আমিও-পারি: যোগ দিবসে সামিল খুদেও। কৃষ্ণনগরে। —নিজস্ব চিত্র ।
যোগাসনে বসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। লখনউয়ের অম্বেডকর সভাস্থলে হাজারও মানুষের ভিড়। মোদীর পরনে সাদা টি-শার্ট এবং ঢিলেঢালা ট্রাউজার। প্রায় সকলেই এনেছেন যোগ-ম্যাট। ঝিরঝিরে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই চলছে একের পর এক যোগ।
টিনের চালের নীচে ফালি বারান্দায় বসে টিভিতে সেই যোগ দেখে বিড়বিড় করছেন বছর পঁচাশির অমলানন্দ মজুমদার—‘‘এই দ্যাখো, এটা কটিচক্রাসন, এটা অর্ধচক্রাসন, আর এই হল গিয়ে, বীরভদ্রাসন।’’ তিনি জানান, ষোলো বছরে বয়সে দেহের ডান দিক অসাড় হয়ে যেতে শুরু করে তাঁর। কোনও চিকিৎসাতেই কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাঁকে বাঁচিয়ে দিয়েছে ওই যোগ!
অথচ গাঁ-গঞ্জ-মফস্সলে যোগকেন্দ্রগুলো এখন ধুঁকছে। কোথাও শেখানোর লোকজন আছে, শেখার কেউ নেই। কোথাও ছবিটা উল্টো। কোথাও আবার দু’টোই আছে কিন্তু যোগাসনের জন্য সামান্য পরিকাঠামোটুকুও নেই। পাড়ার ক্লাবগুলো সরকারের তরফে লক্ষ লক্ষ টাকা পেলেও যোগের ভাগ্যে শুধুই যেন বিয়োগ।
অলিম্পিকে দীপা কর্মকারের ‘প্রদুনোভা ভল্ট’ থেকে যোগ ও জিমন্যাস্টিকে আগ্রহী হয়েছিলেন অনেকেই। কিছুদিনের জন্য হলেও ভিড় বেড়েছিল আটপৌরে ব্যায়ামাগারে। তারপর বেশিরভাগ জায়গায় যে কে সেই। নবদ্বীপে ‘দেহসৌষ্ঠব’ তৈরি করছে অসংখ্য কৃতি জিমন্যাস্ট। তাঁরা যোগাসন, জিমন্যাস্টিকে রাজ্য ও জাতীয়স্তরে বহু বার সেরা হয়েছে। সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান রতনলাল সাহা বলেন, “একটা সময়ে হাতেগোনা কিছু ছেলেমেয়ে শিখতে আসত। এখন আমাদের প্রতিষ্ঠানে দেড়শোর বেশি ছেলেমেয়ে আসছে। সংখ্যাটা নিয়মিত বাড়ছে।”
বহরমপুরের নতুন প্রজন্মের প্রশিক্ষক সাগর ঘোষ যেমন বলছেন, ‘‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুই বদলে যাচ্ছে। যোগও সেই সঙ্গে বদলাচ্ছে। যোগ আধুনিক হচ্ছে বলেই তার প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়ছে। প্রশিক্ষকদেরও জীবিকার নতুন পথ খুলে যাচ্ছে।” কিন্তু ১৯৪৩ সালে বহরমপুরে মানিক দাশগুপ্ত প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ ব্যায়াম মন্দিরে এখনও প্রায় নিখরচায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। একই ছবি চোঁয়াপুর রামকৃষ্ণ ইন্সটিটিউশন কিংবা জিয়াগঞ্জ, লালগোলা বা নবদ্বীপের শক্তিসমিতির মতো যোগাসন শিক্ষাকেন্দ্রের। মলিন মুখে সেখানে অনুশীলন করেন দিন আনা দিন খাওয়া ঘরের ছেলেমেয়েরা। হ্যাঁ, তাঁরাও জানেন, ২১ জুন ছিল তৃতীয় বিশ্ব যোগ দিবস! ওই পর্যন্তই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy