পলিটেকনিক কলেজের এক ছাত্রের দেহ উদ্ধার হল রেললাইনের ধারে।
মৃতের নাম তাপস মেইকাপ (২৩)। রবিবার সকালে বহরমপুরের বিষ্ণুপুর কালীবাড়ির কাছে লালগোলা-শিয়ালদহ রেললাইনের ধারে ওই ছাত্রের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে বহরমপুর জিআরপি থানার পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
বহরমপুরের সরকারি পলিটেকনিক কলেজের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তাপসের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ে। বহরমপুর জিআরপি থানার ওসি সমীর ঘোষ বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, মানসিক অবসাদ থেকে ওই ছাত্র ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। তবে, দুর্ঘটনাও হতে পারে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে।”
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দু’মাস ধরে তাপস জন্ডিসে ভুগছিলেন। অসুস্থতা নিয়েই তৃতীয় তথা শেষ বর্ষের ষষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষা দেন তিনি। শনিবার ওই পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুপ্রিয়গোপাল বিট বলেন, “তাপস দরিদ্র পরিবারের ছেলে। তবে পড়াশোনায় ভাল ছিল। অসুস্থতা থেকে সম্প্রতি ও মানসিক অবসাদে ভুগছিল বলে শুনেছি।”
পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র তাপস পড়াশোনায় বরাবরই ভাল ছিলেন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ৮০ শতাংশের উপরে নম্বর ছিল তাঁর। বহরমপুরে পলিটেকনিক কলেজের কাছেই বানজেটিয়া এলাকায় মেস বাড়ি ভাড়া করে তাপস-সহ ন’জন থাকতেন। তার মধ্যে পাঁচ জন তৃতীয় বর্ষের, বাকিরা দ্বিতীয় বর্ষের। শনিবার পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পরে তৃতীয় বর্ষের তিন জন বাড়ি চলে যান। তাপসের রবিবার সকালে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। তাপসের ছোট ভাই সন্তু বাবা হৃদেরাম মেইকাপের সঙ্গে হলদিয়ার একটি হোটেলে রান্নার কাজ করলেও গত সাত দিন ধরে বহরমপুরের মেসবাড়িতে দাদার সঙ্গে থাকছিল। সন্তু বলে, “অসুস্থ শরীরে ব্যাগপত্র-বিছানা বয়ে নিয়ে যেতে দাদার অসুবিধা হবে বলে আমি সঙ্গে আসি।” রেল পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পেরেছেকী ভাবে বহরমপুর থেকে হলদিয়া যেতে হবে, শনিবার রাতে মানচিত্র নিয়ে তা ভাইকে বুঝিয়েছিলেন তাপস। সন্তুর কথায়, “রবিবার সকালে খাগড়াঘাট স্টেশন থেকে ট্রেন ধরতে হবে বলে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ি। কিন্তু ঘুম আসছে না বলে দাদা উঠে যায়। সকালে ট্রেন ধরার তাড়া থাকায় এরপরে আমি ঘুমিয়ে পড়ি।”
সকালে তাপসকে মেসে দেখতে না পেয়ে মোবাইলে ফোন করেন মেসের অন্য এক আবাসিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবদুল কাদির আনসারি। তিনি বলেন, “দু’বারই ফোন বেজে যায়। কেউ তোলেনি। তৃতীয় বার এক জন ফোন তুলে জানায় রেললাইনের ধারে একটা মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাপসদার দেহ পড়ে থাকতে দেখি।”
এ দিন ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে হলদিয়া থেকে বাবা হৃদেরাম মেইকাপ বহরমপুরে আসেন। ময়না-তদন্তের পরে ছেলের মৃতদেহ নিয়ে এ দিনই ফিরে যান তিনি। হৃদেরাম বলেন, “ছেলের পড়াশোনার জন্য অনেক কষ্ট সইতে হয়েছে। ওকে ঘিরে কত স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিছুই বুঝল না। আমাদের ছেড়ে স্বার্থপরের মতো চলে গেল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy