বন্ধ রয়েছে বাজার। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের ফলক (ইনসেটে)। পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর কেটে গিয়েছে চার বছর । কিন্তু তারপরও চালু হয়নি তমলুক শহরের শহিদ মাতঙ্গিনী স্বদেশী বাজার। রাজ্য সরকারের কৃষি বিপণন দফতরের উদ্যোগে তমলুক স্টেশনের কাছে গড়ে তোলা ওই বাজারের অধিকাংশ দোকানঘর বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। বাজারের প্রায় ১২০ টি পাকা দোকানঘর তৈরির জন্য কয়েক কোটি টাকা খরচ করার পরও তা চালু না হওয়ায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, ‘‘তমলুকের ওই বাজার চালুর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই বাজার চালু হবে।’’
জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষকদের উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিপণ্য বেচা-কেনার জন্য নিয়ন্ত্রিত বাজার গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিল রাজ্য সরকারের কৃষি বিপণন দফতর। তার জন্য ১৯৮১ সাল নাগাদ তমলুক স্টেশনের কাছে প্রায় ২০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করেছিল জেলা প্রশাসন। পরবর্তী সময়ে অধিগৃহীত জমির পুরো ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় ওই জমি কৃষকদের দখলে ছিল। পরে রাজ্য সরকারের কৃষি বিপনন দফতর থেকে অর্থ বরাদ্দ করার পরে অধিগৃহীত জমির ক্ষতিপূরণ দেয় জেলা প্রশাসন। কৃষি বিপণন দফতরের হাতে ওই জমি আসার পর তমলুক পুরসভার উদ্যোগে কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড গড়ার জন্য এক একর জমি দেওয়া হয়। অধিগৃহীত বাকি জমিতে বাজার গড়ায় উদ্যোগী হয় কৃষি বিপনন দফতরের অধীনে থাকা তমলুক রেগুলেটেড মার্কেট কমিটি।
২০০৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি শহিদ মাতঙ্গিনী স্বদেশী বাজার নামে ওই বাজার গড়ার কাজের শিলান্যাস করেছিলেন তৎকালীন রাজ্যের কৃষি বিপনন মন্ত্রী মোরতাজা হোসেন। এরপর কয়েক কোটি টাকা খরচ করে ওই বাজারের ১২০ টি পাকার দোকানঘর ও একটি বিশাল অফিস ঘর তৈরি করা হয়। বাজারের নামকরণ করা হয় স্বাধীনতা আন্দোলনের শহিদ মাতঙ্গিনী হাজরার নামে। বাজারের দোকান ঘরগুলি বিলি করা ও দোকানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার আগেই ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে তড়িঘড়ি করে বাজারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। বিধানসভা নির্বাচনের মুখে ২০১১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই বাজারের উদ্বোধন করেন তৎকালীন রাজ্য কৃষি বিপনন পর্ষদের চেয়ারম্যান নরেন চট্টোপাধ্যায়। পরবর্তী সময়ে ওই বাজার চালু করার জন্য লটারির মাধ্যমে প্রায় ১০০ টি দোকানঘর বিলি করা হয়। কিন্তু ওই বাজারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরে চার বছর কেটে গেলেও এখনও বাজার চালু হয়নি।
সম্প্রতি বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, দোকান ঘরগুলির প্রায় সবগুলির দরজা বন্ধ। হাতেগোনা কয়েকটি স্টলে টোটো গাড়ি ও বৈদ্যুতিন সামগ্রী বিক্রির দোকান চালু রয়েছে। বেশ কিছু দোকানঘরে আগের দেওয়া হলদে রঙের উপর নীল-সাদা রঙ করা হয়েছে। বাজার চত্বর ফাঁকা। লটারির মাধ্যমে নতুন ওই বাজারে দোকানঘর পাওয়া একাধিক ব্যবসায়ী জানান, দোকানঘর তৈরি করার পরে তা তড়িঘড়ি উদ্বোধন করা হলেও দোকানে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। এছাড়াও ওই বাজারে দোকানঘর ভাড়ায় পাওয়া ব্যবসায়ীদের নিয়ে বাজার চালুর জন্য যেসব ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন ছিল তা করা হয়নি । ফলে ওই বাজারে দোকানঘর পেলেও অনেকেই আর্থিক ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসায় নামতে পারেনি।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষি বিপণন দফতরের অধীনে থাকা তমলুক রেগুলেটেড মার্কেট কমিটি ও এগরা রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির পরিবর্তে গত বছর সরকারিভাবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা রেগুলেটেড মার্কেট কমিটি গড়া হয়েছে। পদাধিকার বলে কমিটির চেয়ারম্যান পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক। বর্তমানে রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির অধীনে এগরা মহকুমার বালিঘাই ও তমলুক মহকুমার নোনাকুড়ি বাজারে দুটি মার্কেট ইয়ার্ড রয়েছে। কিন্তু খোদ জেলা সদর তমলুক শহরের বুকে ওই বিশাল বাজার গড়ার পরেও তা চালু না হওয়ায় তা থেকে সরকারি রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির কর্মীদের তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল রেগুলেটেড মার্কেট এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন। ওই সংগঠনের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি প্রদীপ সরকার বলেন, ‘‘বাজার চালু না হওয়ায় তা থেকে আয় হচ্ছে না। উপরন্তু তৈরি হওয়া দোকানঘরগুলি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। আমরা চাই তমলুকের এই বাজার দ্রুত চালুর জন্য জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নিক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy