জলবন্দি: ভরতপুরের সুকদামপুরে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
পাঁচ দিনেও কুঁয়ে নদীর জল কমেনি। বরং নতুন করে ভরতপুর ১ ব্লকের পাঁচটি গ্রামের প্রায় সাতশো পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়েছে। কম হলেও শেষমেশ ত্রাণ দেওয়া অবশ্য শুরু হয়েছে। শক্তিপুর থানার ২২ নম্বর মাণিক্যহার জুনিয়র বেসিক স্কুল জলমগ্ন। জল ঠেলে মঙ্গল ও বুধবার ছাত্রছাত্রীরা সকলে স্কুলে পৌঁছতে পারেনি। একনাগাড়ে বৃষ্টি হওয়ায় বাড়ি ধসে মারা গিয়েছেন ডোমকলের বাগডাঙা গ্রামের মর্জিনা বিবি (৪৮)।
বড়ঞা ব্লকে জাওহাড়ি, ভড়ঞা, সোনাভারুই গ্রাম এখনও জলবন্দি। ভরতপুর ১ ব্লকের গড্ডা পঞ্চায়েত এলাকার সুকধানপুর গ্রামের সঙ্গে কাশীপুর, বালিচুনা, কোল্লা, চাঁদপুরও ভারী বৃষ্টি এবং বিপদসীমা প্রায় ছুঁয়ে ফেলা কুঁয়ে নদীর জলে প্লাবিত। সুকধানপুরে ১৬টি পরিবারকে স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি ও প্রাইমারি স্কুলে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে প্রশাসন। তাদের চাল ও শিশুদের জন্য খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। কাশীপুর, বালিচুনা, চাঁদপুর ও কোল্লার ছ’শো পরিবারের জন্য অবশ্য কোনও ব্যবস্থা হয়নি।
জেলা প্রশাসনের হিসেবে, কান্দি মহকুমার কান্দি, ভরতপুর ১ ও ২, বড়ঞা ও খড়গ্রাম ব্লক, জঙ্গিপুর মহকুমার সাগরদিঘি ও ফরাক্কা, ডোমকলের রানিনগর ১ ও ২ ব্লক এবং ডোমকল, বহরমপুরের নওদা, লালবাগের মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ ও নবগ্রাম ব্লকে কিছু এলাকা বানভাসি। সব মিলিয়ে সাড়ে ১২ হাজার মানুষ জলবন্দি। তলিয়ে গিয়েছে ৩ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমি। ১৫৩টি মাটির বাড়ি ধসে গিয়েছে, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা ৩৮০টি। নবগ্রামে পরিস্থিতি তত খারাপ নয়।
বুধবার কান্দির হিজল পঞ্চায়েত এলাকার মানুষের জন্য ত্রাণ নিয়ে যান জেলাশাসক পি উলগানাথন ও পুলিশ সুপার মুকেশকুমার। বিভিন্ন গ্রামের কয়েকশো মানুষেকে চাল-মুড়ি-গুড় দেওয়া হয়। কিছু পরিবার ত্রিপলও পেয়েছে। পরিবার পিছু ৫ কিলো করে চাল, মুড়ির প্যাকেট ও শুকনো খাবার বিলি করা হয়েছে।
কাশীপুরের বাসিন্দা তথা গড্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মহম্মদ কামরেজ্জামানের আক্ষেপ, “আমার এলাকায় পাঁচ গ্রামের মানুষ জলবন্দি। প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণের জিনিস কম আসছে। ৩০টি ত্রিপল মিলেছে, কাকে দেব আর কাকে দেব না সেটাই চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
খড়গ্রামে ব্রাহ্মণী নদীর জল বাড়ায় গ্রামের রাস্তা ডুবেছে। তবে যাদবপুর, নিচু যাদবপুর, কেলায়, পোড়াডাঙা গ্রামগুলিতে জল ঢোকেনি। সকালে সুন্দরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে স্থানীয় দেড়শো বাসিন্দাকে ত্রিপল দেওয়া হয়ে। গৌরাঙ্গ বাগদি, তাপস বাগদিরা বলেন, “সপ্তাহখানেক ধরে কাজ নেই, জমানো টাকা প্রায় শেষের দিকে। এ ভাবে জল থাকলে কী খাব, সেটা নিয়েই চিন্তা।”
কান্দি মহকুমা প্রশাসন সূত্রে খবর, মহকুমার পাঁচটি ব্লকেই ৩০ কুইন্ট্যাল করে অতিরিক্ত ত্রাণের চাল বরাদ্দ হয়েছে। অতিরিক্ত পাঁচশো করে ত্রিপলও বরাদ্দ হয়েছে। মহকুমাশাসক অভীককুমার দাস বলেন, “প্রত্যেকটা ব্লকে ত্রিপল ও চাল মজুত আছে। কোথাও চিঁড়ে-গুড় দেওয়ার পরিস্থিতি থাকলে সেটা বিডিও-রা তা বিলি করবেন। পানীয় জলের জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকেও বলা হয়েছে।’’ তাঁদের চিন্তা, কুঁয়ে নদীর আপাতত না বাড়লেও কমছে না। কত দিন এ ভাবে থাকবে, সেটাই তাঁদের ভাবাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy