Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ছাউনি নেই, রোদে দাঁড়ানোই দস্তুর

সবে মেঘটা কালো হয়ে এসেছে। ঝড়টা তখনও আসব আসব করছে। দু’এক ফোঁটা বৃষ্টি পড়েছে কি পড়েনি, ঠিক তখনই ঝমঝম করে ফেসবুকে শুরু হল পোস্ট-বর্ষণ! —‘বৃষ্টি নামে মেয়েটি শেষ পর্যন্ত তাহলে সাইকেল পেল!’

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৬ ০২:৩৪
Share: Save:

শহরের বুকে তিন তিনটে বাসস্ট্যান্ড। অথচ একটাতেও যাত্রীদের মাথার উপরে ছাউনি নেই। ফলে রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে ফাঁকা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে থেকে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের।

শুধু বড় তিন বাসস্ট্যান্ডই নয়, শহরের বিভিন্ন মোড়ের ছোটখাটো বাসস্ট্যান্ডেও ছাউনির কোনও বালাই নেই। যদিও শহরের কিছু কিছু জায়গায় পুরসভার পক্ষ থেকে যাত্রী প্রতিক্ষালয় তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে আবার বাস থামে না। সব মিলিয়ে প্রতিদিন নানা কাজে সদর শহরে আসা হাজার হাজার লোকজনকে বাস ধরতে গিয়ে রোদে পুড়তে হচ্ছে।

শহরের তিনটি বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় সাড়ে ছ’শোটি বাস ছাড়ে। পুরনো বাসস্ট্যান্ড থেকে মাজদিয়া, হাঁসখালি, রানাঘাট, কালীগঞ্জ, শান্তিপুর, নবদ্বীপ সহ ৪১টি রুটের প্রায় শ’চারেক বাস ছাড়ে। নতুন ছোট বাসস্ট্যান্ড থেকে হৃদয়পুর, রানাবন্ধ, শিমুলিয়া সহ ৬টি রুটের ৬২টি বাস ছাড়ে। আর নতুন বড় বাসস্ট্যান্ড থেকে করিমপুর, পাটিকাবাড়ি, কানাইনগর, তেহট্ট রুটের প্রায় ১৮৩টি বাস ছাড়ে। বাস মালিকদের দাবি, প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় ২৩ হাজার মানুষ শহরের বাসস্ট্যান্ডগুলিতে আসেন। কিন্তু পুরসভা এত বিপুল সংখ্যক যাত্রীদের পরিষেবা দেওয়ার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করে।

নদিয়া জেলা নিত্য বাসযাত্রী সমিতির সম্পাদক প্রশান্ত দে বলেন, ‘‘প্রতিদিন এত হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করছেন। অথচ তাদের জন্য মাথার উপরে একটা ছাউনি পর্যন্ত নেই। পুরসভাকে বিষয়টি জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি।’’ পুরনো বাসস্ট্যান্ড থেকে নতুন বাসস্ট্যান্ডের দূরত্ব প্রায় দু’শো মিটার। রোদে পুড়ে লোকজনকে এক বাসস্ট্যান্ড থেকে অন্য বাসস্ট্যান্ডে যেতে হয়। তারপর সেখানে গিয়েও শান্তি নেই। বাস ধরার জন্য রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বৃষ্টি হলে দোকানের সামনে কোনওরকমে মাথা গোঁজেন লোকজন। নদিয়া জেলা বাস মালিক সমতির পক্ষে অসীম দত্ত বলেন, ‘‘যাত্রীরা প্রায় দিনই অভিযোগ করেন। আমরাও চোখের সামনে যাত্রীদের দুর্দশা দেখি। বিষয়টি পুর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।’’


একই অবস্থা কৃষ্ণনগর-করিমপুর বাসস্ট্যান্ডে।

শুধু কি বাসস্ট্যান্ড? শহরের ভিতরেও বিভিন্ন রুটের বাস ধরার যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয় খোলা আকাশের নীচে। শহরের এভি স্কুলের মোড় বা পিএলকে মৈত্র রোডের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কোনও ছাউনি নেই। আবার পুরসভার মোড়ে দু’টো যাত্রী প্রতীক্ষালয় থাকলেও বাস সেখানে না দাঁড়ায় না। আবার জেলা প্রাশাসনিক ভবনের সামনে যাত্রী প্রতীক্ষালয় থাকলেও, বাস সেখানে দাঁড়ায় না। সব মিলিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে ওঠে। পুরসভার পুরপ্রধান তৃণমূলের অসীম সাহা বলেন, ‘‘বাসস্টান্ডগুলিতে ছাউনি করলে বাস দাঁড়ানোর জায়গা কমে যাবে। শহরের ভিতরে অনেক ক্ষেত্রে জায়গায় অভাবে যাত্রী প্রতীক্ষালয় করা যায়নি।’’ অসীমবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমরা যেখানে যেখানে যাত্রী প্রতীক্ষালয় করেছি, সেগুলি আসলে বাসস্ট্যান্ড। কিন্তু সেখানে বাস না দাঁড়িয়ে অন্যত্র দাঁড়ালে তার দায় পুলিশের।’’ জেলার পুলিশ সুপার শিশ রাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘বিষয়টি না জেনে কোনও মন্তব্য করব না।’’

পুরসভা, বাস মালিক সমিতি যে যার মতো করে সাফাই গাইতে ব্যস্ত। এর মধ্যে যাত্রীদের চড়া রোদে দাঁড়িয়ে থাকাই যেন দস্তুর।

সুদীপ ভট্টাচার্য

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bus stand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE