পাশে: চিনা নাবিককে নিয়ে যাচ্ছে উপকূলরক্ষী বাহিনী। নিজস্ব চিত্র
এ শহরে তাঁর দেশোয়ালি ভাই-বোনেরা আছেন। তাঁদের নামে রয়েছে একটি ‘টাউন’ও। কিন্তু সেই কলকাতায় এসেই বিপাকে পড়েছেন বছর ছেচল্লিশের শিয়া জিয়ানটিং। তলপেট ফেটে যাচ্ছে যন্ত্রণায়, ঘনঘন বমিও হচ্ছে। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছেন না তিনি।
মুখ খুললেও অবশ্য কোনও লাভ হবে না। কারণ, কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সেরা চিনা ভাষা বোঝেন না। বাংলা তো দূর অস্ত, কথা চালানোর মতো ইংরেজির জ্ঞান নেই চিনা নাবিক শিয়ার। হাসপাতাল সূত্রের খবর, উপসর্গ দেখে শিয়ার চিকিৎসা শুরু হয়েছে বটে। কিন্তু দোভাষী ছা়ড়া বিস্তারিত কথা জানা যাচ্ছে না। ওই বেসরকারি হাসপাতালের মুখপাত্র জানান, চিনা দোভাষীর জন্য কলকাতায় সে দেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। দোভাষী পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছে দূতাবাস। কিন্তু রাত পর্যন্ত দোভাষী হাসপাতালে পৌঁছননি।
কী ভাবে এই শহরে পৌঁছলেন শিয়া?
সে এক বিপদের কাহিনী। উপকূলরক্ষী বাহিনীর মুখপাত্র ডেপুটি কম্যান্ডান্ট অভিনন্দন মিত্র বলছেন, শনিবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ পানামার একটি জাহাজ থেকে আপৎকালীন বার্তা পায় উপকূলরক্ষী বাহিনীর হলদিয়া ঘাঁটি। ওই জাহাজের কর্মী শিয়া অসুস্থ হয়ে প়ড়েছিলেন। সে সময় পানামার জাহাজটি সাগরদ্বীপ থেকে ৬৪ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণে ছিল। বার্তা মিলতেই বঙ্গোপসাগরে টহলরত ‘আইসিজিএস রাজিয়া সুলতানা’-কে পানামার জাহাজটির দিকে পাঠানো হয়। রাজিয়া সুলতানার কর্মী-অফিসারেরা শিয়ার জাহাজে পৌঁছে তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা করেন। কিছুটা স্থিতিশীল হলে তাঁকে উপকূলরক্ষী বাহিনীর জাহাজে নিয়ে নিয়ে আসা হয়। এর রাজিয়া সুলতানা হলদিয়ার দিকে রওনা দেয়।
এই উদ্ধারকাণ্ডের পরে উপকূলরক্ষী বাহিনীর কর্তাদের অনেকেই বলছেন, চিনের সঙ্গে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক বিরোধ থাকতে পারে। কিন্তু বিপদে পড়া যে কোনও দেশের নাগরিককে উদ্ধারে সে সব মাথায় রাখা হয় না।
উপকূলরক্ষী বাহিনী জানায়, রাজিয়া সুলতানা থেকে শিয়াকে তড়িঘ়ড়ি হলদিয়ায় আনতে ছোট মাপের একটি দ্রুতগতির জলযানকে পাঠানো হয়। তাতে ডাক্তারেরাও ছিলেন। সেই জলযানে চাপিয়েই রবিবার বেলা এগারোটা নাগাদ হলদিয়ায় নিয়ে আসা হয় শিয়াকে। তত ক্ষণে কিছু়টা সুস্থ হয়েছেন শিয়া। উপকূলরক্ষী বাহিনীর চিকিৎসকেরা ভেবেছিলেন, ভাঙা ভাঙা ইংরেজি হলেও কথা বলা যাবে। কিন্তু সেই আশা ভেস্তে যায় প্রশ্ন করতেই। প্রশ্নের উত্তরে মোবাইল খুলে চিনা অক্ষর দেখাতে থাকেন তিনি, তার পর এক মহিলার ছবিও দেখান। তার পর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করেন। শিয়াকে উদ্ধারকারী উপকূলরক্ষী বাহিনীর চিকিৎসক পি নিখিল বলছেন, ‘‘কোনও মতে ইশারায় নিজের সমস্যা বুঝিয়েছেন। কিন্তু ইঞ্জেকশন দেখেই সে কি কান্না! কিছুতেই সুঁচ ফোটাতে দেবেন না!’’
হলদিয়ায় উপকূলরক্ষী বাহিনীর কম্যান্ডিং অফিসার মুদিতকুমার সিংহ বলছেন, ‘‘হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অ্যাম্বুল্যান্সেও উঠতে চাইছিলেন না। কোনও মতে বুঝিয়ে রাজি করানো হয়েছে। শিয়াকে জাহাজ সংস্থার এজেন্টের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’’ পানামার জাহাজ সংস্থার এ দেশের এজেন্ট মানস সিংহ হলদিয়ায় হাজির হয়েছিলেন শিয়া উদ্ধারে। তিনিও বলছেন, ‘‘এঁদের ভাষা বোঝা খুবই মুস্কিল।’’ ওই অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে শিয়াকে প্রথমে হলদিয়া হাসপাতাল এবং সেখান থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়।
কলকাতার হাসপাতালে শুয়ে দেশে ফেরার দিন গুনছেন ‘চিনাম্যান’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy