শচীন পাল ও সুরজিৎ পাল
ব্যবধান দু’দিনের। তেহট্টের পর এ বার বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে তিন জনের প্রাণ গেল নদিয়ায়। ঘটনা আসাননগর এবং কৃষ্ণনগরের।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আসাননগরে মৃতদের নাম শচীন পাল(৫২) এবং তার ছেলে সুরজিৎ পাল (২৮)। কোতয়ালি থানা এলাকায় মৃত্যু হয়েছে সুপর্ণা মল্লিক নামে বছর ছয়েকের এক বালিকার। এমন মর্মান্তিক ঘটনায় হতবাক এলাকার বাসিন্দারা।
মঙ্গলবার সকালে তেহট্টে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল তেহট্ট কালিতলাপাড়ার বাসিন্দা সমিত মিস্ত্রির। সমিতদের বাড়ির পাশ দিয়ে ২২০ ভোল্টের বিদ্যুতের তার গিয়েছে। তার নীচেই রয়েছে একটি ফুলের গাছ। সকালে বাড়ি লাগোয়া সেই গাছে ফুল তুলতে গিয়েছিলেন সমিতের মা পার্বতীদেবী। সেই সময় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে তার গায়ে পড়ে। তাঁকে বাঁচাতে এসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন সমিতের বাবা অনিলবাবুও। অত সকালে ঘুম ভাঙেনি সমিতের। পড়শিদের আর্তনাদে তিনি তড়ঘড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। বাঁশ দিয়ে কোনও মতে তিনি অনিলবাবু ও পার্বতীদেবীকে তার থেকে সরিয়ে দেন। কিন্তু নিজে জড়িয়ে পড়েন সেই তারে। পড়শিরা ট্রান্সফর্মার থেকে বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। কিন্তু সমিতকে বাঁচানো যায়নি।
প্রায় একই ঘটনা ঘটল ভীমপুরের আসাননগরেও। বুধবার রাতের ঝড়ে পেঁপে গাছ উপড়ে পড়েছিল বিদ্যুতের তারে। তার উপরে পড়েছিল চালের টিন। বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে বাড়ির বাইরে যান শচীনবাবু। ঘর থেকে বেড়িয়ে সেই টিন তুলতে যান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতপৃষ্ট হন তিনি। তাঁর চিঞৎকার শুনে ছুটে আসেন তাঁর ছেলে সুরজিৎ। বাবাকে বাঁচাতে ঢাপিয়ে পড়েন তিনি। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তিনিও। তাঁদেক আর্ত চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে তাদের উদ্ধার করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের আসাননগর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাঁদের মৃত বলে জানিয়ে দেন।
শচীনবাবুর ভাই পরিতোষ পাল বলেন, “মেন সুইচের মূল তার ছিঁড়ে গিয়েই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল। রাতের ঝ়়ড়ে যে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যে চালের টিনের নিচে রয়েছে, তা ওরা কেউ বুঝতেই পারেনি।”
একই ভাবে মৃত্যু হয়েছে কোতোয়ালি থানার সিঙ্গারডাঙা গ্রামের বাসিন্দা সুপর্ণা মল্লিকের (৬)। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে সে বাড়ির বাইরের গাছ থেকে ফুল তুলত। বৃহস্পতিবারও গিয়েছিল। আগের রাতে ঝড়ে যে বিদ্যুতের তার ছিড়ে ফুল গাছের উপর পড়ে রয়েছে, তা লক্ষ করেনি ছোট্ট মেয়েটি। ফুল তুলতে গেলে সেই তার সুপর্ণার গায়ে জড়িয়ে যায়। তার চিৎকার শুনে ছুটে আসেন প্রতিবেশী ও পরিবারের লোকজন। বাঁশ দিয়ে বিদ্যুতের তারটিকে বিচ্ছিন্ন করে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই মৃত্যু হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy