ভেঙে গিয়েছে রেলিং। বিপদ ঘটতে পারে যখন তখন। বহরমপুরে রামেন্দ্রসুন্দর সেতু। —নিজস্ব চিত্র।
১২ কিলোমিটারের মতো দূরত্ব হবে দু’টির মধ্যে। দৌলতাবাদের ভান্ডারদহ বিলের বালিরঘাট সেতু আর বহরমপুর শহরের এক প্রান্ত ঘেঁষে ভাগীরথী নদীর উপর তৈরি রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী সেতু।
ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৩ জনের মৃত্যুর টাটকা স্মৃতি গভীর ক্ষত হয়ে চেপে বসেছে বালিরঘাট সেতুর শরীরে। আর তার সূত্র ধরেই স্থানীয় মানুষ এখন প্রমাদ গুনছে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী সেতুকে নিয়ে। না-জানি কখন একই রকম ঘটনার সাক্ষী হতে হয় বহরমপুরের এই অর্ধশতক পার করা সেতুকে। আশঙ্কা যে একেবারে ভিত্তিহীন— এমন দাবি এলাকার প্রশাসনিক কর্তা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা কেউই করতে পারছেন না। কারণ, সেতুর জরাজীর্ণ দশা প্রকট। কিছু জায়গায় তা এতটাই ভাঙাচোরা যে, একটু অসতর্ক হলেই বাস বা গাড়ি উল্টে দুর্ঘটনা অবধারিত। অথচ দীর্ঘ কালের অভিযোগ, সেতু সারানোর ব্যাপারে আশ্চর্য নির্লিপ্তি রয়েছে সর্ব স্তরেই। স্থানীয় বাসিন্দারাই এখন প্রশ্ন তুলছেন, আরও একটা দুর্ঘটনা না ঘটলে কি প্রশাসন সেতু সারানোর তাগিদ অনুভব করবে না?
ভয়াবহ দুর্ঘটনার ইতিহাস কিন্তু রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী সেতুরও রয়েছে। ১৯৯৯ সালের ৫ মে কলকাতা থেকে মালদহগামী সরকারি বাস গভীর রাতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর রেলিং ভেঙে পড়ে যায় ভাগীরথীতে। মারা যান ২৬ জন। সে বারও অভিযোগ উঠেছিল যে, এবড়ো খেবড়ো সেতুতে রাতের অন্ধকারে চালক গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এতগুলি মানুষের প্রাণের বিনিময়ে সেতু সারানো হয়নি। অথচ, অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু উত্তরবঙ্গ তথা উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। উত্তর বঙ্গের ‘প্রবেশ পথ’ হিসাবে পরিচিত ২৮০ মিটার দীর্ঘ সেতু দিয়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক লোক যাতায়াত করে।
সেতু তো নয়, যেন মরণ ফাঁদ! বহরমপুর শহরের দিকে সেতুর দু’পাশের ফুটপাথে ৩৬টি জায়গার ‘স্ল্যাব’ ভাঙাচোরা। কিছু জায়গায় ভাঙা অংশ দিয়ে নীচে স্রোত দেখা যায়! নবগ্রামের মেহেদিপুর থেকে বহরমপুরে বলরামপুর-সুন্দরপুর পথে প্রায় ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ও রামেন্দ্রসুন্দর সেতু সংস্কারের বিন্দুমাত্র কাজ হয়নি। সেতু ও সড়কের ওই অংশের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে এনএইচএআই-এর মালদহ বিভাগ। তার প্রকল্প অধিকর্তা ডি কে হানসারিয়া বলেন, ‘‘রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী সেতুর ফুটপাথের ভারবহনের নির্দিষ্ট ক্ষমতা আছে। কিন্তু ফুটপাথ দিয়ে মোটরবাইক চলায় স্ল্যাব ভেঙে যায়। সেটা বন্ধ না-হলে স্ল্যাব সংস্কার করে লাভ কি?’’ অথচ, মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের দাবি, ‘‘সেতুতে সিভিক ভল্যান্টিয়ারেরা থাকেন। ফলে কোনও মোটরবাইক ফুটপাথে ওঠে না।’’ রাস্তার যাত্রীরা পুলিশ সুপারের কথায় বিস্মিত। এক জন বলেই ফেললেন, ‘‘কালই তো আমি সেতুর ফুটপাথে মোটরবাইক চালিয়েছি।’’ জেলার এক বেসরকারি বাস মালিক সংস্থার কর্তা তপন অধিকারীর বক্তব্য, ‘‘কাজ না করার জন্য অজুহাত দিচ্ছেন প্রশাসনিক কর্তারা। সেতু ভেঙে বালিরঘাটের মতো অসংখ্য প্রাণহানি হলে কর্তাদের টনক নড়বে, তার আগে নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy