Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
ভোগান্তি জেলা জুড়ে

ঝড়ের বলি ৫, ক্ষতি চাষেও

সাকুল্যে মিনিট সাতেকের ঝড়, আর বড়জোর পনেরো মিনিট বৃষ্টি। রবিবার সন্ধ্যায় তার জেরে বিপর্যস্ত হল গোটা নদিয়া জেলা। গাছের ডাল ভেঙে ও দেওয়াল চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন পাঁচ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাড়ি, খেত। গৃহহীন হয়ে পড়েছেন কয়েকশো মানুষ।

ঝড়ে রাস্তায় উপর ভেঙে পড়ল গাছ। আটকে গেল যান চলাচল। সোমবার হোগলবেড়িয়ায়। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক

ঝড়ে রাস্তায় উপর ভেঙে পড়ল গাছ। আটকে গেল যান চলাচল। সোমবার হোগলবেড়িয়ায়। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৩৩
Share: Save:

সাকুল্যে মিনিট সাতেকের ঝড়, আর বড়জোর পনেরো মিনিট বৃষ্টি। রবিবার সন্ধ্যায় তার জেরে বিপর্যস্ত হল গোটা নদিয়া জেলা। গাছের ডাল ভেঙে ও দেওয়াল চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন পাঁচ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাড়ি, খেত। গৃহহীন হয়ে পড়েছেন কয়েকশো মানুষ। পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদে রবিবার সন্ধ্যায় ও সোমবার ভোরে মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে হালকা ঝড়। তবে সেখানে কিছু রাস্তায় জল জমা ছাড়া তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলেই প্রশাসন সূত্রে খবর।

ধুবুলিয়ার তুফান শেখ (৩৭) এ দিন ঝড়ের সময় সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। সেই সময় তাঁর উপরে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসার পথেই তিনি মারা যান। ঘরের উপরে গাছ ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয়েছে হাঁসখালির ঝিনুকঘাটার বাসিন্দা কার্তিক দাসের (৮০)। দেওয়াল চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন কালীগঞ্জের আড়ারবেগের বাসিন্দা আলাউদ্দিন মণ্ডল (৫০)। গাছের ডাল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে নাঘাটের দয়ালনগরের বাসিন্দা রামকৃষ্ণ ঘোষের (২০)। ভীমপুরের বাসন্তীনগরে গাছের নীচে দাঁড়িয়েছিলেন কয়েক জন। সেই সময় ডাল ভেঙে পড়ে। চার জন জখম হন। তাঁদের শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার সকালে সেই গাছের ডালের নিচে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় বাসন্তীনগরের বিকাশ শর্মাকে (৫০)।

কোতোয়ালির রাউতরা এলাকায় গাছের ডাল চাপা পড়ে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। এ দিনের ঝড়-বৃষ্টিতে জেলার ১৭টি ব্লকের মধ্যে ১৫টি ব্লক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী, পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছে ৯৬৭টি বাড়ি। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৩৪৮৪টি বাড়ি। জখম হয়েছেন ৫০ জনের বেশি।

ঝড়ে তেহট্টের বেতাই বাজারে বেশ কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়ে। কেউ জখম না হলেও বেশ কিছু ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাজারের চা বিক্রেতা গৌরচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, “সেই সময় দোকানে প্রায় ১৬ জন ছিলাম। প্রচণ্ড ঝড়ে পাশের অশ্বত্থ গাছটি ভেঙে পড়ে টালির ছাউনি দেওয়া দোকান ঘরে। সকলেই আটকে পড়ি। পরে অন্যান্যদের সাহায্যে বাইরে বের হই।’’ স্বর্ণব্যবসায়ী প্রতীম সরকারের কথায়, ‘‘আচমকা দোকানের ছাদের উপর গাছ ভেঙে পড়ায় আতঙ্কে সবাই বাইরে চলে আসি। আমরা বেঁচে গিয়েছি। তবে ছাদ ভেঙে গিয়েছে।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যাঁরা গৃহহীন হয়েছেন তাঁদের জন্য ত্রিপল ও ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় খাবার পাঠানো হচ্ছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) প্রিয়াঙ্কা সিঙ্গলা বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে দ্রুত ক্ষতিপূরণ পায় সে ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করছি।”

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনের বৃষ্টিতে তিল ও পাট চাষিরা লাভবান হলেও আম, লিচু ও কলাচাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ধানেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE