ডোমকলের নৈশ ফুটবলের একটি মুহূর্ত। ছবি: বিশ্বজিৎ রাউত
এবড়ো খেবড়ো মাঠ। কোথাও ঘাস রয়েছে। কোথাও নেই। আর তাতেই আইএসএলের ঢঙে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হল নাইট ফুটবলের। ডোমকলের ছোট্ট জনকল্যাণ মাঠ যেন হয়ে উঠল একটুকরো যুব ভারতী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডোমকলের প্রাণকেন্দ্র ওই মাঠে ফুটবলকে ঘিরে ছিল চরম উন্মাদনা। অলোই ঝলমলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোর রোশনাইয়ের পাশাপাশি ছিল বাজির ফুলঝুরিও। মাঠের মাঝে সমবেত নাচ, এলাকার ৮ জন ক্রীড়া ও দু’জন সাংস্কৃতিক জগতের মানুষকে দেওয়া হল সন্মান। সব মিলিয়ে আয়োজনে কোনও খামতি রাখেননি আয়োজক ক্লাব ডোমকল স্পোর্টিং ক্লাবের কর্মকর্তারা।
রাতের আলোয় নদিয়ার ৩টি ও মুর্শিদাবাদের ৫টি দল নিয়ে খেলা ভোর পযর্ন্ত মাঠ বাধা হয়ে দাঁড়ালেও বিভিন্ন জেলার নামী খেলোয়াড়েরা দাপিয়ে খেললেন হাজার হাজার দর্শকের সামনে। আর দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শকরা গভীর রাত পর্যন্ত কুয়াশা ভেজা মাঠে ঠায় বসে দেখলেন সেই খেলা। নদিয়া থেকে আসা দিঘল কান্দি ফুটবল দলে এক নাইজেরিয়ান খেলোয়াড় থাকলেও প্রথম রাউন্ডে টাই ব্রেকারে ডোমকল মহমেডান ক্লাবের কাছে হেরে যায় তাঁরা। অন্য দিকে, ডোমকল প্রগতি সোশাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি প্রথম রাউন্ডে ভাল খেলে বেতাই প্রভাত সঙ্ঘকে হারালেও সেমিফাইনালে ডোমকল মহমেডান ক্লাবের কাছে হেরে যায়। রাত তিনটে নাগাদ ফাইনাল গড়াই টাই ব্রেকারে ডোমকল মহমেডান ক্লাব ৩-১ গোলে হারে মুর্শিদাবাদ একাদশের কাছে। উইনার্স দলকে নগদ ১৫ হাজার টাকা-সহ ট্রফি দেওয়া হয়। আর রানার্স দলকে দেওয়া হয় ১০ টাকা-সহ ট্রফি।
ঈদ এবং দীপাবলির পর আবারও ফুটবলকে ঘিরে উৎসবের মেজাজে ডোমকল। গ্রামে গঞ্জে শুরু হয়েছে নক-আউট ফুটবল। এ ছাড়াও কোথাও একদিনের বা প্রীতি ম্যাচ লেগেই আছে ডোমকল জুড়ে। দিন কয়েক আগে ডোমকলের ফতেপুর, ভগীরথপুর, কুপিলা গ্রামে হয়ে গেল নক-আউট টুর্নামেন্ট। এ ছাড়াও জলঙ্গির সাগরপাড়ায় মহকুমার চারটি দল নিয়ে ও ভাদুরিয়াপাড়া এলাকায় স্থানীয় নবারুণ সঙ্ঘের পরিচালনায় ৮টি দল নিয়ে চলে টুর্নামেন্ট। রবিবার ছিল ওই খেলার ফাইনাল। অন্য দিকে, বসন্তপুর এডুকেশন সোসাইটি ও ডোমকল সেবা সংঙ্ঘের পরিচালনায় নভেম্বর মাসের শুরুতেই হবে নক-আউট টুর্নামেন্ট। ফলে এখন ফুটবল ছাড়া আর কিছু নিয়ে ভাবতে নারাজ ডোমকলের মানুষ। বিকেল হলেই মাঠের চারপাশে জড়ো হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। মাঠে প্রত্যেকটা মুহূতর্র্ থাকছে উত্তেজনায় ভরা। ফলে খেলায় তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হচ্ছে ম্যাচ রেফারিদেরও। সামান্য ভুলচুক হলেই হই হই করে উঠছে গোটা মাঠ। মঙ্গলবার রাতে ওই খেলায় শুরু হতে কয়েক মিনিট দেরি হলেই কলরব উঠেছে মাঠে। এক দিকে, টিভির পর্দায় আইএসএল, অন্য দিকে, বিকেলে বা রাতের আলোয় ঝলমলে ঘরের মাঠ। ফলে আইএসএলঃএর পাশাপাশি স্থানীয় খেলোয়াড়রাও জায়গা করে নিয়েছে চা-চক্রে, মোড়ের আড্ডায়। কোন পাসটা বাড়ানো নিখুত ছিল বা ভুল পাশের জন্য গোলটা হজম করতে হল এমনই হাজার ব্যাখ্যা কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে।
তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে মঙ্গলবার রাতের ওই ফুটবল ম্যাচ। রাত ৮টা নাগাদ জনকল্যাণ মাঠের পাশাপাশি পাশের বাড়ির ছাদ ও সানসেডে ভিড় জমান হাজর হাজার মানুষ। বিভিন্ন গ্রাম থেকে মোটরবাইক ছাড়াও গাড়ি, লছিমন ভাড়া করে খেলা দেখতে আসেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। ভগীরথপুর এলাকার এক সুমো গাড়ির চালক বলেন, ‘‘আমাকে বলা হয়েছিল ১২টা থেকে ১টার মধ্যে ঘরে ফিরবেন। এখন ২টো বাজলেও কেউ ফিরতে চাইছেন না। ফলে চলে যেতেও পারছিনা। এমন খেলা পাগলদের আর কোনওদিন ভাড়ায় যাব না।”
রাত বেড়েছে সঙ্গে বেড়েছে কুয়াশা হালকা শীতের মেজাজে কানায় কানায় ভর্তি মাঠ দেখে খুশি আয়োজক ডোমকল স্পোর্টিং ক্লাব। সম্পাদক দেবাংশু সরকার বলেন, “অনেকদিন বাদে মাঠে প্রচুর মানুষ দেখে আমরা খুব খুশি। রাতভর মানুষ এভাবে খেলা দেখবে ভাবিনি।” ডোমকলের ক্রীড়াপ্রেমীদের এর জন্য ধন্যবাদ।” এ দিন মাঠে দিঘল কান্দির একমাত্র নাইজেরিয়ান খেলোয়াড় মহম্মদ তৈইবও খুশি দর্শক দেখে। ট্রাইবেকারে হেরে গিয়ে মন খারাপ হলেও এই উন্মাদনা উপভোগ করার মতো বলে মাঠ ছাড়েন তিনি। দলের সঙ্গে আসা অলিন ঠাকুর বলেন, “অনেক আশা নিয়ে মুর্শিদাবাদের মাঠে এসেছিলাম। কিন্তু ট্রাইবেকারে হেরে গেলাম।” ফোনে সম্ভবত গিন্নিকে খবরটা দিতে গিয়ে গলাটা ধরে এল তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy