—নিজস্ব চিত্র।
হাট বসেছে মঙ্গলবারে।
বেলডাঙায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে বড়ুয়া মোড়ের সেই হাটে থিকথিক করছে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়। বিপুল হইচইয়ের মধ্যে বেশ দূর থেকে শোনা যাচ্ছে—‘নেংটি, ধেড়ে, গেছোদের দিন এ বার শেষ। আমার তৈরি এই বিশেষ বিষ নিয়ে যান। খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে দেবেন। ধ্বংস হবে ইঁদুরের বংশ। তিন প্যাকেট দশ টাকা। এক প্যাকেট কিন্তু বিক্রি নেই।’
বেলডাঙায় ইঁদুরের অত্যাচার নতুন নয়। জিনিসপত্র যাতে কেটে না দেয় সে জন্য বহু বিয়ে বাড়িতেই তত্ত্বের সঙ্গে কেনা হয় ইঁদুর মারার কল। স্বাভাবিক ভাবেই এমন ইঁদুর-বিরোধী প্রচার লোকও টানছে বেশ। কাছে গেলে অপেক্ষা করছে আরও চমক। বিষ-বিক্রেতার এক হাতে টাকা ও বিষের প্যাকেট। অন্য হাতে একটি কাঠের দণ্ড। সেখানে ঝুলছে নানা জাতের ১৭টি মরা ইঁদুর!
বিষ বিক্রি করতে মরা ইঁদুর নিয়ে আসতে হচ্ছে? মিটিমিটি হাসছেন বছর আটত্রিশের উত্তম সাহা, ‘‘কম্পিটিশন দাদা কম্পিটিশন! আজকাল হাতে গরম প্রমাণ ছাড়া কেউ কিছু বিশ্বাস করতে চায় না। আর এতে কাজও হচ্ছে বেশ।’’ কাজ যে হচ্ছে তা অবশ্য ভিড় দেখেই মালুম হয়। বেলডাঙার ফজল শেখ জানতে চাইলেন, ‘‘আমার বাড়ি মাঠের পাশে। মেঠো ইঁদুরের বড় উৎপাত। এ বিষে তারা মরবে তো?’’ একগাল হেসে নদিয়ার তাহেরপুরের বাসিন্দা উত্তম বলছেন, ‘‘আলবত! আপনি যে ইঁদুরের কথা বলছেন, ওই যে, সে জিনিসও টাঙানো আছে। কিন্তু হ্যাঁ, খেয়াল রাখতে হবে, ইঁদুর যেন এ বিষ খায়।’’ হাটে আসা আর এক ক্রেতা রতন বিশ্বাস আবার কিন্তু কিন্তু করছেন, ‘‘মরা ইঁদুর দেখে নিয়ে নিলাম। দেখি, কী হয়!’’
উত্তম জানান, এক বন্ধুর পরামর্শে তিনি এই ব্যবসায় নেমে পড়েন। বিষও নিজেই তৈরি করেন। কিন্তু তৈরির কৌশল বলতে নারাজ। শুধু বলছেন, ‘‘কুচো নিমকি, শুঁটকি মাছ আর বিশেষ কিছু জিনিসপত্র দিয়ে এ বিষ তৈরি করতে হয়। আর এই যে ইঁদুরগুলো দেখছেন, এগুলো সব আমার বিষের কেরামতি।’’
নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের হাটে ঘুরে ঘুরে প্রায় বিশ বছর ধরে এই বিষ বিক্রি করছেন উত্তম। সারাদিনে প্রায় হাজার টাকার বিক্রি হয়। উৎসবে-পরবে বিক্রি বাড়ে। হাটশেষে ঘরে ফিরতে ফিরতে উত্তম বলছেন, ‘‘এ যুগে তো সবই ভেজাল। কিন্তু বিশ্বাস করুন, এই বিষটা কিন্তু ষোলো আনাই খাঁটি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy