দাঁতনের কলেজে অধ্যক্ষ নিগ্রহের অভিযোগে তিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) নেতাকে বুধবারই আটক করেছিল পুলিশ। জেরার পর তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার দাঁতন-২ ব্লকের কাশমূলী গভর্নমেন্ট জেনারেল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বাদল জানাকে নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। বুধবার বিকেলে বেলদা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন অধ্যক্ষ। বৃহস্পতিবার ধৃতদের মেদিনীপুর জেলা আদালতে তোলা হলে সাত দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়।
গত বছরই এই কলেজে পঠনপাঠন শুরু হয়েছে। এখনও কলেজে ছাত্র সংসদ তৈরি হয়নি। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, অধ্যক্ষ নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্ত টিএমসিপি-র ব্লক সভাপতি সৈকত মাইতি, ব্লক কার্যকরী সভাপতি বিপ্লব বেরা, সংগঠনের কলেজ ইউনিট সভাপতি অনিমেষ দাস কেউই ওই কলেজের ছাত্র নন। যদিও কলেজে তাঁদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল বলে অভিযোগ। এ নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে তাঁদের বিরোধও চলছিল। সৈকত জেলা পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরির অনুগামী হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
এখন কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রী ভর্তির প্রক্রিয়া চলছে। অভিযোগ, সম্প্রতি সৈকতের অনুগামী হিসেবে পরিচিত ছাত্রদের একাংশ প্রথম বর্ষে দশটি আসনের ভর্তির কোটা তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানায়। যদিও কোনও আসন ছাড়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার এ বিষয়ে কয়েকজন অধ্যাপক ও কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন অধ্যক্ষ। অভিযোগ, সেই সময় তিন অভিযুক্তের নেতৃত্বে কলেজ ছাত্রদের একাংশ অধ্যক্ষের ঘরে ঢুকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। অধ্যক্ষকে মারধর ও গালিগালাজ করা হয় বলেও অভিযোগ।
অধ্যক্ষ বাদল জানার অভিযোগ, “ওঁরা যে ‘কোটা’ চাইছে তা নিয়মবহির্ভূত।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে যে সংখ্যক আসন রয়েছে তার তুলনায় কম আবেদন এসেছে। ওরা এখন ফাঁকা আসনে ছাত্র ভর্তি করতে চাইছে। অনলাইন ব্যবস্থায় সেটা সম্ভব নয়। এ সব বলতেই আমার ওপর চড়াও হয়।”
কলেজ পড়ুয়াদের একাংশের পাল্টা অভিযোগ, কলেজের জেনারেল (পাশ কোর্স)-এ নিয়ম বহির্ভূতভাবে পাঁচ জন ছাত্রকে ভর্তি করিয়েছেন অধ্যক্ষ। কলেজের জেনারেল (পাশ কোর্স)-এ মোট ৭০টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে দশটি আসন ফাঁকা থাকায় ফের কাউন্সেলিং করার কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। অভিযোগ, ফাঁকা আসনে ভর্তি চলাকালীন পাঁচ জন ছাত্রকে কলেজের বাইরে আটকে দেয় টিএমসিপি কর্মীরা। ফলে তাঁরা ভর্তি হতে পারেননি। তাঁদের জায়গায় অন্য পড়ুয়ারা ভর্তি হয়ে যান। পরে তাঁরা অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ জানান।
অধ্যক্ষ বাদলবাবু বলেন, ‘‘ওই ছাত্রদের অভিযোগ পেয়ে কলেজের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখি। ফুটেজ দেখে বুঝতে পারি, অভিযোগ সত্য।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সেই সময় কলেজের পাশ কোর্সে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তাই ওই ছাত্রদের ভর্তি করতে পাশ কোর্সের আসন বাড়ানোর জন্য বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম।’’ তিনি বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাশ কোর্সে পাঁচটি আসন বাড়ানোর অনুমতি দেন। ওই আসনে নিয়ম মেনেই তাঁদের ভর্তি করার ব্যবস্থা করেছি।’’
অধ্যক্ষ নিগ্রহের অভিযোগ মানতে নারাজ শৈবালবাবু। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ওই অধ্যক্ষ দুর্নীতি পরায়ণ। ছাত্রদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। পুলিশের উচ্চ মহলে এ কথা জানিয়েছি। সকলে সে কথা বুঝতেও পেরেছেন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমার ধারণা, টিএমসিপি-র রাজ্য সভানেত্রীর কাছে কোনও ভাবে ভুল বার্তা গিয়েছে।”
যদিও টিএমসিপি-র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভানেত্রী দেবলীনা নন্দী বলেন, “ওরা তিন জন সত্যি অধ্যক্ষের ওপর চড়াও হয়ে থাকেন, তবে তা ঠিক হয়নি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy