Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ছাত্রী বলছে শ্লীলতাহানি,পুলিশকে জানায়নি স্কুল

নবগ্রাম সিঙ্গার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মণ্ডলই বিয়ে রোখা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জুলেখা খাতুনকে স্কুলে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়ে, নানা ভাবে সাহায্য করে সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। কিন্তু এখন অভিযুক্ত এক অস্থায়ী কর্মীকে আড়াল করার অভিযোগ উঠছে তাঁরই বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নবগ্রাম শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:০৮
Share: Save:

একাধিক ছাত্রীর কাছ থেকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ পেয়েও তা পুলিশে না জানানোয় অভিভাবক ও শিক্ষকদের একাংশের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন প্রধান শিক্ষক।

নবগ্রাম সিঙ্গার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মণ্ডলই বিয়ে রোখা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জুলেখা খাতুনকে স্কুলে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়ে, নানা ভাবে সাহায্য করে সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। কিন্তু এখন অভিযুক্ত এক অস্থায়ী কর্মীকে আড়াল করার অভিযোগ উঠছে তাঁরই বিরুদ্ধে।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত অভিযোগে জানায়, স্কুলে নানা ফাইফরমায়েশ খাটার কাজে যুক্ত অস্থায়ী কর্মী সুশান্ত হালদার তার শ্লীলতাহানি করেছে। সঞ্জয় পুলিশে জানাননি। এর কয়েক দিনের মধ্যে সপ্তম শ্রেণির আর এক ছাত্রী লিখিত ভাবে একই অভিযোগ করে। প্রধান শিক্ষক তাতেও আমল দেননি, বরং ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেই অভিযোগ।

প্রথম ছাত্রীটির অভিযোগ, সুশান্ত স্কুলের মাঠে তাকে জড়িয়ে ধরেছিল। অন্যরা খুব কিছু না বুঝলেও ছোঁয়ার ধরনেই তার বদ উদ্দেশ্য মেয়েটি টের পেয়ে যায়। তবে মাঝবয়সী সুশান্তের দাবি, ‘‘ওই ছাত্রীর সঙ্গে আমার দাদু-নাতনির সম্পর্ক। সকলের সামনেই আমি তার সঙ্গে একটু মজা করেছি।’’ তার পরেই তার প্রতিজ্ঞা, ‘‘কিন্তু ওই ভুল আর কোনও দিন হবে না।’’

প্রধান শিক্ষকের দাবি, ‘‘কোনও বড় ঘটনা নয় এটা। এর মধ্যে আমি একটা ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি। অবর বিদ্যালয় পরিদর্শককে সব জানিয়েছি। তিনি দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।’’ পুলিশে জানানো হল না কেন? স্কুল পরিচালন সমিতির দায়িত্বে থাকা প্রশাসক তথা অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভ্রপ্রকাশ ঘটক বলেন, ‘‘আমি দু’পক্ষের কথা শুনে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’’

এই টালবাহানা মানতে পারছেন না শিক্ষক-অভিভাবকদের একাংশ। স্কুলের পার্শ্বশিক্ষক রজত রায়ের দাবি, ‘‘আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় ষড়যন্ত্র দেখছেন প্রধান শিক্ষক। তিনি ওই কর্মীকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। আমরা বলেছিলাম, অভিযুক্তকে স্কুলে আসতে নিষেধ করা হোক। তিনি আমল দেননি।’’ বৃহস্পতিবার প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করে কয়েক জন অভিভাবক জানতে চান, পুলিশকে জানানো হচ্ছে না কেন? সিঙ্গার গ্রামের বাসিন্দা অক্ষয় মণ্ডলের দাবি, ‘‘উনি আমাদের কথার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। উল্টে দাদু-নাতনির সম্পর্ক বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।’’

প্রথম ছাত্রীটির বাবা-মা দুজনেই কর্মসূত্রে মুম্বইয়ে থাকেন। সে ও তার ভাই ঠাকুর্দা-ঠাকুমার কাছে থেকে পড়াশোনা করে। ছাত্রীর অভিযোগ, শুক্রবার সকালে সুশান্তর স্ত্রী ও মা সিঙ্গার গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় তাদের বাড়িতে এসেছিলেন। তার কথায়, ‘‘আমি যেন কারও কাছে মুখ না খুলি, এটা বলতেই ওঁরা এসেছিলেন। কিন্তু শুধু আমি তো নই, আমার মতো অনেক ছাত্রীর সঙ্গেই ওই কর্মী অশালীন আচরণ করেছেন।’’

মুর্শিদাবাদ জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পূরবী বিশ্বাস দে বলেন, ‘‘কেন এখনও পুলিশকে জানানো হয়নি, আমি প্রধান শিক্ষকের কাছে জবাবদিহি চাইব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Harassment Girl School Police Complaint
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE