Advertisement
১০ মে ২০২৪
কোদাল নিয়ে যায়, একশো দিনের কাম লাইগ্যাছে গেরামের রাস্তায়

কন্যাশ্রীর গুণ গাইছে গাঁয়ের বোলান

প্রচারের আলো পান না বলে অভিমানের শেষ ছিল না ওঁদের। কৃষ্ণগঞ্জের সেই বোলান শিল্পীদেরই এ বার প্রচারের মুখ করে তুলেছে রাজ্য সরকার।

প্রচারে: নবদ্বীপে বোলান শিল্পীরা। নিজস্ব চিত্র

প্রচারে: নবদ্বীপে বোলান শিল্পীরা। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৭ ০০:৪৫
Share: Save:

প্রচারের আলো পান না বলে অভিমানের শেষ ছিল না ওঁদের। কৃষ্ণগঞ্জের সেই বোলান শিল্পীদেরই এ বার প্রচারের মুখ করে তুলেছে রাজ্য সরকার। জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের হয়ে কন্যাশ্রী, খাদ্যসাথী, একশো দিনের কাজ, সংখ্যালঘু বৃত্তি, স্বাস্থ্য, কৃষির মতো বিভিন্ন সরকারি পরিকল্পনার বিষয় গ্রামে ঘুরে প্রচার করার দায়িত্ব বোলান শিল্পীদের ঘাড়ে।

ফসলহীন চৈত্রের অলস অবসর কাটাতে সেই কবে নদিয়ার কৃষক গলায় তুলে নিয়েছিল গান। অবসরের সেই গান ক্রমে বছর শেষের ‘চোত গাজনের’ প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠল। নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ, হাঁসখালি, তেহট্ট, কালীনগর, নাকাশিপাড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গাজনের সন্ন্যাসী বা ‘গাজুনে বালার’ গান, তাই এ গানের নাম বোলান বা বুলান।

শুরুতে রামায়ণ, মহাভারত থেকে কৃষ্ণলীলা বা চৈতন্যলীলা— এ সবই ছিল বোলানের বিষয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে গানও বদলেছে। বিনোদনের বোলান হয়েছে উঠেছে প্রতিবাদের গান। গ্রামজীবনের অভাব-অবিচারের কথা থেকে শুরু করে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্ব হয়ে সারদা, সিবিআই সবই উঠে এসেছে নির্ভীক গায়কের গলায়— বলছিলেন গান লেখক ও পরিচালক বুদ্ধীশ্বর ঘোষ।

আবার ভাল কাজের জন্য অকুণ্ঠ প্রশংসাও ঝরে পড়ে। অনেক আগেই শিল্পীরা গেয়েছিলেন, “শ্রমিক মেলা, কন্যাশ্রী মেলা, পেয়েছি শৌচাগার/ আমাদের মতো গরিব লোকের আর কী দরকার?’’ কিংবা ‘‘বার্ধক্যভাতার বয়ঃসীমা পঁয়ষট্টি ছিল/ এই আমলে সেই বয়েস ষাটে নেমে এল।” কিন্তু সে গান হারিয়ে গিয়েছিল কৃষ্ণগঞ্জ, পাবাখালি, কৃষ্ণপুরের মাঠেঘাটে।

ছবিটা বদলে গিয়েছে সম্প্রতি। সাজানো গাড়িতে চড়ে একের পর এক আসরে গেয়ে চলেছেন নিমাই, ভীষ্মদেব, অবনী, স্বপন বা তপন ঘোষের মতো চার পুরুষের বোলান শিল্পীরা। সঙ্গে সুফল বিশ্বাসের বাংলা ঢোল। মধ্য ষাটের নিমাই বলেন, “এই প্রথম সরকারি অনুষ্ঠানে ডাক পেলাম। এ মাসেই শাকদা, কাদাঘাটা, বার্নপুর, হরিশনগর, ট্যাংরা, কুলতলা, মহিষপুর মিলিয়ে খান দশেক আসর করে ফেলছি। জন প্রতি রোজ মিলছে ১১০০ টাকা।”

কী গাইছেন ওঁরা?

বুদ্ধিশ্বরবাবু বলেন, “কিছু গানের কথা আমাদের দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তা বোলানের প্রচলিত সুরে সাজিয়ে আমাদের নিজস্ব ঢঙে গাইছি।” এত দিন ওঁদের আক্ষেপ ছিল, সরকারি কাজে ডাক পান কেবল বাউলেরা। এখন তা ঘুচেছে।

চৈত্র চলছে। এটা বোলানের মাস। সাজানো ম্যাটাডোরে মাইক হাতে গেরুয়া পাঞ্জাবি সাদা ধুতি পরা শিল্পী গাইছেন— “ওরে ও কন্যা রে, পয়সাকড়ি লাগবে না রে লেখাপড়ার লাগি। ভুল করেও ভাবিস না তোরা যে অভাগী” কিংবা “ মালতি যায় রে যায়/ ঝুড়ি নিয়ে যায়, কোদাল নিয়ে যায়/ একশো দিনের কাম লাইগ্যাছে গেরামের রাস্তায়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kanyasree
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE