো, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, জঙ্গল সংলগ্ন গ্রাম গুলিতে পর্যাপ্ত পটকা, জ্বালানি সরবরাহ-সহ একাধিক দাবিতে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক অবরোধ চলে। পরে পুলিশ ও বন দফতরের আধিকারিকরা ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সমস্ত দাবি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিলে অবরোধ উঠে যায়। তবে ক্ষোভ যায়নি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত আট-দশ দিন ধরে গড়বেতা ও চন্দ্রকোনা থানায় যাদবনগর, হুড়হুড়িয়া, আমশোল, পানিকোঠর, মল্লিকপাড়া, শ্যামপুর, গোলকধাইমা, বওড়াশোল-সহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৭০ টি হাতির পাল তাণ্ডব চালাচ্ছে। ধামকুড়িয়া জঙ্গলে থাকা ৩০টি হাতির পাল স্থানীয় ছোট-ছোট জঙ্গলে ঘোরাফেরা করছে। সন্ধ্যা হলেই মাঠে নেমে আলু ও অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করছে। বওড়াশোল গ্রামের বাসিন্দা সুরজিৎ কোলে বলেন, “যে কোনও মুহূর্তে হাতি গ্রামে ঢুকে পড়বে। আমাদের ঘুম উড়ে গিয়েছে। সন্ধ্যা থেকেই রাত পাহারায় বেরিয়ে পড়ছি। বন দফতরের কোনও কর্মীর দেখা নেই।’’ গোলকধাইমার বাসিন্দা শিবু মান্ডিদের অভিযোগ, পটকা, হুলা জ্বালানোর জন্য তেলও দেয়নি বন দফতর। তাই বাধ্য হয়েই অবরোধ।

বাসিন্দাদের প্রশ্ন, হাতি মোকাবিলায় পশ্চিম মেদিনীপুরকে দু’টি ঐরাবত গাড়ি দিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু তাতে কোনও উপকার হয়নি। মাস খানেক ধরে দলমার দাঁতালেরা তাণ্ডব চালাচ্ছে একটানা। বন দফতরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “সব এলাকায় ওই গাড়ি ঢুকতে পারে না। এ বার আবার হাতিগুলি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ঘোরাফেরা করছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই ফসলের যা ক্ষতি হওয়ার
হয়ে যাচ্ছে।’’

দফতর সূত্রেই খবর, এখনও জেলার একাধিক বনাঞ্চলে হাতির পাল ঘোরাফেরা করছে। যদিও তাদের লালগড় হয়ে ঝাড়খণ্ডে পাঠাতে মরিয়া দফতর। প্রায় ৫০-৫৫টি হাতির একটি পালকে সোমবার রাতে গোয়ালতোড়ের রামগড় হয়ে খাসজঙ্গলে পাঠানো সম্ভব হয়েছে বলে দাবি দফতরের আধিকারিকদের। কিন্তু রূপনারায়ণ বিভাগের ধামকুড়িয়া, আঁধারনয়ন প্রভৃতি রেঞ্জে হাতি রয়ে গিয়েছে। যদিও দফতরের দুই ডিএফও অর্ণব সেনগুপ্ত ও রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন, হাতির পালকে লালগড় হয়ে ঝাড়খণ্ডে পাঠানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা। বাসিন্দাদের অভিযোগ অস্বীকার করে রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “দফতরের কর্মীরা প্রতিদিনই টহল দিচ্ছে। রাতে ড্রাইভিং করে গভীর জঙ্গলে ঢোকানোর চেষ্টাও হচ্ছে। আমরা হাতির সঙ্গে তো লড়াই করতে পারব না। পর্যাপ্ত পটকা, তেলও দেওয়া হয়ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Elephant chase Road Blockade Elephant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE