Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
মাদক ব্যবসায় জড়িয়েছে একাধিক মহিলা, তাদের হাত ধরেই ঢুকছে লক্ষ টাকার হেরোইন

স্বামী জেলে, কারবার সামলাচ্ছে মুখচোরা সুফিয়া

মুখচোরা গৃহিণী থেকে খতরনাক মাদক পাচারকারী—কী ভাবে সম্ভব হয়েছিল এই আমূল রূপান্তর, তা জানাচ্ছিলেন ডোমকলের পুলিশ কর্মীরা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুজাউদ্দিন
ডোমকল শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৬
Share: Save:

অন্ধকারে তীব্র গতিতে মোটরবাইকটি মিলিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পিছনে বসা আরোহিণীকে চিনতে ভুল হয়নি পুলিশের। সুফিয়া বিবি। ডোমকলের খিদিরপাড়া অঞ্চলে হেরোইনের কারবারের মধ্যমণি। মঙ্গলবার রাতে ডোমকলের হিতানপুরে রাজ্য সড়কে ফাঁদ পেতেছিল পুলিশ। সেখানে আটক একটি মোটরবাইক থেকে প্রায় দু’কেজি হেরোইন পাওয়া যায়। অন্য একটি মোটরবাইকের পুলিশের হাত ফস্কে পালায় সুফিয়া। তার পর থেকেই শুরু হয়েছে তল্লাশি।

মুখচোরা গৃহিণী থেকে খতরনাক মাদক পাচারকারী—কী ভাবে সম্ভব হয়েছিল এই আমূল রূপান্তর, তা জানাচ্ছিলেন ডোমকলের পুলিশ কর্মীরা।

স্বামী মিরাজুল ইসলাম ছিল মাদক কারবারি। নিজেও নেশাগ্রস্ত। ব্যবসায় যা রোজগার হত তার সিংহভাগ বেরিয়ে যেত নেশার পিছনে। সংসার চালাতে হিমশিম খেত সুফিয়া। তার মধ্যে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়। মাস তিনেক আগে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় মিরাজুল। পরিবারের পেট চালানোর পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে সুফিয়ার উপর। এক পুলিশ কর্মীর বক্তব্য, ‘‘লেখাপড়া তেমন জানা নেই, অন্য কাজের প্রশিক্ষণ নেই, এইরকম অবস্থায় খুব সহজে মাদকের কারবারে ঢুকে পড়ে সুফিয়ার মতো মহিলারা। কারণ, স্বামীদের সূত্রে এই কারবারে কিছু পরিচিতি এদের তৈরি হয়ে থাকে। কাজের ধরন সম্পর্কে একটা ধারণা থাকে। কাজ শুরু করা সহজ হয়। অভাবের তাড়নায় সুফিয়ারা অপরাধ দুনিয়ায় সামিল হয়ে যায়।’’

মোটরবাইক চালাচ্ছে এক জন, পিছনে কোমরে আঁচল গুঁজে বসে রয়েছে সুফিয়া—দৃশ্যটা যথেষ্ট পরিচিত ডোমকলের খিদিরপাড়া এলাকায়। মাদকের ব্যবসার সঙ্গে তার যোগাযোগের কথা এলাকায় প্রায় কারোরই অজানা নয়। একাধিক বার পুলিশের হাতে পড়তে-পড়তে বেঁচেছে, মঙ্গলবারও পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়েছে সে। এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘মহিলা অত্যন্ত বুদ্ধিমতী আর সাহসী। মিরাজুলের পুরনো ডেরা মালদহ থেকে হেরোইন এনে সে এলাকায় এবং ভিন্ রাজ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে।’’ স্বামীকে ছাড়ানোর মামলা চালানোর যাবতীয় খরচ জোগাড় করছে সুফিয়া। মিরাজুলের পুরনো কয়েক জন সাগরেদ এ ব্যাপারে তাকে সাহায্য করছে বলে পুলিশের কাছে খবর। খিদিরপাড়া বাসিন্দাদের একাংশ আবার বলছেন, স্বামী জেলে যাওয়ার পরে নয়, তার আগে থাকতেই সুফিয়া ধান্দায় হাত পাকিয়েছিল। পুলিশের চোখে ধুলো দিতেই তাকে ব্যবহার করত মিরাজুল।

শুধু সুফিয়া বিবি নয়, পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী, মহকুমা শহর ও গ্রামের একাধিক মহিলা এখন জড়িয়েছে মাদক ব্যবসায়। তাদের হাত ধরেই ঢুকছে লক্ষ-লক্ষ টাকার হেরোইন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এদের গল্পটা এক। স্বামী মাদক-পাচারকারী। কিছু ক্ষেত্রে তারাই ব্যবসায় নামাচ্ছে স্ত্রী-কে। কারণ, মেয়েরা পুলিশের সন্দেহের তালিকায় তুলনায় কম থাকে, ধরপাকড় কম হয়। মেয়েদের শাড়ি, সালোয়ার কামিজ বা বোরখা-র আড়ালে মাদক পাচার করতেও সুবিধা হয়। মহিলাদের তল্লাশি বা গ্রেফতারির জন্য মহিলা পুলিশ দরকার হয়, সেই পরিকাঠামো সব সময় থাকে না বলে অভিযান চালানো মুশকিল হয়। সেই সুযোগটা নেয় মহিলা পাচারকারীরা। আবার নেশাগ্রস্ত স্বামীদের হেরোইন পুরিয়ার জোগান দিতে গিয়ে বা সংসার টানতে গিয়ে এদের অনেকে মাদক ব্যবসায় আসছে। যেমন, নুরজাহান বিবি মল্লিক। তাকেও অনেকদিন ধরে খুঁজছে পুলিশ।

এই চক্রে আরও কারা জড়িত তা দেখছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drugs trafficking Women racket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE