একধাক্কায় বিয়ে বন্ধ হল তিন কিশোরীর। তিন জায়গায়।
ঝাড়খণ্ড থেকে এক নবম শ্রেণির ছাত্রীকে ফরাক্কায় পাত্রের বাড়িতে এনে বিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। ফরাক্কা ব্যারাজ আবাসনে তার প্রস্তুতি চলছিল বুধবার রাতে। দুই পরিবারের লোকজন মিলিয়ে জনা পঞ্চাশের রান্নাবান্নাও চলছিল। বিয়ে শুরু হতে বাকি মোটে ঘন্টা তিনেক।
বাইরে থেকে দেখে অবশ্য বোঝার উপায় নেই। পড়শিরা ভেবেছিলেন, বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুজো, তোড়জোড় চলছে। ফরাক্কা থানার আইনি সহায়তা কেন্দ্র মারফত খবর পেয়ে ফরাক্কার যুগ্ম বিডিও শ্যামলকুমার বিশ্বাস গিয়ে বিয়ে আটকান।
ফরাক্কার কর্মী আবাসনে অবৈধ ভাবে ভাড়া থাকেন চাল ব্যবসায়ী সুভাষ মণ্ডল। তাঁর সতেরো বছরের ছেলে সৌম্যকান্তির দেওয়া হচ্ছিল ঝাড়খণ্ডের নিমশহরের সুজয় মণ্ডলের মেয়ে ১৪ বছরের মেয়ে সোনামনির। ফরাক্কার আইনি সহায়তা কেন্দ্রের প্যারালিগ্যাল ভল্যান্টিয়ার মহুয়া মুখোপাধ্যায়ের জানান, বুধবার তাঁরা ব্যারাজ আবাসনে নাবালিকা বিয়ের কথা জানতে পারেন। খবর দেওয়া হয় পুলিশ ও যুগ্ম বিডিওকে। বিয়ে বন্ধ করে পাত্রীর দাদু-ঠাকুমা এবং পাত্রের বাবা-মায়ের কাছ থেকে মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়া হয়।
ফরাক্কা থানার আইসি উদয়শঙ্কর ঘোষ বলেন, “কিছু দিন আগেই ঝাড়খণ্ডে ২২,৮০৭ জন ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী বিবাহিত মহিলার উপরে একটি সমীক্ষা হয়েছিল। দেখা যায়, ৪৪.৫ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়েছে ১৮ বছরের কম বয়সে। তাই এই ঘটনা জানিয়ে মেয়েটির উপরে নজর রাখতে বলা হয়েছে ঝাড়খণ্ড পুলিশকে। আর নাবালক পাত্র তো আমাদের নাগালেই রইল।”
হরিহরপাড়ায় আবার বিয়ে রুখেছে কন্যাশ্রীযোদ্ধারা। আজ, শুক্রবার রুকুনপুরে চোদ্দো বছরের বেবিনা খাতুনের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। তা শুনে বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ নিয়ে তার বাড়িতে যায় কন্যাশ্রীযোদ্ধারা। মেয়েটির তার মা সাবিনা বিবি প্রথমে দাবি করেন, বিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁকে ও তাঁর মেয়েকে নাবালিকা বিয়ের কুফল বোঝানো হয়। শেষে মা লিখিত ভাবে জানান, নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দেবেন না।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বেবিনা রুকুনপুর হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। পাশের সাহেবনগর গ্রামে তার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। তবে পাত্র সম্পর্ক কিছু জানা যায়নি। হরিহরপাড়া ব্লকের যুগ্ম বিডিও উদয় পালিত বলেন, ‘‘মেয়েটির বিয়ে বন্ধ করা গিয়েছে, এটা সুখবর। পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করছে প্রশাসন।’’
ডোমকলেও নাবালিকার বিয়ে আটকেছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার ডোমকল থানার শিবনগর গ্রামে ওই বিয়ের ব্যবস্থা হয়েছিল। ডোমকলের বৃন্দাবনপুর গ্রাম থেকে বর পৌঁছে গিয়েছিল। ভোজন পর্বও শেষ। ঠিক সেই সময়ে ডোমকল চাইল্ড লাইনের কর্মীরা প্রশাসন ও পুলিশ নিয়ে হাজির হয় বাড়িতে। শেষে পাত্র রাজিবুল ইসলাম ও নাবালিকা পাত্রীর বাবা বিয়ে বন্ধের বিয়ে বন্ধ করতে রাজি হন। দু’পক্ষই প্রশাসনের কাছে মুচলেকা দেয়, উপযুক্ত বয়স না হওয়া পর্যন্ত ছেলেমেয়ের বিয়ে দেবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy