বেলডাঙা ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের জগদ্ধাত্রী প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র।
শুধু কৃষ্ণনগর নয়। জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজনে মেতে উঠেছে রানাঘাটও। বাড়ির পুজো, বারোয়ারি মিলিয়ে নেহাত কম নয় এই অঞ্চলের পুজোর সংখ্যা। কম নয় উৎসাহও।
তৃপ্তি ভট্টাচার্য, ছবি সিংহ, লিপিকা মৌলিক, টুম্পা বন্দ্যোপাধ্যায়, রুমকি সাহা। খুঁজতে গেলে বাড়িতে পাওয়াই মুশকিল। সকাল সকাল ঘরের কাজ সেরে, স্কুল-কলেজ, অফিসের ঝক্কি সামলেই বেরিয়ে পড়া। হাতে আর মোটে সময় নেই। চাঁদা তোলার আরও কিছু বাকি। ঝক্কি রয়েছে আরও কিছু। পাড়ার পুজো তবু একটু বেশি চাঁদা চাইতে গেলে অনেক সমস্যা হয়।
তা হোক তবু থেমে নেই ওঁরা। রানাঘাট ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আমলকিতলা মহিলা সমিতির পুজো এ বার নবম বর্ষের। সমিতির সদস্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাচ্ছেন বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়েছে, তাই পুজোর খরচও বেড়েছে। চাঁদা তো একটু বেশি দিতেই হবে। পুজো কমিটির অন্যতম সম্পাদক লিপিকা মৌলিক বলেন, “সংসার খরচ যে কী হারে বেড়েছে তা সবথেকে ভাল জানি আমরা। চাঁদা চাইতে বেরিয়েও সেই হিসাবই কষতে হচ্ছে। আমাদের এ বারের বাজেট ২৫ হাজার টাকা। বেশিরভাগটাই সংগৃহীত হয় এলাকাবাসীর চাঁদা থেকে। বাকিটা দেন সদস্যরা।” তবে পুজো নিয়ে কোনও কার্পণ্য করতে চান না কোনও বাসিন্দাই জানালেন লিপিকাদেবী।
২০০৬ সালে এলাকার বেশ কয়েকজন মহিলা মিলে এই পুজো শুরু করেছিলেন। এখন সমিতির সদস্য সংখ্যা ২৫। লিপিকাদেবীরা প্রায় সমস্বরে জানালেন, “সব পুজোই তো ছেলেরা করে। আমরাও দেখিয়ে দিলাম আমরাও পারি। তাছাড়া যখন পুজো শুরু করেছিলাম তখন পাড়ায় অন্য সব পুজোই হত। বাকি ছিলেন শুধু জগদ্ধাত্রী। আমরা সেটাই নিলাম।” নবমীর সারাদিন তিনদিনের পুজো শেষ করতেই অনেক রাত হয়ে যায়। তারপর চলে প্রসাদ বিতরণ। পরের দিন দশমীর পুজো, আরতি আর সন্ধ্যায় সিঁদুর খেলা। তারপর শোভাযাত্রায় দেবী বিসর্জন চূর্ণি নদীতে।
শহরে বেশ কিছু বাড়ির পুজোয় হচ্ছে সাড়ম্বরে। তার মধ্যে পুরনো পুজো যেমন রয়েছে, রয়েছে নতুন পুজোও। মহাপ্রভুপাড়ায় বৈষ্ণববাড়ীতে চলছে প্রস্তুতি। নবমীতে এক দিনের পুজো ঘিরে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। পরিবারের সদস্য সুপ্রকাশ অধিকারি বলেন, “ডাকের সাজের প্রতিমা হয় আমাদের। পুজোর সময়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে আত্মীয়স্বজন বাড়িতে আসেন। পুজোর শেষে সকলের জন্য প্রসাদ বিতরণ করা হয়।” ধুমধাম করে পুজো হয় শহরের পূর্ব পাড়ে অমূল্য প্রামাণিক রোডে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে। পাশাপাশি দে-পরিবারেও পুজোও এলাকার মানুষের কাছে পরিচিত। শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের শীতলাতলায় চক্রবর্তী বাড়িতেও একদিনের পুজো হয়ে আসছে। খিচুড়ি, তরকারী, ভাজা, চাটনী, পায়েস-সহ ছাপ্পান্ন ভোগ দিয়ে পুজো করা হয়। পরিবারের সদস্য বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, “মাত্র চার বছর ধরে আমাদের পুজো হচ্ছে। পুজোর ঠিক আগের দিন মা জগদ্ধাত্রী আমার বৌমাকে স্বপ্ন দেন। পরদিন তড়িঘড়ি পুজোর আয়োজন করা হয়। সেই থেকে পুজো হয়ে আসছে।”
এছাড়াও, চাকদহ মদনপুর, কল্যাণী, আনন্দনগর, বীরনগর, রাণাঘাট শহরের নাসড়াপাড়া, কামারপারা, ঘটকপাড়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় পুজো হচ্ছে। বেশিরভাগ জায়গায় পুজো একদিনে হলেও শিমুরালি টাইগার অ্যাসোসিয়েশনের পুজো হয় চার দিনে।
অন্যদিকে একদিন বা চার দিনের নয়। বেলডাঙায় জগদ্ধাত্রী পুজো টানা ছ’দিনের। বুধবার থেকে শুরু হয়েছে সেই উৎসব। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের উদ্যোগে এই পুজোয় যোগ দেন দেশের নানা প্রান্তের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। আসেন বিদেশি ভক্তরাও। শুধু পুজো নয়। এই ছয়দিনে থাকে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ বছর ৩১ তম বর্ষে পদার্পণ করল এই পুজো। বুধবার ষষ্ঠীতে চণ্ডীপাঠ ও বিশেষ পুজারতির মধ্য দিয়ে প্রতিমার আবরণ উন্মোচন হয়। বৃহস্পতিবার সপ্তমী তিথিতে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা এলাকা পরিক্রমা করে। রণ-পা সহযোগে রাইবেশে, মূকাভিনয়, আদিবাসী নৃত্য, নানান বাদ্যযন্ত্র সহযোগে নগর কীর্তন সবই ছিল। সন্ধ্যায় স্থানীয় স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা অংশ নেয় এক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায়। অষ্ঠমী, নবমীর পুজো উপলক্ষে হাজার হাজার মানুষের ভিড় হবে। সেই অনুযায়ী তৈরি হয়েছে কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ প্রশাসন। নিরাপত্তা জোরদার করতে বসান হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। পুজো উপলক্ষে গ্রামীণ মেলা বসেছে ইতিমধ্যেই। দশমীর রাতে বিসর্জনের পর হবে যাত্রানুষ্ঠান। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের অধ্যক্ষ স্বামী প্রদীপ্তানন্দজী বলেন, “উৎসব শান্তিতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হোক, সেই চেষ্টাই করছি। মানুষের উৎসাহে ও আনন্দে সফল হবে দেবী আরাধনা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy