‘স্যার, আমাদের বিয়েটা তাহলে হচ্ছে তো?’
ওসির ঘরে ঢুকেই সটান প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়েছিল বছর চব্বিশের নইমা বিবি। অভিজ্ঞ পুলিশ কর্তাটিও রীতিমতো অভিভাবকের সুরেই আশ্বস্ত করেছিলেন, ‘‘আলবত। তোদের বিয়ে দেব এই থানাতেই।’’ তারপর নইমার সামনেই এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে ডেকে তিনি হুকুম দিয়েছিলেন— ‘‘এক ঘণ্টার মধ্যেই বিয়ের আয়োজন করা চাই।’’
এরপর আর অবিশ্বাস করা যায় না। স্বামী আশরাফুল শেখ খুন হয়েছেন চার দিন আগে। কিন্তু তারপরে তো আর জীবন থেমে থাকতে পারে না। নইমা বিবি মোবাইলে থানায় ডেকে পাঠায় তার প্রেমিক হাসানুজ্জামানকে। শনিবার রাতে সে থানায় আসতেই হাতে যেন চাঁদ পায় সমশেরগঞ্জ থানার পুলিশ। আশরাফুলকে খুনের অভিযোগে স্ত্রী নইমা ও তাঁর প্রেমিক দু’জনেই আপাতত শ্রীঘরে। রবিবার জঙ্গিপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের দু’দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
থানার হাজতে বসে নইমা গজগজ করছে, ‘‘কাজটা কিন্তু ভাল হল না স্যার। আপনার কথাতেই বিশ্বাস করেই ওকে কিন্তু ডেকে এনেছিলাম।’’ সমশেরগঞ্জের ওসি সম্রাট ফণি বলছেন, ‘‘প্রেমের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল স্বামী আশরাফুল। আর সেই কারণেই নইমা ও হাসানুজ্জামান তাঁকে খুন করে। নইমার মোবাইলের কললিস্ট দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। তারপর থানায় ডেকে বিয়ের টোপ দিতেই ওরা গোটা ঘটনা কবুল করে।’’
বুধবার সকালে বাড়ির পাশেই দেহ মেলে সমশেরগঞ্জের কামালপুর গ্রামের বাসিন্দা আশরাফুলের (৩০)। তাঁর পিঠে তখনও ধারাল ছুরি বেঁধা ছিল। থানায় খুনের মামলা রুজু করে আশরাফুলের স্ত্রী নইমা। আসরাফুল ছিলেন পেশায় রাজমিস্ত্রি। পাশের গ্রাম তালতলার বাসিন্দা হাসানুজ্জামান মাঝেমধ্যেই তাঁর বাড়ি আসত। সেই সূত্রেই নইমার সঙ্গে তার আলাপ।
ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, মঙ্গলবার রাতে নইমা ও আসরাফুল গিয়েছিল পাশের ভাঙালাইন পাড়ায়। পরিকল্পনা মতো সেখানেই অপেক্ষায় ছিল হাসানুজ্জামান। তারপরে তিন জনে গল্প করতে করতে নির্জন ওই এলাকায় হাসানুজ্জামান পিছন থেকে ছুরি মারে। সেই খুনের ঘটনায় সবরকম ভাবে সাহায্য করে নইমা।
থানার এক পুলিশকর্মী বলছেন, ‘‘ধন্যি মহিলা মশাই! কোনও অনুশোচনা তো নেই-ই, উল্টে বিয়েটা না দেওয়ার জন্য আমাদের ওসিকে সমানে গাল পেড়ে যাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy