Advertisement
১১ মে ২০২৪

জল-রাস্তা নেই বৌদ্ধবিহারের গ্রামে

গুপ্ত পরবর্তী যুগের বৌদ্ধবিহার আবিষ্কৃত হওয়ার থেকেই দাঁতনের মোগলমারি একটি পরিচিত নাম। ২০০৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ছ’দফার খননকার্যে পরে এখানে মিলেছে ঐতিহাসিক নানা সামগ্রী। কখনও স্ট্যাকোর মূর্তি, কখনও মিশ্রিত ধাতুর মুদ্রা, সোনার লকেট, বিহারের ফলক।

ভোগান্তি: জল আনতে যেতে হয় দীর্ঘ পথ। নিজস্ব চিত্র

ভোগান্তি: জল আনতে যেতে হয় দীর্ঘ পথ। নিজস্ব চিত্র

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৩৫
Share: Save:

গুপ্ত পরবর্তী যুগের বৌদ্ধবিহার আবিষ্কৃত হওয়ার থেকেই দাঁতনের মোগলমারি একটি পরিচিত নাম। ২০০৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ছ’দফার খননকার্যে পরে এখানে মিলেছে ঐতিহাসিক নানা সামগ্রী। কখনও স্ট্যাকোর মূর্তি, কখনও মিশ্রিত ধাতুর মুদ্রা, সোনার লকেট, বিহারের ফলক। ইতিহাসের হাতছানিতে রোজই এখানে ভিড় জমান উৎসাহী বহু মানুষ। ভিন্‌ রাজ্য থেকেও লোকজন আসেন। অথচ ন্যূনতম প্রয়োজনের অনেক কিছুই পায়নি বৌদ্ধবিহারের গ্রাম।

রাস্তা, পথবাতি, পানীয় জল— না-এর তালিকা বেশ দীর্ঘ। মনোহরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে মোগলমারি ও জয়রামপুর গ্রামে রয়েছে বৌদ্ধবিহার। গত বছর অগস্টে জাতীয় সড়ক থেকে বৌদ্ধবিহার পর্যন্ত সাংসদ সন্ধ্যা রায়ের তহবিলের টাকায় কংক্রিটের রাস্তা হয়েছে। আর কাজ হয়নি। জয়রামপুর পর্যন্ত মোরামের রাস্তা আজও বেহাল। স্থানীয় তরুণ সঙ্ঘ ক্লাব প্রাঙ্গণে আলোর ব্যবস্থা থাকলেও এলাকার কোথাও পথবাতি নেই। জাতীয় সড়ক থেকে বৌদ্ধবিহার হয়ে জয়রামপুর পর্যন্ত রাস্তা সন্ধে নামলেই অন্ধকারে ডুবে যায়। গরমে রয়েছে জল সঙ্কটও। সরকারিভাবে গ্রামে কোনও নলবাহিত পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়নি। একমাত্র ভরসা টিউবওয়েল। কিন্তু গরমে জলস্তর নেমে গেলে তাও নির্জলা হয়ে পড়ে।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, শুধু সখীসেনা ঢিবির বৌদ্ধবিহার নয়, মোগলমারি ও জয়রামপুরের যে কোনও জায়গাতেই মাটি খুঁড়লে বেরিয়ে আসে পুরাতাত্ত্বিক নানা সামগ্রী। সে সব দেখতে ২০১২ সালের পর থেকেই বাইরের লোকেদের আনাগোনা বাড়ছিল। ২০১৩সালে দ্বিতীয় দফার খননে গুপ্ত পরবর্তী যুগের মিশ্রিত ধাতুর মুদ্রা, সোনার লকেট ও বৌদ্ধবিহারের একটি ফলক উদ্ধার হওয়ার পরে এলাকার গুরুত্ব আরও বেড়ে গিয়েছে। রাজ্য তো বটেই, দেশের নানা প্রান্ত, এমনকী জাপানের পর্যটকরাও গ্রামে এসেছেন।

এমন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সামান্য পরিষেবাও না থাকায় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ। মোগলমারি গ্রামের সঞ্জয় দাস বলছিলেন, “আমাদের এই গ্রামের কথা এখন দেশ-বিদেশের বহু মানুষ জানে। কত মানুষ প্রতিদিন আসে। রাতে একটা থাকার জায়গা খোঁজে। কিন্তু তা নেই। তার থেকেও বড় কথা গ্রামের রাস্তায় আলো নেই, জল নেই। এই সমস্যা মেটানো প্রয়োজন।” জয়রামপুরের গৃহবধূ চম্পা রাউতের আবার বক্তব্য, “গ্রামে এসে বাইরের লোকজন টিউবওয়েল থেকে কষ্ট করে জল খান। গরমে তো আমাদেরও দূর-দূরান্ত থেকে জল আনতে হয়। রাস্তা বেহাল, পথবাতি নেই। জনপ্রতিনিধিদের এ সব দিকে নজর দেওয়া উচিত।”

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সকলেই সমস্যা জানেন। তাও কেন এতদিনে এলাকার উন্নয়ন হয়নি তার সদুত্তর অবশ্য দিতে পারেননি মনোহরপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সবিতা মাইতি। শুধু তাঁর আশ্বাস, “মোগলমারি ও জয়রামপুর এলাকার আলোর ব্যবস্থা করব। রাস্তার বাকি অংশের কাজও করা হবে। আর জলের জন্য সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পাশের গ্রাম পঞ্চয়েত তররুইয়ে একটি জলপ্রকল্প গড়ে জলের ব্যবস্থা করা হবে।” পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অঞ্জলি বারিও সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, “পুরাতাত্ত্বিক গুরুত্বের বিচারে সত্যি ওই এলাকার উন্নয়ন প্রয়োজন। আমরা অবশ্যই এলাকায় পানীয় জল, পথবাতি ও রাস্তার কাজ করব।” সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন বিধায়ক তথা তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বিক্রম প্রধান।

আশ্বাস রক্ষা হয় কিনা, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Moghalmari Water Crisis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE