সুনসান: দুপুরে ধু ধু জাতীয় সড়ক। পলাশিতে। নিজস্ব চিত্র
বৃষ্টিবিহীন দগ্ধ বৈশাখী দিন। সকাল সাতটা বাজতে না বাজতেই চাঁদি ফাটা রোদ। জামাকাপড় ঘামে সপসপে। বেলা একটু বেলা গড়ালেই গরম হাওয়ার দাপটে কার সাধ্যি রাস্তায় বের হয়। একঘর শীতলতার জন্য তখন মানিব্যাগ, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড সব কবুল।
রাস্তাঘাটে যে গুটিকয়েক মানুষের দেখা মেলে, তাঁরাও নেহাতই বাধ্য হয়ে রাস্তা ধরেছেন। কেউ কেউ পথের ধারেই খানিক শীতলতার খোঁজে। আমপোড়ার সরবত, বেলের পানা আর নিম্বুপানির তুমুল বিক্রি। পাতলা হয়ে এসেছে চায়ের দোকানের ভিড়। সরবত, লস্যি, ঘোল কিংবা ক্যানবন্দি ঠান্ডা পানীয়ের দোকানে জমছে আড্ডা। তীব্র রোদ-গরমে যাবতীয় ব্যবসাবাণিজ্য কার্যত একবেলায় গিয়ে ঠেকেছে। বেশির ভাগ দোকানদারই জানাচ্ছেন, দিনের বেলা মোটে ব্যবসা হচ্ছে না। পোড়া বৈশাখে বানিজ্যের এই ছবি নবদ্বীপ থেকে কৃষ্ণনগর কিংবা বহরমপুর, সর্বত্র। ঘড়ির কাঁটা ন’টা ছুঁতে না ছুঁতেই খদ্দের হাওয়া। দোকানিও কোনও মতে বারোটা পর্যন্ত কাটিয়েই দোকানের সাটার নামিয়ে সোজা বাড়ির পথে। আবার সেই বিকেল পাঁচটা।
এই মন্দার বাজারে ভিড় কেবল মাত্র পাখা থেকে এসি, রোদ চশমা থেকে টুপি, সুতির জামাকাপড়ের দোকানে। পথের ধারে নিম্বুপানি বিক্রেতা রাজু পাল বললেন, “প্রচণ্ড গরমে রাস্তায় লোক ক্রমশ কমছে। ক’দিন আগেও গড়ে একশো গ্লাস বিক্রি করেছি। এখন অনেক কমে গিয়েছে।” আম আর বেলের সরবত দশ টাকা। নিম্বুপানি পাঁচ টাকা। ঠান্ডা পানীয়, লস্যি বিক্রেতা মিলন ঘোষ আবার বললেন, “এ বার দেখছি ঠান্ডা পানীয়ের চাহিদা কম। বদলে লস্যি বেশি বিক্রি হচ্ছে।”
নবদ্বীপের প্রতিষ্ঠিত বস্ত্র বিপণির মালিক রাজেশ অগ্রবাল অবশ্য জানালেন, তাঁর দোকান সারাদিনই খোলা। তবে দিনের বেলাটা কার্যত মাছি তাড়িয়েই কাটে। যা বিক্রি, সবই বিকেল গড়ালে। তা-ও বিয়ের কেনাকাটা ছাড়া এই সময়ে মূলত সুতির পোশাক বিক্রি হচ্ছে। সুতির হাল্কা ছাপা শাড়ি বা কোটা শাড়ি। ছেলেদের পছন্দ সুতি এবং খাদির হাফ শার্ট। রাজেশবাবুর কথায়, “বাজারে খদ্দের ফিরবে সেই জ্যৈষ্ঠ মাসে জামাইষষ্টি আর ইদের হাত ধরে।”
তবে চোখে পড়ার মতো ভিড় ঠান্ডা মেশিনের দোকানে। এসি, ফ্রিজের ডিলার চঞ্চল সাহা বলেন, “এসি আর এখন বিলাসিতার জিনিস নয়। বরং প্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে। এসির দাম বাড়েনি, বরং কিছুটা কমেছে। ফলে মানুষের মধ্যে এসি কেনার প্রবণতা বাড়ছে।”
নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিসের সম্পাদক গোকুলবিহারী সাহা বলেন, “এই গরমে ব্যবসা বাণিজ্যের অবস্থা মোটে ভাল নয়। শুধুমাত্র ফ্রিজ, এসি, কুলার পাখা, ঠান্ডা পানীয় দিয়ে তো সামগ্রিক ব্যবসার ছবি বোঝা যায় না। তবে এমনিতেই পয়লা বৈশাখের পর একটা মন্দাপর্ব চলে।” গরম পড়তেই ফলের বাজারে তরমুজের চাহিদা তুঙ্গে। দিন কয়েকের মধ্যেই ১২ টাকা কেজি দরের তরমুজ এখন ২০ টাকার কমে মিলছে না। বহরমপুর শহরের পুরাতন কান্দি বাসস্ট্যান্ড বাজারের ফল ব্যবসায়ী রতন হাজরা জানালেন, তরমুজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কচিশশা আর কাগজি লেবুর দাম। ২০ টাকার ডাব বিকোচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়। মিষ্টির দোকানে বেড়েছে টক দই-এর চহিদা। মোগলাই কাটলেটের বদলে লোকে ভিড় করছে লস্যি-সরবতের দোকানে।
বহরমপুর শহরের ক্যান্টনমেন্ট রো়ডের চশমার দোকানের মালিক অখিল প্রামাণিক বললেন, ‘‘এখন তো সানগ্লাস কেনার ধুম। বছর ভর পাওয়ারওয়ালা চশমাই বেচি। ক’দিন রঙিন চশমা বেচে নিই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy