পিকনিকের পথে উল্লাস। চৌগাছা রেলগেটে। — ফাইল চিত্র
হিমে ভিজে রয়েছে পিচ-পথ। তার উপর দিয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে রক্তের স্রোত। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে আট জনের নিথর দেহ। আরও কয়েক জন তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। আলো-আঁধারি রাস্তায় তখনও গর্জে যাচ্ছে ডিজে!
১৫ জানুয়ারি, ২০১৭। বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্য থেকে পিকনিক সেরে বাড়ি ফিরছিল দিগনগরের ১৯ জনের একটি দল। নাকাশিপাড়ার যুগপুরে ৩৪ নম্বর সড়কে দুর্ঘটনায় তিন কিশোর-সহ আট জন মারা গিয়েছেন। ওই অকুস্থলের দু’পাশে যাঁরা সে দিন ছিলেন তাঁরা এখনও বলছেন, ‘‘গতিই কাল হল ওদের।’’
এই ক’দিনে রক্তের দাগ হয়তো শুকিয়ে গিয়েছে। কিন্তু যাঁরা বেঁচে ফিরেছেন তাঁরা কি ভুলতে পারবেন ওই দুঃসহ স্মৃতি? পারবেন আর কখনও পিকনিকে গিয়ে হুল্লোড় করতে? সেটা হয়তো সময় বলবে। কী ভাবে দুর্ঘটনা, কার দোষ তা-ও হয়তো পুলিশ খুঁজে বের করবে। কিন্তু ওই আট জন তো আর ফিরবে না!
এই প্রথম নয়। প্রতি বছরই পিকনিকের হাত ধরে এমন ঘটনা ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে হইচই, সামাল সামাল। তারপর ফের যে কে সেই। মিনিডোরে একাধিক পেল্লাই সাউন্ড বক্স। ঠিক মতো দাঁড়ানোর জায়গাও নেই। কিন্তু তাতে কী! সেখানেই কোমর দুলিয়ে চলছে নাচ। ছুটছে মিনিডোর।
নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে এ দৃশ্য বড় চেনা। কোনও দল ছুটছে লালবাগ, সবুজ দ্বীপ, মোতিঝিলের দিকে, কেউ আবার নবদ্বীপ, মায়াপুর, বেথুয়াডহরি, বাহাদুরপুর, কল্যাণীতে। কৃষ্ণনগরের এক মিষ্টির দোকানের মালিক অংশুমান মোদক বলছেন, ‘‘সে গতি যদি একবার দেখতেন! ভয়ে বুক ঢিপঢিপ করে। কিছু একটা ঘটে গেলে আর রক্ষে থাকবে না। সবাই কেমন উন্মাদের মতো আচরণ করে। এটাই নাকি ওদের আনন্দ!’’
সম্প্রতি নদিয়া থেকে গাড়ি নিয়ে লালবাগে পিকনিক করতে এসেছিল একটি দল। খানার থেকে পিনার ব্যবস্থাই বেশি ছিল। আর ছিল ডিজে। পান এবং উদ্দাম নাচে যোগ দিয়েছিলেন গাড়ির চালকও। এই অবস্থায় বাড়ি ফিরবেন কী ভাবে? ওই দলের এক যুবকের গলায় চড়া আত্মবিশ্বাস, ‘‘এ চালক বড্ড দড়। ওঁর কিস্যু হবে না।’’ জেলা পুলিশের এক কর্তা ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘এ পর্যন্ত পিকনিকে যাতায়াতের পথে যত দুর্ঘটনা ঘটেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে চালক মদ্যপ ছিলেন। এবং গাড়ির গতিও ছিল মাত্রাতিরিক্ত।’’
(চলবে)
(তথ্য সহায়তা— সামসুদ্দিন বিশ্বাস, সুস্মিত হালদার, শুভাশিস সৈয়দ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy