Advertisement
১১ মে ২০২৪
লছিমনের ধাক্কায় জখম যুবক
হোগলবেড়িয়া

রাস্তায় পড়ে রইল কাটা পা

মঙ্গলবার সকালের এমন দৃশ্য দেখে শিউরে উঠেছিল হোগলবেড়িয়ার কুচাইডাঙা। তড়িঘড়ি রায়নগরের বাসিন্দা গোপীনাথ মণ্ডল নামে ওই যুবক ও তার কাটা পা নিয়ে প্রথমে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল ও পরে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই যুবক কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

উদ্ধার: হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে। নিজস্ব চিত্র

উদ্ধার: হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে। নিজস্ব চিত্র

কল্লোল প্রামাণিক
হোগলবেড়িয়া  শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৭ ০১:৪৬
Share: Save:

রাস্তার উপরে পড়ে রয়েছে কাটা পা। রক্তে ভেজা পিচ রাস্তার উপরে ছটফট করছেন বছর সাতচল্লিশের এক যুবক। বাবার এমন অবস্থা দেখে তারস্বরে চিৎকার করছেন কলেজ প়ড়ুয়া মেয়ে। একটু দূরেই পড়ে রয়েছে ওই যুবকের মোটরবাইক।

মঙ্গলবার সকালের এমন দৃশ্য দেখে শিউরে উঠেছিল হোগলবেড়িয়ার কুচাইডাঙা। তড়িঘড়ি রায়নগরের বাসিন্দা গোপীনাথ মণ্ডল নামে ওই যুবক ও তার কাটা পা নিয়ে প্রথমে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল ও পরে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই যুবক কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপীনাথ পেশায় ঠিকা শ্রমিক। স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। বড় ছেলে গৌতম বিএ পাশ করে চাকরির খোঁজ করছেন। মেয়ে অম্বিকা করিমপুর পান্নাদেবী কলেজে বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ছোট মেয়ে অর্পিতা সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া।

এ দিন থেকেই অম্বিকার পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তাঁর পরীক্ষাকেন্দ্র বেতাই বিআর অম্বেডকর কলেজ। করিমপুর থেকে সহপাঠীদের সঙ্গেই বাসে তাঁর বেতাই যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তাঁর বাবা গোপীনাথ জানিয়েছিলেন, তিনি অম্বিকাকে মোটরবাইকে বেতাই পর্যন্ত পৌঁছে দেবেন। সেই মতোই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন বাবা ও মেয়ে।

কিছু দূর যাওয়ার পরে করিমপুর বহরমপুর রাজ্য সড়কে কুচাইডাঙা বাসস্টপের কাছে একটি লছিমন তাঁদের ধাক্কা মারে। গোপীনাথ ও অম্বিকা দু’জনেই রাস্তায় পড়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, কোনও ট্রাফিক নিয়ম না মেনেই লছিমনটি আচমকা রাস্তায় উঠে পড়তেই এমন বিপত্তি। লছিমনের ধাক্কায় গোপীনাথের হাঁটুর নীচ থেকে ডান পা কাটা পড়ে। অম্বিকার অবশ্য তেমন আঘাত লাগেনি। বাড়ির লোকজন তাঁকে বুঝিয়ে জোর করেই পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন।

গোপীনাথের ভাই গোকুল ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কোনও নিয়মের তোয়াক্কা না করে বেপরোয়া ভাবে লছিমন ছুটে বেড়ায়। মাঝেমধ্যে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটে। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করে না। দুর্ঘটনার খবর শুনে হোগলবেড়িয়া থানার পুলিশ এসে লছিমনটিকে আটক করে। তবে চালক পলাতক।

গোপীনাথ পরিবারের একমাত্র রোজগেরে লোক। গোপীনাথের ছেলে গৌতম বলছেন, ‘‘বাবার সামান্য আয়ে সংসার ও আমাদের লেখাপড়া চলে। বাজারে বিস্তর দেনাও রয়েছে। এ দিকে, চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, ওই পা আর জোড়া লাগবে না। এই অবস্থায় কী করে বাবার চিকিৎসা চালাব, কী করে সংসার চলবে, কিছুই বুঝতে পারছি না।’’

এ দিন কোনও রকমে পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরে কাঁদতে কাঁদতে অম্বিকা বলছেন, ‘‘আমি বাবাকে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু আমার কষ্টের কথা ভেবেই বাবা জোর করেই বাইক নিয়ে বেরিয়েছিল। আমি বাবার অবাধ্য হয়ে একা বেরিয়ে গেলে এমনটা ঘটত না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE