কফিনবন্দি: অরূপের দেহ পৌঁছল অভয়পুরে। নিজস্ব চিত্র
প্রথম ঝড় উঠেছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। বুধবার ‘স্যাড’, ‘কমেন্ট’, ‘শেয়ার’ ছেড়ে পথে নামল করিমপুর।
কারও হাতে মোমবাতি, কারও হাতে পোস্টার, কেউ আবার বুকে ঝুলিয়েছিলেন অরূপের ছবি। নাটনা থেকে নতিডাঙা দিনভর চলল মিছিল। যে মিছিলে পা মেলালেন আট থেকে আশি সকলেই।
বৃহস্পতিবার করিমপুরে সাপ্তাহিক বাজার বন্ধ থাকে। কিন্তু বুধবার দুপুরের পর থেকেই সমস্ত দোকানপাট বন্ধ। নিহত অরূপকে শ্রদ্ধা জানিয়েই।
অরূপ কর্মকার। বয়স ২৫। বাড়ি করিমপুরের অভয়পুরে। পান্নাদেবী কলেজ থেকে বিএ পাস করে ২০১৪-র অক্টোবরে সিআরপি-তে যোগ দেন অরূপ। প্রায় এক বছর মধ্যপ্রদেশে প্রশিক্ষণের পর প্রথম পোস্টিং ছত্তীসগঢ়ে। সোমবার সেখানেই মাওবাদীদের গুলিতে নিহত হন তরতাজা ওই যুবক। করিমপুর পথে নেমেছিল সেই অরূপের জন্যই। চোখ মুছে অরূপের দাদা অনিমেষ কর্মকার বলছেন, ‘‘আমার ভাইকে এত মানুষ ভালবাসত!’’
অরূপ একা নন, তাঁর মতো অনেকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন সীমান্ত ঘেঁষা জনপদে। যাঁরা অনেক স্বপ্ন নিয়ে চাকরিতে যোগ দেন। কিন্তু মাঝপথেই বাড়ি ফিরে আসে তাঁদের কফিনবন্দি নিথর দেহ। কেউ যুদ্ধে মারা যান, কেউ সন্ত্রাসবাদীদের হাতে, কেউ দুর্ঘটনায়, কেউ আবার সহকর্মীর গুলিতে।
যেমনটা হয়েছিল ২০১৪ সালের জুন মাসে। নাজিরপুরের তিমির অধিকারী দক্ষিণ দিনাজপুরের চোপরা সীমান্তে বিএসএফের ৫৬ ব্যাটেলিয়নে কর্মরত ছিলেন। কর্তব্যরত অবস্থায় বচসায় জড়িয়ে পড়েছিলেন সহকর্মীর সঙ্গে। বেশ কিছু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পরে সহকর্মীর ইনসাস থেকে ছিটকে এসেছিল একটার পর একটা গুলি। ঘটনাস্থলেই মারা যান ২৮ বছরের তিমির। তাঁর ভাই তন্ময় অধিকারীর অভিযোগ, ‘‘দাদার মৃত্যুর পরে সরকারের তরফে অনেক কথাই বলা হয়েছিল। কিন্তু সে কথা রাখেনি কেউ।’’ মুরুটিয়ার বারুইপুরের সিরাজ শেখও চাকরি করতেন বিএসএফে। চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরে কর্মরত অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান ৫২ বছরের সিরাজ। বাড়িতে রয়েছে স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে। স্ত্রী মর্জিনা বেওয়া বলছেন, ‘‘আর ক’দিন পরেই উনি অবসর নিতেন। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল।’’
মঙ্গলবার রাত ১১টা ২০ নাগাদ কফিনবন্দি অরূপের দেহ পৌঁছয় অভয়পুরের বাড়িতে। কয়েক হাজার মানুষ ভিড় করেছিলেন একটি বারের জন্য অরূপকে দেখতে। উপস্থিত ছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক-সহ বহু নেতা-মন্ত্রী। বাড়ি থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে পাট্টাবুকা শ্মশানে তাঁর দেহ দাহ করা হয়। প্রশাসনের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো নগদ পাঁচ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ করার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy