করিমপুর রেগুলেটেড মার্কেটে।
ঘটনা ১: ক’দিন ধরে বছর এগারোর মেয়ে আবদার করছিল সন্ধ্যায় একটু হাঁটতে যাওয়ার। সেই আবদার রাখতে মেয়েকে নিয়ে করিমপুর রেগুলেটেড মার্কেটের মাঠে গিয়েছিলেন রামকৃষ্ণপল্লির জয়লাল শেখ। কিন্তু মার্কেটে ঢুকে কিছুটা হাঁটার পরেই তিনি ফিরে এসেছিলেন। কেন? জয়লাল বলছেন, “ভরসন্ধ্যায় মেয়েকে নিয়ে মার্কেটে ঢুকেছিলাম বটে। কিন্তু ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে ওই মাঠে আর হাঁটার সাহস পেলাম না দাদা। ওখানে আলোর ব্যবস্থা থাকলে ভাল হতো।”
ঘটনা ২: শরীর সুস্থ রাখতে চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছিলেন, একটু হাঁটাহাঁটি করতে। ঘর-সংসার সামলে করিমপুরের সোমা চক্রবর্তী বেছে নিয়েছিলেন সন্ধ্যার দিকটা। কিন্তু প্রথম দিন মার্কেটের মাঠে গিয়েই তিনি ফিরে এসেছেন। তিনি বলছেন, ‘‘শুনেছিলাম, অনেকেই মার্কেটে সন্ধ্যার পরে হাঁটতে যান। আলোয় আলোয় রাতকেও দিন বলে মনে হয়। কিন্তু কোথায় কী! গোটা মার্কেট অন্ধকার। আলোর দেখা নেই। তাই আর ঝুঁকি না নিয়ে ফিরে এসেছি। হাঁটাহাঁটি যেটুকু হচ্ছে তা ঘরের মধ্যেই!’’
সীমান্ত ঘেঁষা করিমপুরের রেগুলেটেড মার্কেটের মাঠটাকেই এলাকার ফুসফুস বলে মনে করেন এলাকার মানুষ। সেখানে দমকল, দোকানপাট যেমন রয়েছে, তেমন খেলাধুলো, প্রাতঃভ্রমণ, শরীরচর্চা, শান্তিতে বসে একটু গল্পগুজব, পিকনিক কিংবা কোনও অনুষ্ঠানের জন্য ওই মাঠটাই বড় ভরসা। সন্ধ্যার পরে সেই মাঠ এমন অন্ধকারে ডুবে থাকায় ক্ষুব্ধ করিমপুর।
অথচ এমনটা কিন্তু ছিল না। মাঠের অন্ধকার দূর করতে রেগুলেটেড মার্কেট কর্তৃপক্ষ ২০০৮ সালে প্রায় বাইশ লক্ষ টাকা খরচ করে দু’টি উচ্চ বাতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছিল। সেই আলোয় ভেসে যেত গোটা রেগুলেটেড মার্কেট চত্বর। ঝলমল করত মাঠ। মার্কেটের সেই আলো দেখে মনে সাহস পেয়েছিল প্রান্তিক শহর। বিকেলের পর থেকে ভিড় উপচে পড়ত মাঠে। সপরিবার লোকজন এসে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে যেতেন। ভিড় জমাতেন আইসক্রিম, বাদাম, চা, ফুচকা কিংবা মুড়ি বিক্রেতারাও।
কিন্তু কয়েক মাস পরেই সেই আলো গেল নিভে। তারপরেও আরও আটটা বছর কেটে গিয়েছে। আলো কিন্তু আর জ্বলেনি। ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদেরও আর দেখা মেলে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এত টাকা ব্যয় করে আলোর ব্যবস্থা করায় সুবিধা হয়েছিল সকলের। কিন্তু তারপর বাতিস্তম্ভ দাঁড়িয়ে আছে। আলো জ্বলে না।
আর সেই অন্ধকারে মাঠকে নিরাপদ মনে করেন না অনেকেই। অভিযোগ, একটু রাতের দিকে নেশার আসর ও কারবার দু’টোই চলে। স্থানীয় ও বহিরাগত সেই ছায়ামূর্তিদের ভয়ে অনেকেই এখন মার্কেটের পথ মাড়ান না। করিমপুর আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক সুজিত বিশ্বাসের অভিযোগ, অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে নানা অসামাজিক কাজ চলে ওখানে। সকালে মাঠে গিয়ে প্রায়ই মদের ভাঙা বোতল পরিষ্কার করতে হয় ছেলেদের।
তাঁর দাবি, পুলিশ ও প্রশাসনের উচিত মার্কেটের মাঠের উচ্চ বাতিস্তম্ভের আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা করা। যাতে মানুষ সন্ধ্যার পর সেখানে নিরাপদে যাতায়াত বা শরীরচর্চা করতে যেতে পারে। নদিয়া জেলা রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির সম্পাদক সৌম্যজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘‘বিদ্যুতের ভোল্টেজের সমস্যার কারণে ওই বাতিস্তম্ভের আলো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে কথা বলে খুব শিগ্গির আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হবে।’’
তেহট্টের এসডিপিও কার্তিক মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই মাঠে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য পুলিশ প্রতি রাতেই সেখানে টহল দেয়। এ বার সেই নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy