Advertisement
১০ মে ২০২৪

বাজার জমবে তো, দোলাচলে ব্যবসায়ীরা

গোটা জুলাই মাস ধরে অস্বাভাবিক বৃষ্টি। তার জেরে বানভাসি দক্ষিণবঙ্গ। বাঁধভাঙা বৃষ্টিতে ধুয়েমুছে সাফ ধানের বীজতলা থেকে শাকসব্জির আবাদি জমি। বন্যার তোড়ে নিশ্চিহ্ন কলা-পেপের, শশার মতো ফল। অন্য দিকে, বহু দিন পরে পাটের বাজারে ভাল দাম পাওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলেছে। সব মিলিয়ে বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোয় গ্রাম ও মফফসলে বাজার কতটা জমবে তা নিয়ে আশা-আশঙ্কার দোলায় দুলছেন জেলার ব্যবসায়ীরা।

পুজোর কেনাকাটা। করিমপুরে।

পুজোর কেনাকাটা। করিমপুরে।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৩১
Share: Save:

গোটা জুলাই মাস ধরে অস্বাভাবিক বৃষ্টি। তার জেরে বানভাসি দক্ষিণবঙ্গ। বাঁধভাঙা বৃষ্টিতে ধুয়েমুছে সাফ ধানের বীজতলা থেকে শাকসব্জির আবাদি জমি। বন্যার তোড়ে নিশ্চিহ্ন কলা-পেপের, শশার মতো ফল। অন্য দিকে, বহু দিন পরে পাটের বাজারে ভাল দাম পাওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলেছে। সব মিলিয়ে বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোয় গ্রাম ও মফফসলে বাজার কতটা জমবে তা নিয়ে আশা-আশঙ্কার দোলায় দুলছেন জেলার ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ী মহল এ বার পুজোর বাজারকে টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সঙ্গে তুলনা করছেন। এখনও হাতে কয়েক’টা দিন বাকি আছে। একটু একটু করে বাজারমুখো হচ্ছেন গৃহস্থ। বাড়ছে ছোট বড় দোকানের ভিড়। একটু চালিয়ে খেলতে পারলে বিরাট ব্যবধানে না হলেও জেতা অসম্ভব নয়। এমনটাই বলছেন ব্যবসারীরা।

কিন্তু কেন এই অনিশ্চয়তা?

বর্ধমানের সহকারি কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষের বিশ্লেষণ: দক্ষিণবঙ্গের চাষিরা আলু থেকে আমন, একের পর এক ফসলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সেই ক্ষতির একটা প্রভাব থাকা স্বাভাবিক। অন্য দিকে, পাটচাষিরা এ বার ভাল দাম পেয়েছেন। সাম্প্রতিক কালে সেই দাম তাঁরা পাননি। কুইন্ট্যাল প্রায় চার হাজার টাকা দরে পাট বিক্রি হয়েছে। আর পাট যেহেতু রাজ্যের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল, সেই পাটের দাম ভাল হওয়ায় চাষীরা উৎসবের মরসুমে দরাজ হাতে কেনাবেচা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ‘খদ্দের লক্ষ্মী’ ঠিক কী করবেন, তা ভেবে জেলা সদর বা মফফস্বলের ব্যবসায়ীর কপালে গভীর ভাঁজ।

বিভিন্ন জেলার চাষি থেকে কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ভিন রাজ্যে রফতানি না হওয়ায় রাজ্যের প্রচুর আলু মজুত রয়েছে। চাষিরা ভাল দাম পাচ্ছেন না বলে আলুর বন্ড বিক্রি করতে চাইছেন না। জুলাই মাসে আমন ধানের প্রথম পর্বের চাষ জলে ধুয়ে গিয়েছে। বন্যায় ভেসে যাওয়া মাঠে বোনা সম্ভব হয়নি জলদি জাতের ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং, মুলোর মতো শীতকালীন সব্জি। যার কারণে আশ্বিনের মাঝামাঝিতেও বাজারে এ বার ফসলের জোগান কম। কলা বা পেঁপেগাছ নেই বললে চলে। এই ধরনের চাষের সঙ্গে যুক্ত চাষীদের জন্য এ বার পুজোর বাজার ভাল যাওয়ার কথা নয়।

নদিয়ার উপ-কৃষি অধিকর্তা বিকাশচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, “বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কমবেশি তিরিশ শতাংশ পাটচাষি। বাকিরা কিন্তু বেশ ভাল দাম পেয়েছেন। পাশাপাশি রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অর্থ সাহায্য করেছেন। সব মিলিয়ে বাজারে ভারসাম্যের অভাব নেই।” প্রাক্তণ কৃষি আধিকারিক নিশীথ দে জানান, এ বার পাট চাষিকে অনেক দিন পরে ভাল পয়সা দিয়েছে। বন্যা বা বৃষ্টির জন্য কিছু পাট চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাকিরা ভালই লাভ করেছেন। সব মিলিয়ে পুজোর বাজার খুব খারাপ হওয়ার কথা নয়।

নদিয়ার কৃষক তারক দত্ত এ বিষয়ে সাফ জানান, যাঁরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হননি তাঁরা এ বার পাটে যথেষ্ট লাভ করেছেন। সুতরাং গ্রামের পুজোর বাজার ভালই জমবে। বর্ধমানের পারুলিয়ার কৃষক পরিমল দেবনাথ বলেন, “এ বার আমাদের জল নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। প্রায় সব জায়গায় পাট কাটা হয়ে গিয়েছে। দাম বেশ ভালই পেয়েছেন চাষিরা।”

তারই জের পড়ছে নবদ্বীপ বা কৃষ্ণনগর মতো চারপাশে গ্রাম অধ্যুষিত এলাকার বাজারে। এ সব এলাকার ক্রেতাদের বড় একটা অংশ আসেন সংলগ্ন গ্রামাঞ্চল থেকে। সেই গ্রামীণ ক্রেতার হাজিরা এ বার এখনও পর্যন্ত মাঝারি সংখ্যায় হাজির হয়েছেন। বাকিরা কেন আসছেন না, বিক্রেতাদের দুশ্চিন্তার কারণ সেটাই। তবে প্রবীণ ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, সাধারণত মহালয়ার পর থেকে গ্রামীণ ক্রেতাদের পুজোর বাজারের ভিড়টা শুরু হয়। এ বার সেই সময় এখনও আসেনি। সুতরাং চিন্তার কারণ নেই। একই কথা জানালেন নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নিরঞ্জন দাস। তার কথায়, “দুর্গাপুজো বা ইদের মতো উৎসবে সব বাঙালিকে কিছু না কিছু কিনতে হয়। সেই হিসেবে শহর বা গ্রামীণ ক্রেতাদের বাজারে আশার সময় এখনও যায়নি। তা ছাড়া যেমনটা ভেবে ছিলেন তার থেকে বেশি বাজার লেগে গিয়েছ। আরও জমবে।’’

তবে অনেকেই বলছেন, সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতির ঘা এখনও টাটকা। সবাই একটু র‍য়েসয়ে নামছেন। যাকে বলে ধরে

ব্যাট করছেন। যার প্রভাব পড়েছে পুজোর বাজারে।

শুধু এ বার বলে নয়, চিরকাল ছোটবড় সব ব্যবসায়ী আশা করেন, পুজোর মরসুমে বছরের সেরা ব্যবসাটা করবেন। কিন্তু পুজোর আগে চাষিদের হাতে নগদ টাকা আসার প্রচলিত ফর্মুলায় স্বাভাবিক ভাবেই পাটচাষির হাতে পয়সা না থাকায় পুজো বা ঈদের বাজার জমে না। তবে এ বারের উৎসব মরসুমে চাষি এবং ব্যবসায়ির আগমনী গানে খুশির সুর শোনা যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE