আগুন নেভানোর কাজে ব্যস্ত দমকলের লোকজন। বৃহস্পতিবার দিঘায়। নিজস্ব চিত্র
আশঙ্কা রয়েছেই। কারণ হোটেলের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তৈরি হচ্ছে মার্কেট কংপ্লেক্স। রয়েছে সরকারি বাস টার্মিনাস। দিনে দিনে বেড়েছে পর্যটকের সংখ্যা। তাই দিঘার মতো পর্যটনকেন্দ্রে দমকল কেন্দ্রের দাবি দীর্ঘদিনের।
কয়েক বছর আগে দিঘার পরিবর্তে ওই দমকল কেন্দ্র তৈরি হয় রামনগরে। তখন অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, দিঘায় না হয়ে রামনগরে দমকল কেন্দ্র হওয়ার জন্য। তাঁদের যুক্তি, দিঘায় কোনও অগ্নিকাণ্ড ঘটলে রামনগর থেকে দমকল আসতে সময় লাগবে। যদিও সে সবে তখন গুরুত্ব দেয়নি প্রশাসন। বৃহস্পতিবার দিঘায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের একটি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে দমকল ও পুলিশ বাহিনী গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় পর্যটকেরা কেউ জখম না হলেও আতঙ্কের পাশাপাশি ফের দমকলের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন কলকাতার সোদপুর থেকে সাতজন পর্যটকের একটি দল দিঘায় বেড়াতে আসে। তাঁরা ব্যারাকপুর থেকে একটি গাড়ি ভাড়া করেছিলেন। দিঘায় সায়েন্স সিটির কাছে রাস্তার পাশে গাড়িটি রেখে চালক ও পর্যটকরা বেড়াতে চলে যান। হঠাৎই সেই গাড়িতে আগুন লেগে যায়। গাড়িতে কেউ ছিলেন না। স্থানীয় লোকজন দিঘা থানায় ও দমকলে খবর দেন। পুলিশ এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। রামনগর থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের একটি ইঞ্জিন। পরে দমকল কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
গাড়ির চালক রাজেশ মন্ডল পুলিশকে জানিয়েছেন, গাড়ির ভেতর ফ্যান চলছিল। তা বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। দমকলকর্মীদের প্রাথমিক অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লাগে। গাড়ির মালিকে খবর পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে এদিনের ঘটনার পর দিঘায় দমকল কেন্দ্র বা দমকলের একটি আউট পোস্ট তৈরির দাবি আরও জোরাল হয়েছে। সেই দাবি তুলেছেন পর্যটক এবং হোটেল মালিকরা। দিঘা শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, “দিঘায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় আটশ হোটেল রয়েছে। হঠাৎ আগুন লাগলে রামনগর থেকেই দমকল আসার অপেক্ষায় থাকা ছাড়া উপায় নেই। অথচ দিঘায় দমকল কেন্দ্র হলে বা কোনও আউটপোস্ট হলে অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকা যায়।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রামনগর দমকল কেন্দ্র থেকে দিঘার দূরত্ব প্রায় সাত কিলোমিটার। সেখান থেকে দিঘায় পৌঁছতে দমকলের সময় লাগার কথা প্রায় দশ মিনিট। কিন্তু প্রশ্ন হল, রাস্তাঘাটে যানজট থাকলে বিশেষ করে উৎসব বা ছুটির মরসুমে যানবাহনের চাপ যেখানে বেশি থাকে, সেখানে দিঘায় কোনও অগ্নিকাণ্ড ঘটলে তা়ড়াতাড়ি দমকল পৌঁছনোর ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। তা ছাড়া, রামনগর দমকল কেন্দ্রে মাত্র দুটো ইঞ্জিন রয়েছে। সে দু’টি কোনও কারণে অন্যত্র কাজে গেলে সমস্যা হতে পারে। তাই দিঘায় দমকল কেন্দ্র না তৈরি করা গেলেও একটি আউটপোস্ট করে সেখানে একটি ইঞ্জিন রাখার দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন হোটেল মালিকেরা।
এদিন দমদম থেকে সপরিবার দিঘায় বেড়াতে আসা অমিত মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “দিঘা এখন আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। সারা বছরই পর্যটকের ভিড় থাকে। আগুন ছাড়াও ভূমিকম্প বা অন্য বিপর্যয়ের জন্যও এখানে দমকল কেন্দ্র জরুরি।’’
দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা এলাকার সাংসদ শিশির অধিকারী বলেন, “দিঘায় দমকল কেন্দ্রের বিষয়টি ভাল প্রস্তাব। তবে দমকল কেন্দ্র করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আছে। একটা দমকল কেন্দ্র থেকে আর একটা দমকল কেন্দ্রের দূরত্ব বিবেচনা করা হয়। তবুও দিঘায় দমকল কেন্দ্রের দাবির বিষয়টি বিবেচান করে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy