এই পুকুরেই মজে গোটা গ্রাম। ইনসেটে উদ্ধার হওয়া শেল। নিজস্ব চিত্র
শেষতক গ্রামের পুরনো পুকুরের নাম-রহস্য উদ্ঘাটিত হল। তা-ও আবার নাটকীয় ভাবে!
নাম বোমা-পুকুর, আর সেই পুকুরে মাটি কাটতে গিয়ে উঠে এসেছে আস্ত একটা শেল! এত দিন যা ছিল লোকমুখের গল্পগাথা, তা হয়ে উঠেছে ‘ঐতিহাসিক সত্য’! নিস্তরঙ্গ গ্রাম্য জীবন ফুটছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের উত্তেজনা উধাও। তাতে আর কারও উৎসাহ নেই। গল্পগাছার এখন একটিই বিষয়, ‘বোমা।’ আদতে অবশ্য একে ঠিক বোমা বলা যায় না। এ হল যুদ্ধে ব্যহৃত শেল, যা বোমারু বিমান থেকে ফেলা হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষের মুখে-মুখে সেটাই ‘বোমা।’
গ্রামের বয়স্করা মাথা নেড়ে বলছেন, ‘‘শুনেছিলাম বটে বাবা-কাকার মুখে। প্লেন থেকে বোমা পড়ে ইয়া বড় গর্ত হয়েছিল মাঠে। সেখানে জল জমে হল পুকুর। লোকে বলত, বোমাপড়া পুকুর। সেখান থেকে ছোট করে বোমা পুকুর। অনেকেই একে নিছক গল্প মনে করত। সত্যিকারের বোমা মিলবে এত দিন পড়ে
স্বপ্নেও ভাবিনি।’’
কোথাকার বোমা, কী করে এল—সেই জট খুলতে সোমবার সকাল থেকেই ব্যস্ত ছিল সেনাবাহিনী ও পুলিশ। ছোটচুপড়িয়া গ্রামে যৌথ ভাবে তদন্ত শুরু করেছে তারা। এসেছেন সেনাবাহিনীর বোমা-বিশেষজ্ঞ কর্ণেল হিমাংশু রেড্ডি।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ১৯৪৫ সালে একটি যুদ্ধবিমান গ্রামের খুব নীচ দিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকটি শেল নামিয়ে দিয়ে গিয়েছিল ছোটচুপড়িয়ার মাঠে। পরে সেনাবাহিনীর লোক শেলগুলি উদ্ধার করে নিয়ে যান। তার মধ্যে একটি শেল তাঁরা মাঠেই ফাটিয়েছিলেন। বিস্ফোরণের অভিঘাতে মাঠে প্রায় পাঁচ কাঠা জুড়ে গর্ত তৈরি হয়। গর্তে জল জমে হয় পুকুর।
শেলের গায়ে ইংরেজি হরফে লেখা তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, ১৯৪৩ সালের অক্টোবরে আমেরিকায় তৈরি। ওজন পাঁচশো ঊনপঞ্চাশ পাউন্ড। প্রশ্ন উঠেছে, ভারত ছিল ব্রিটিশ কলোনি। সেখানে মিত্রশক্তি আমেরিকা শেল ফেলতে যাবে কেন? একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে যে, শেল ফেলা আর শেল নামিয়ে দেওয়া এক নয়। পায়রাডাঙায় সেনাশিবির ছিল। সম্ভবত সেখানে শেলগুলি নামাতে চেয়েছিল আমেরিকার যুদ্ধবিমান। আবার গ্রামের কিছু প্রবীণ মানুষ জানিয়েছেন, একটি যুদ্ধবিমান গ্রামের কাছে ভেঙে পড়েছিল। তার সঙ্গে শেলের যোগ থাকতে পারে। পুলিশও জানতে পেরেছে, ওই সময় বগুলায় একটি বিমান ভেঙে পড়েছিল। তার সঙ্গে এই বোমার কোনও যোগ আছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy