Advertisement
০২ মে ২০২৪

দৃষ্টিহীনদের ‘আলো’র দিশারী দুই কলেজ ছাত্র

দৃষ্টিহীনদের জন্য ‘টর্চ’! আলো না ছড়ালেও চলার পথে দিশা দেখাবে। সামনে বাধা থাকলে হবে ‘বিপ বিপ’ শব্দ। বাধা যত এগিয়ে আসবে, শব্দ বাড়বে। যাঁর হাতে ওই টর্চ থাকবে, কিনি কম্পনও (ভাইব্রেশন) অনুভব করবেন।

তাক-লাগানো: নিজেদের তৈরি ‘ব্লাইন্ড টর্চ’ হাতে (বাঁ দিক থেকে) মণীশ ও আকাশ। পুরস্কার হাতে পাশে শিক্ষক দীপক পাত্র। নিজস্ব চিত্র

তাক-লাগানো: নিজেদের তৈরি ‘ব্লাইন্ড টর্চ’ হাতে (বাঁ দিক থেকে) মণীশ ও আকাশ। পুরস্কার হাতে পাশে শিক্ষক দীপক পাত্র। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৭ ০০:০৫
Share: Save:

দৃষ্টিহীনদের জন্য ‘টর্চ’! আলো না ছড়ালেও চলার পথে দিশা দেখাবে। সামনে বাধা থাকলে হবে ‘বিপ বিপ’ শব্দ। বাধা যত এগিয়ে আসবে, শব্দ বাড়বে। যাঁর হাতে ওই টর্চ থাকবে, কিনি কম্পনও (ভাইব্রেশন) অনুভব করবেন।

এই ‘ব্লাইন্ড টর্চ’ আবিষ্কার করেছেন খড়্গপুরের হিজলি কলেজের কম্পিউটর অ্যাপ্লিকেশন (বিসিএ) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের দুই পড়ুয়া মণীশপ্রসাদ ও আকাশ শর্মা। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ছাত্র-যুব বিজ্ঞান মেলায় রাজ্যের ১৪৬ টি কলেজের মধ্যে তৃতীয় পুরস্কারও পেয়েছে দুই কলেজ পড়ুয়ার এই আবিষ্কার। কলেজ কর্তৃপক্ষকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়ার ঘোষণা করেছে রাজ্য যুব কল্যাণ দফতর। কলেজের সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির আওতায় কয়েকজন দৃষ্টিহীনকে ওই টর্চ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন কর্তৃপক্ষ।

হঠাৎ করে করে দৃষ্টিহীনদের জন্য এমন সরঞ্জাম তৈরির ভাবনা কেন?

মণীশ ও আকাশ জানালেন, প্রায়ই পথেঘাটে লাঠি হাতে একাকী দৃষ্টিহীনদের চলফেরা করতে দেখা যায়। ব্যস্ত রাস্তা পারাপারে খুবই সমস্যা হয় তাঁদের। হিজলি কলেজের কাছেই কুচলাচটি গ্রামে থাকেন বছর সত্তরের বিশু লায়েক। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় দৃষ্টি হারিয়েছেন দিনমজুর পরিবারের ওই বৃদ্ধ। কলেজ যাতায়াতের পথে আকাশরা প্রায়ই দেখতেন, লাঠি ঠুকে হাঁটছেন ওই বৃদ্ধ। তারপরই তাঁরা ঠিক করেন, দৃষ্টিহীনদের জন্য সহায়ক যন্ত্র বানাবেন। কলেজের বিসিএ বিভাগের শিক্ষক দীপককুমার পাত্র-র তত্ত্বাবধানে হার্ডঅয়্যার ল্যাব-এ সপ্তাহখানেকের পরিশ্রমে তৈরি হয় ‘ব্লাইন্ড টর্চ’। এক একটি টর্চ বানাতে খরচ পড়ছে হাজার তিনেক টাকা। বিশুবাবুকে দিয়ে এর গুণাগুণ পরীক্ষা করা হয়েছে। বিশুবাবুও মানছেন, ‘‘এমনিতেই হাঁটতে গিয়ে প্রায়ই ইট-পাথরে হোঁচট খেয়ে পড়ে চোট পাই। তবে ওই ছড়ি নিয়ে হাঁটতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না।’’

কলেজের অধ্যক্ষ আশিসকুমার দণ্ডপাট বললেন, ‘‘শীঘ্রই এই আবিষ্কারের পেটেন্ট নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব। তারপর কয়েকজন দুঃস্থ দৃষ্টিহীনকে ‘ব্লাইন্ড টর্চ’ উপহার দেব।’’ অধ্যক্ষ আরও জানালেন, খড়্গপুর গ্রামীণের প্রান্তিক এলাকায় থাকা এই কলেজে ক্লাসঘর ও ল্যাবরেটরির পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। তা সত্ত্বেও আকাশ ও মণীশের এই আবিষ্কার কলেজের মুকুটে পালক গুঁজেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Torch Blind Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE