Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ক্ষমতা জাহির করতে মিছিল তৃণমূলের

কংগ্রেসের ‘মহামিছিলের’ পাল্টা ‘মহামিছিল’ বের করে বহরমপুর শহরে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করল তৃণমূল। কিন্তু ওই মিছিলে মুর্শিদাবাদের বাইরের জেলা থেকে লোক নিয়ে আসার অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। গত ২৪ অগস্ট তৃণমূলের বিভিন্ন ‘দুর্নীতি’ ও ‘অপশাসনের’ বিরুদ্ধে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে বহরমপুর শহরে মহামিছিল বের হয়।

বহরমপুরে মিছিল শাসক দলের। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

বহরমপুরে মিছিল শাসক দলের। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

শুভাশিস সৈয়দ
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৫৮
Share: Save:

কংগ্রেসের ‘মহামিছিলের’ পাল্টা ‘মহামিছিল’ বের করে বহরমপুর শহরে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করল তৃণমূল। কিন্তু ওই মিছিলে মুর্শিদাবাদের বাইরের জেলা থেকে লোক নিয়ে আসার অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।

গত ২৪ অগস্ট তৃণমূলের বিভিন্ন ‘দুর্নীতি’ ও ‘অপশাসনের’ বিরুদ্ধে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে বহরমপুর শহরে মহামিছিল বের হয়। গত ২৯ অগস্ট উত্তরকন্যা অভিযানেরও ডাক দেন অধীরবাবু। তার পরেই কংগ্রেসের মহামিছিলের পাল্টা তড়িঘড়ি বহরমপুর ও শিলিগুড়িতে মহামিছিল বের করার সিদ্ধান্ত নেয় তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব।

সেই মতো শনিবার দুপুরে বহরমপুরে মহামিছিল বের হয়। মিছিল শুরু হয় বহরমপুরের ওয়াইএমএ ময়দান থেকে। পরে গোরাবাজারে অধীর চৌধুরীর বাসভবন হয়ে নিমতলা মোড়-জেলা কংগ্রেসের কার্যালয় ছুঁয়ে মিছিল শেষ হয় টেক্সটাইল কলেজ মোড়ে। মিছিলের শেষে টেক্সটাইল মোড়ে এক পথসভারও আয়োজন করে তৃণমূল। ওই দিন মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি পাশের জেলা বীরভূম থেকেও বাসে করে ওই মিছিলে লোক নিয়ে আসা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।

যদিও মুর্শিদাবাদ জেলার যুগ্ম পর্যবেক্ষক তথা তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক আশিস চক্রবর্তী বলেন, “বীরভূম থেকে লোক নিয়ে আসার কথা কে বা কারা প্রচার করছে আমার জানা নেই। শনিবারের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন প্রান্তের দলীয় কর্মী-সমর্থকরা।”

আশিসবাবু অস্বীকার করলেও সভার মঞ্চ থেকেই ‘বীরভূম থেকে আসা কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এক জন মহিলা অসুস্থ হয়ে মঞ্চের পাশেই রয়েছেন’ বলে মাইকে ঘোষণাও হয়। বীরভূমের লাভপুর থানার ভদ্রপুরের বাসিন্দা ওই তৃণমূল কর্মীর নাম শিপ্রা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিপ্রাদেবী বলেন, “মিছিলে হেঁটে আসার সময়ে বিশৃঙ্খলার জন্য আমি রাস্তার উপরে পড়ে গিয়ে নাকে চোট পাই। রক্তও বের হতে থাকে। উঠে বসতে গেলে মাথা ঘুরে ফের পড়ে যাই।” ওই মহিলা কর্মীর দাবি, ভদ্রপুর থেকে একটি বাস আসে। এছাড়াও বীরভূম থেকে বেশ কয়েকটি বাসে আমাদের কর্মী-সমর্থকরা এসেছেন।

বহরমপুরে তৃণমূলের ওই মিছিল সফল করতে গত ২৭ অগস্ট কলকাতায় তৃণমূল ভবনে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে ২২ জনকে ডেকে পাঠানো হয়। তার মধ্যে গত ১১ জুলাই মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের যুগ্ম পর্যবেক্ষক ইন্দ্রনীল সেনের তৈরি করা নতুন কমিটিতে ঠাঁই না পাওয়া হুমায়ুন কবীর-সহ সাগির হোসেন, মহম্মদ আলি, উৎপল পালও ছিলেন। হুমায়ুনের দাবি, রেজিনগর বিধানসভা এলাকা থেকে ১১টি বাস, ৩০টি সুমো গাড়িতে প্রায় দু’হাজার কর্মী-সমর্থক ভিড় করেন মিছিলে।

জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, “বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে মিছিল ভরিয়ে কৃত্রিম ভাবে শক্তি প্রদর্শন করার মধ্যে কোনও রাজনৈতিক সততা নেই। কংগ্রেসের মিছিলে বহরমপুরের সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভিড় করেছিলেন। বাইরে থেকে লোক নিয়ে আসার কোনও প্রয়োজন হয়নি আমাদের।”

তাদের মিছিলে প্রায় ১০ হাজার কর্মী-সমর্থক অংশ নিয়েছিল বলে কংগ্রেসের দাবি। জেলা গোয়েন্দা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূলের মিছিলে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের ভিড় হয়েছিল বলে রাজ্যে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। অশোক দাস বলেন, “তৃণমূলের মিছিলে ৮-১০ হাজার মানুষের ভিড় হয়েছিল।”

গত ২৪ অগস্ট কংগ্রেসের মিছিলের সামনের সারিতে ছিলেন অধীর চৌধুরী এবং মিছিলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি হাঁটেন। ‘সুশৃঙ্খল’ ওই মিছিল গির্জার মোড় হয়ে রানিবাগান-লালদিঘি পাড় ছুঁয়ে জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। ওই মিছিল শেষে কোনও পথসভাও করেনি তারা।

শনিবারের মিছিলে হাজির থাকলেও পথে হাঁটেননি তৃণমূলের মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মূল মিছিলের সঙ্গে ফ্লেক্স লাগানো ছোট ম্যাটাডোর গাড়িতে চড়ে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের যুগ্ম পর্যবেক্ষক আশিস চক্রবর্তী ও ইন্দ্রনীল সেনের সঙ্গে পার্থবাবু সভা-মঞ্চে এসে পৌঁছান। অধীর চৌধুরীর নাম না করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “এখানকার মাতব্বর চারিদিকে গিয়ে বড় বড় কথা বলে। আমরা এখানে এসেছি এই কথা বলতে যে, তুমি যদি ওখানে কিছু করো, তার পাল্টা আমারও এখানে করব। ছেড়ে কথা বলা হবে না।”

কংগ্রেসের প্রাক্তন ও বর্তমান জনপ্রতিনিধি থেকে অসংখ্য সাধারণ কর্মী আগামী দিন তৃণমূলে যোগ দেবেন বলে এ দিন ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন পার্থবাবু। তাঁর কথায়, “এই মঞ্চ থেকে বলে যাই, এখনও পর্যন্ত তিন তলার বাড়ির (জেলা কংগ্রেস কার্যালয়) উপর থেকে পতাকাটা ঝুলছে। বহরমপুর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির অফিস। খুনী-গুন্ডা-প্রোমোটাররা ছাড়া তাঁর পাশে কেউ থাকবে না। এমনকি জনপ্রতিনিধিরাও কিছুদিনের মধ্যে তৃণমূলে যোগ দেবেন।”

সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া প্রাক্তন রাজ্য যুব কংগ্রেস সভাপতি সৌমিক হোসেন বলেন, “আগামী দিন জেলা কংগ্রেস মিশে যাবে তৃণমূলে। এখন তার ট্রেলার চলছে। পিকচার আভি বাকি হ্যায়।” তৃণমূূলের পথসভায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে উদ্যানপালন দফতরের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী, সাবিত্রী মিত্র, ইন্দ্রনীল সেন, সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া সৌমিক হোসেনবক্তব্য রাখতে গিয়ে সকলেই অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন।

তাঁদের উল্টো পথে হেঁটে হুমায়ুন কবীর আবার বলেন, “অধীর চৌধুরীর নাম নিয়ে তাঁকে গুরুত্ব দিতে আমি রাজি নই। আজকের এই সভা তাঁকে বাড়তি গুরুত্ব দিল। এমন কথা উচিত ছিল যাতে কংগ্রেসে ধ্বস নামে, আমাদের কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা হয় ।” তাঁর সংযোজন, “বিভিন্ন কর্মসূচি-আন্দোলনের কথা বলা উচিত ছিল বলে মনে করি। মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ কোনও উন্নয়ন করতে পারছে না। সেই কথা বক্তাদের মুখে শুনতে পেলাম না!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc suvasish saiyad berhampore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE