Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

পয়সা নেই, মহান্তবাবু  তো আছেন

দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা অনিলকৃষ্ণকে দেখাতে আগের রাত থেকেই হাসপাতালে চলে আসেন। ঘুমোন হাসপাতালের মেঝেতে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কল্লোল প্রামাণিক
নাজিরপুর শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

হাসপাতাল। কিন্তু, সরকারি নয়। আবার বেসরকারিও বলা যাবে না। তিনি বলেন, ‘‘এই হাসপাতাল সকলের। আর তাই এর কোনও সরকার নেই।’’

তিনি, মানে অনিলকৃষ্ণ মহান্ত। পেশায় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে তিনি তৈরি করে ফেলেছেন আস্ত একটি হাসপাতাল তৈরি করে ফেলেছেন তেহট্টের নাজিরপুরে। নিজের সংগৃহীত অর্থের সঙ্গে যেহেতু গ্রামের বাসিন্দাদের দানও রয়েছে, তাই এই হাসপাতাল সকলের বলে মনে করেন ডাক্তারবাবু।

দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা অনিলকৃষ্ণকে দেখাতে আগের রাত থেকেই হাসপাতালে চলে আসেন। ঘুমোন হাসপাতালের মেঝেতে।

তেহট্টের বেতাইয়ের আদি বাসিন্দা অনিলকৃষ্ণ। কিন্তু, তাঁর কেন হাসপাতাল গড়ার সাধ হল? ডাক্তারবাবু বলছেন, “খুব ছোটবেলায় টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় বেশ কয়েকজন প্রতিবেশীর মৃত্যু দেখেছিলাম। আমাদের সংসারেও ছিল চরম অনটন। সেদিন থেকেই এমন একটা চিকিৎসালয় তৈরি করা ছিল আমার স্বপ্ন।’’

কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজ থেকে পাশ করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করেন অনিলকৃষ্ণ। ১৯৮৮ সালে পুরুলিয়ার মানবাজার ব্লক হাসপাতালের সরকারি চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৯২ সালে ফের নিজের এলাকায় ফেরা। করিমপুর হাসাপাতলের সুপার হয়। তার দু’বছর পরে ১৯৯৪ সালে নাজিরপুরে বিনামুল্যে চিকিৎসা শুরু করেন তিনি। তাঁর ইচ্ছার কথা জানতে পেরে এগিয়ে আসেন গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামের বাসিন্দাদের দান করা জমিতে ভিক্ষার অর্থে তৈরি করেন এই হাসপাতাল। বর্তমানে তিনি কল্যাণী গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসক।

সপ্তাহের প্রতি শনিবার সন্ধ্যা থেকেই রোগীরা ভিড় করেন নাজিরপুরের মহান্তর হাসপাতালে। শনিবার রাত থেকেই ডাক্তারবাবু তাঁদের চিকিৎসা শুরু করেন। রবিবারে রোগীর সংখ্যা দু’শো ছাড়িয়ে যায়। ডাক্তারবাবুর এমন কাজে সঙ্গী হয়েছেন ২১জন কর্মী। যারা ডাক্তারবাবুর সঙ্গে বিনা পারিশ্রমিকে রোগীদের সেবা করেন। তারা বলেন, “হাসপাতালের উন্নতির জন্য প্রতি ডিসেম্বর মাসে ছুটি নিয়ে ডাক্তারবাবু বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষা করেন। ভিক্ষায় নগদ অর্থের সঙ্গে পাওয়া চাল-ডাল দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের খাওয়ানো হয়। সপ্তাহের সোম, বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবারে চোখের চিকিৎসা হয়। সাধারণ অস্ত্রোপচারের পাশাপাশি চোখের অপারেশনের যাবতীয় ব্যবস্থা করা রয়েছে এখানে।’’ এলাকার বাসিন্দারা ‘‘বলছেন, গরীব রোগীদের ডাক্তারবাবু গাড়ি ভাড়া পর্যন্ত পকেট থেকে দেন।’’

৫৯ বছররে ডাক্তারবাবু বলছেন, ‘‘চাকরি শেষ হলে পুরো সময় ধরে মানুষের সেবা করতে চাই।’’ একই সঙ্গে নিজের শেষ ইচ্ছার কথাটাও জানাতে ভুললেন না। বললেন, ‘‘এই হাসপাতালের বেডে শুয়েই যেন শেষবার চোখ বুজতে পারি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE