Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নিখোঁজ ছাত্রীর দেহ ভাগীরথীতে

স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে তিন যুবক অপহরণ করেছিল নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে। বাড়ির লোকেরা ধরে নিয়েছিলেন প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়েছে মেয়ে। তাই থানায় শুধু নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন তাঁরা। ছ’দিন পরে মঙ্গলবার গভীর রাতে ভাগীরথী নদী থেকে ওই ছাত্রীর বিবস্ত্র দেহ মেলার পর অবশ্য ভুল ভেঙেছে বাড়ির লোকের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৪ ০০:৩০
Share: Save:

স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে তিন যুবক অপহরণ করেছিল নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে। বাড়ির লোকেরা ধরে নিয়েছিলেন প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়েছে মেয়ে। তাই থানায় শুধু নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন তাঁরা। ছ’দিন পরে মঙ্গলবার গভীর রাতে ভাগীরথী নদী থেকে ওই ছাত্রীর বিবস্ত্র দেহ মেলার পর অবশ্য ভুল ভেঙেছে বাড়ির লোকের। হাসনারা খাতুন (১৬) নামে মুর্শিদাবাদের লালগোলার আই সি আর হাইমাদ্রাসার ওই ছাত্রীর গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস দেওয়া ছিল। বাড়ির লোকজনদের দাবি, ধর্ষণ করার পর শ্বাসরোধ করে ভাগীরথীর জলে দেহটি ফেলে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা।

মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “মৃতদেহের ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর ধর্ষণের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের হদিশ পেতে তদন্ত শুরু হয়েছে।” পুলিশ সুপার নিজেই তদন্ত করতে এ দিন লালগোলা গিয়েছেন। কিশোরীর সঙ্গে থাকা সাইকেল, বই ও ব্যাগের হদিশ মেলেনি। মৃতার পরিবারের দাবি, সোনার দুল খুলে নেওয়া হয়েছে। দেহে ধারালো অস্ত্রের ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। পুলিশ সুপার অবশ্য বলেন, “মাছে খাওয়ায় ওই ক্ষত হয়েছে।”

মৃত ছাত্রীর বাড়ি স্কুল থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে জনার্দনপুর গ্রামে। গত ২৬ জুন স্কুল ছুটি হলে বিকাল ৪টে নাগাদ এক সহপাঠিনীর সঙ্গে সে বাড়ির পথে রওনা দেয়। তার পরণে ছিল স্কুলের সালোয়ার-কামিজ। স্কুল থেকে বাড়ি পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়কপথের মধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার পথ গিয়েছে ধানপাটের খেতের মধ্য দিয়ে। ওই এক কিলোমিটার পথের দু’পাশে রয়েছে বনসৃজন প্রকল্পে কয়েক দশক আগে লাগানো শিশুগাছের বাগান। তার আধ কিলোমিটার দূর দিয়ে বয়ে গিয়েছে ভাগীরথী নদী।

হাসনারা ও তার বন্ধু দু’টি সাইকেলে বাড়ি ফিরছিল। শিশু বাগানের কাছে পৌঁছতেই হাসনারার সাইকেল আটকে অন্য ছাত্রীকে দ্রুত বাড়ি চলে যেতে বলে তিন যুবক। সে দ্রুত সাইকেল চালিয়ে বাড়ি চলে যায়। এরপর থেকে আর হাসনারার খোঁজ ছিল না। তার দাদা ইব্রাহিম শেখ বলেন, “বোন বাড়িতে না ফেরায় আমরা খোঁজাখুঁজি শুরু করি। পড়শি ওই সহপাঠিনী তখন আমাদের কিছু বলেনি।” পরদিন থানায় যাওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে প্রতিবেশী ওই কিশোরীর কাছ থেকে ঘটনাটি জানতে পারেন হাসনারার বাড়ির লোকজন। কিন্তু তারপরেও থানায় গিয়ে নিখোঁজ ডায়েরি করেন তাঁরা। অপহরণের অভিযোগ করা হল না কেন?

ইব্রাহিম বলেন, “প্রেমের সর্ম্পকের জেরে বোনকে কেউ নিয়ে গিয়েছে বলে ভেবেছিলাম। ওই সম্ভাবনার কারণে আমরা পুলিশের কাছে অপহরণের অভিযোগ করিনি।”

মঙ্গলবার গভীর রাতে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১৩ কিলেমিটার দূরে শীতেশনগর গ্রাম লাগোয়া ভাগীরথীর পাড়ে ওই কিশোরীর বিবস্ত্র দেহ উদ্ধার করে অবশ্য পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত শুরু করেছে। অপহরণকারীদের চিহ্নিত করতে ওই সহপাঠিনী ও তাঁর মাকে থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

উল্লেখ্য, মেয়ে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়েছেএই একই ভুল ধারণায় ছিলেন বহরমপুরের নিহত তরুণী সুপর্ণা গঙ্গোপাধ্যায়ের মা সুদেবীদেবীও। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সুপর্ণা নিখোঁজ ছিল। তাঁর মা ভেবেছিলেন, মেয়ে হয়তো পছন্দের কারও সঙ্গে পালিয়েছে। লোক জানাজানির ভয়ে পাড়ায় এই নিয়ে কাউকে কিছু বলেননি তিনি। পুলিশেও অভিযোগ করেননি। মঙ্গলবার সকালে বহরমপুর শহরের ইন্দ্রপ্রস্থ এলাকার ফুলকুমারীর মাঠ থেকে সুপর্ণার দেহ উদ্ধার হয়। জানা যায়, অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্ক আছে সন্দেহে গত বৃহস্পতিবার রাতেই তাঁকে ছুরি মেরে, জলে ডুবিয়ে খুন করেছিল প্রেমিক সুরজিত্‌ মণ্ডল। এরপর বাড়ির পিছনের জমিতে পুঁতে রেখেছিল সুপর্ণার দেহ। মঙ্গলবারই পুলিশ গ্রেফতার করেছিল সুরজিত্‌ ও তার বন্ধু দেবজ্যোতি সরকারকে। ধৃত দু’জনকে বুধবার আদালতে তোলা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, খুনে অভিযুক্ত সুরজিত্‌ মণ্ডলের চার দিনের পুলিশ হেফাজত হয়েছে আর দেবজ্যোতির ১৪ দিনের জেল হেফাজত হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE