চুরাশি নম্বর, নবদ্বীপ বিধানসভা কেন্দ্রের কয়েক হাজার ভোটারকে বৈধতার প্রশ্নে শো-কজ করলেন বিডিও। গত ২৫ বছরে এলাকা ছাড়েননি এমন বৃদ্ধাকেও সশরীরে প্রশাসনের দফতরে গিয়ে ‘উপস্থিতি’ দিয়ে আসতে বলা হয়েছে সেই নোটিসে। বিজেপি ও সিপিএমের অভিযোগ, বেছে-বেছে তাদের ভোটারদেরই অকারণ হেনস্থা করতে শো-কজের নোটিস পাঠাচ্ছে শাসকদল তৃণমূলের মদতপুষ্ট প্রশাসন। সোমবার সিপিএম এই নিয়ে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিল বিডিও-র কাছে। মঙ্গলবার বিজেপিও একই মর্মে ক্ষোভ জানিয়েছে ব্লক প্রশাসনের কাছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকদিন ধরেই নবদ্বীপ বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন ভোটারের বাড়িতে ‘অফিস অফ দ্য ব্লক ডেভলপমেন্ট অফিসার এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারের’ পক্ষ থেকে ০৭-১১-১৪ তারিখে ইস্যু করা একটি শো-কজ নোটিস পাঠানো হচ্ছে। ওই নোটিসের শুরুতেই নবদ্বীপের বিডিও বলেছেন ‘তদন্ত’ করে জানা গিয়েছে ভোটার তালিকার ঠিকানায় ওই ভোটার সাধারণ ভাবে বসবাস করেন না। তাই সংশ্লিষ্ট ভোটারের নাম ওই এলাকার ভোটার হিসেবে তালিকায় থাকতে পারে না। শেষে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তিনি যেন নোটিস পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে সশরীরে নিম্ন স্বাক্ষরকারীর দফতরে গিয়ে ‘কারণ দর্শান’ কেন তাঁর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে না। অন্যথায় তাঁর বিরুদ্ধে ‘সুয়োমোটো’ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নীচে নবদ্বীপের বিডিও-র স্বাক্ষরের পাশে রবার স্ট্যাম্পে শো-কজের শুনানির দিন হিসেবে ২১ এবং ২২ নভেম্বর ছাপানো হয়েছে। প্রচুর সংখ্যায় বিলি হওয়া এই নোটিসকে ঘিরে তুমুল হইচই পড়ে গিয়েছে নবদ্বীপ জুড়ে। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন ভোটারদের কাছে ওই নোটিস পাঠানো হয়েছে, যারা বছরের পর বছর ধরে সংশ্লিষ্ট এলাকাতেই বসবাস করছেন এবং ভোট দিয়ে আসছেন। যেমন, নবদ্বীপের ওলাদেবী তলার বাসিন্দা ৮২ বছরের চপলা সাহা। তিনি বলেন, “গত ২৫ বছরে সাত দিনের জন্যও আমি বাড়ি থেকে কোথাও যাইনি। অথচ আমি নাকি এই ঠিকানায় থাকি না।” গত দু’মাস ধরে বিছানায় শয্যাশায়ী বৃদ্ধা চপলাদেবী স্পষ্ট জানান, এর জন্য গঙ্গা পার হয়ে দশ কিলোমিটার দূরের বিডিও অফিসে তিনি হাজিরা দিতে যাবেন না।
বিডিও-র নোটিস অনুযায়ী, সুদীর্ঘ কাল ধরে বুড়োশিবতলা রোডের বাসিন্দা স্বপন কুণ্ডু এবং তাঁর স্ত্রী-ও নাকি সেখানে থাকেন না। একই ভাবে রানীরঘাট রোডের বাসিন্দা মিনতি দেবনাথ এবং তাঁর ছেলে সঞ্জীব দেবনাথ বা আড়তঘাটের বাসিন্দা সরস্বতী দাস এবং তাঁর মেয়ে সোমা দাসকে শো-কজ করা হয়েছে। ওই এলাকার কাউন্সিলর মিহিরকান্তি পাল বলেন, “মিনতিদেবী বা সরস্বতীদেবীরা কেউ তাদের ঠিকানা বদল করেননি। তবুও কেন বিডিও এমন গণ শো-কজ করলেন তা বুঝতে পারছি না। অথচ প্রকৃতই যাদের নাম বাদ দেওয়া দরকার, সেগুলো কখনওই সংশোধন হয় না।”
ইতিমধ্যে ওই শো-কজ নোটিসের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিডিও-কে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন চপলাদেবীর আইন পড়ুয়া নাতনি সায়নী সাহা। আইনের পঞ্চম তথা শেষ বর্ষের ছাত্রী সায়নী বলেন, “ওই শো-কজ নোটিসেই বলা হয়েছে সেটি ১৯৫০ সালের জন প্রতিনিধিত্ব আইনের ২২ ধারা অনুযায়ী পাঠানো হয়েছে। এক্ষেত্রে নবদ্বীপের বিডিও সংশ্লিষ্ট ধারাটি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। কোনও ভোটারকে এভাবে শোকজ করার আইনি ক্ষমতা বিডিও-র নেই।” যে এনকোয়ারি রিপোর্টের ভিত্তিতে বিডিও শো-কজ করেছেন সায়নী তার সার্টিফায়েড কপি চেয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “বিডিও সাত দিনের মধ্যে লিখিত জবাব দিয়ে দুঃখপ্রকাশ না করলে বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের গোচরে আনা হবে।”
বিডিও বিক্রম চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বিষয়টিকে বিএলও বা বুথ স্তরের আধিকারিকদের ভুলের জন্য হয়েছে বলে হাল্কা করে দিতে চেয়েছেন। বিক্রমবাবু বলেন, “আসলে ওই চিঠি সকলকে দেওয়ার কথা নয়। যাঁদের বাড়িতে পাবে না, তাঁদেরই দেওয়ার কথা। বিএলওদের ভুল বোঝাবুঝির কারণেই এমনটা ঘটে গিয়েছে। যে সব ক্ষেত্রে ভুল হয়েছে, সেখানে ওই নোটিস ফিরিয়ে নিতে বিএলওদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
তবে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা বিষয়টিকে সহজে ছাড়তে চাইছেন না। তাঁরা এর মধ্যে রাজনৈতিক চক্রান্ত আছে বলে মনে করছেন। নবদ্বীপের বিজেপি নেতা তথা নদিয়া জেলার সহ-সভাপতি জীবন সেন বলেন, “তৃণমূল গোটা রাজ্যের সরকারি অফিসারদের দলীয় স্বার্থে কাজ করতে বাধ্য করছেন। সামনেই নবদ্বীপে পুরভোট। মানুষ আর তাঁদের চাইছে না সেটা বুঝতে পেরে তণমূল এই ভাবে পিছনের দরজা দিয়ে ভোটে জিততে চাইছে।” সিপিএমের নবদ্বীপ জোনাল কমিটির সম্পাদক কল্যাণ গুপ্ত বলেন, “জনভিত্তি নষ্ট হলে এভাবেই অন্ধকার পথে ভোটে জেতার পথ খুজতে হয়। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বিডিওকে দিয়ে কয়েক হাজার ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার ছক কষেছে তৃণমূল। আমরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy