Advertisement
১৬ মে ২০২৪

‘দোষী’ পুলিশের শাস্তি চাইছেন ইন্দ্রনীলের মা

মৃত্যুর আগে আ্যাম্বুল্যান্সে মায়ের কোলে মাথা রেখে ইন্দ্রনীল বলেছিল, ‘‘মা, দেখো ওরা যেন শাস্তি পায়!’’ এটাই ছিল তার মায়ের সঙ্গে শেষ কথা। বলা ভাল, শেষ চাওয়া। ছেলের এই চাওয়া কবে পূরণ হয়, রোজ তার প্রতীক্ষা করেছেন ইলোরা রায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:০৫
Share: Save:

মৃত্যুর আগে আ্যাম্বুল্যান্সে মায়ের কোলে মাথা রেখে ইন্দ্রনীল বলেছিল, ‘‘মা, দেখো ওরা যেন শাস্তি পায়!’’

এটাই ছিল তার মায়ের সঙ্গে শেষ কথা। বলা ভাল, শেষ চাওয়া। ছেলের এই চাওয়া কবে পূরণ হয়, রোজ তার প্রতীক্ষা করেছেন ইলোরা রায়। প্রতি মুহুর্তে বিশ্বাস করেছেন, ‘‘পুলিশ ঠিক আমার ছেলের খুনিদের শাস্তি দেবে।’’ বলেছেন, ‘‘পুলিশেরও তো সন্তান‌ আছে। তাদের ছেলেমেয়েরাও তো রাস্তায় বেরোয়।’’

সুবিচার পাওয়ার জন্য পুলিশের উপরে বড্ড ভরসা করেছিলেন তিনি। কারণ, ‘‘এ ছাড়া তো আর আমার কিছু করার নেই।’’ সেই বিশ্বাস তাঁর চুরমার হয়ে গিয়েছে।

২০১৪ সালের অগস্টে কৃষ্ণনগরে দুষ্কৃতীদের লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে পেটে গুলি খেয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইন্দ্রনীল রায়। বয়স মোটে বিশ। কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথে অ্যাম্বুল্যান্সে মায়ের কোলে মাথা রেখেই মারা যান তিনি।

শুক্রবার রাতে ইলোরা দেবী প্রথম যখন স্বামীর মুখে শুনলেন, পুলিশের গাফিলতিতে দুই অভিযুক্তই বেকসুর খালাস হয়ে গিয়েছে, মাথার উপরে যেন ছাদটাই ভেঙে পড়ল তাঁর। নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। শনিবার থেমে-থেমে শুধু বললেন, ‘‘পুলিশকে এত বিশ্বাস করেছিলাম। এই তার প্রতিদান!’’

এই প্রশ্ন শুধু সন্তানহারা মায়ের একার নয়। গোটা কৃষ্ণনগর শহর রায় খবর শোনার পর থেকে একটাই প্রশ্ন করছে— কেন এমন হল? কেন পুলিশ সক্রিয় হল না? বিশেষ করে ক্ষৌণীশ পার্ক এলাকার ব্যবসায়ীরা, যাঁরা গোটা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, তাঁরা প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও খুবই ক্ষুব্ধ। দুষ্কৃতীদের অত্যাচার তাঁদেরও কম সহ্য করতে হয় না। এক দোকানির কথায়, ‘‘গুন্ডাদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। ভেবেছিলাম, ওরা জেলে যাবে, আমরাও শান্তিতে থাকব। হল উল্টো। জেল থেকে বেরিয়ে ওরা আরও বেপরোয়া হয়ে যাবে। কেননা ওরা বুঝে গিয়েছে, কোনও কিছু করলেই ওদের শাস্তি হবে না।’’

ওই খুনের তদন্তে নেমে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ নিতাই-গোষ্ঠীর মিঠুন চক্রবর্তী-সহ বেশ কয়েক জনের নাম পেয়েছিল পুলিশ। প্রথমেই বিশ্বজিৎ বিশ্বাস ওরফে কেলে চিমাকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, মিঠুনই নিতাই-গোষ্ঠীর এক জনকে লক্ষ করে গুলি চালিয়েছিল। তা ফস্কে গিয়ে রিকশায় বসা ইন্দ্রনীলের পেটে গিয়ে লাগে। খুনের চার দিনের মাথায় পুলিশ মিঠুনকে গ্রেফতার করে। ওই দু’জনই খালাস হয়ে গিয়েছে।

হতাশ গলায় ইলোরাদেবী বলেন, ‘‘আমার বলার কোনও ভাষা নেই। শুধু ভাবছি, আমরা কোন সমাজে বাস করছি। এক জন নিরাপরাধ খুন হল আর অপরাধীরা বেকসুর খালাস হয়ে গেল! আমার আর্জি একটাই, যে পুলিশকর্মীদের গাফিলতিতে খুনিরা ছাড়া পেয়ে গেল তাদের যেন কঠোর সাজা হয়।’’

কৃষ্ণনগরের আইনজীবী সামসুল ইসলাম মোল্লা পুলিশের ভূমিকায় হতাশ। তিনি বলেন, ‘‘যে ভাবে বিচারক তিন পুলিশ অফিসারের গাফিলতি তুলে ধরে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, সেটাই তো বিরল। এখন দেখার, সেই নির্দেশ কতটা বাস্তবায়িত হয়।’’ কৃষ্ণনগরে বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ে ধুবুলিয়ার বেলপুকুরের বাসিন্দা বিশ্ববিজয় ভট্টাচার্যের ছেলে। তিনি বলেন, ‘‘সকালে কাগজ খুলে চমকে উঠেছি। কার ভরসায় আমরা সন্তানদের কলেজে পাঠাব? আতঙ্কে আছি।’’ পুরপ্রধান, তৃণমূলের অসীম সাহা বলেন, ‘‘কুখ্যাত দুষ্কৃতীরা ছাড়া পেলে লোকের আতঙ্কিত হওয়ারই তো কথা। পুলিশের অবশ্যই আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE